কওমি আলেমরা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আবারও ক্ষমতায় দেখতে চান । আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারের উন্নয়নেরও ভূয়সী প্রশংসা করে কওমি আলেমরা বলেন, শেখ হাসিনা পুনরায় সরকারে এলে ইসলামের জন্য কাজ করবেন।
রবিবার (৪ নভেম্বর) রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কওমি সনদের স্বীকৃতির জন্য শোকরানা মাহফিলে প্রধানমন্ত্রীকে দেওয়া সংবর্ধনায় কওমি আলেমদের বক্তব্যে এসব কথা উঠে আসে। এ শোকরানা মাহফিলে কওমি সনদের স্বীকৃতি দেওয়ায় শেখ হাসিনাকে ‘কওমি জননী’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়।
আল-হাইয়াতুল উলয়া লিল জামিয়াতিল কওমিয়া বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ও হেফাজতে ইসলামের আমির শাহ আহমদ শফীর নেতৃত্বে এই শোকরানা মাহফিলে সারাদেশের কওমি আলেমরা অংশ নেন। কওমি মাদরাসার সম্মিলিত এই শিক্ষাবোর্ডের কো-চেয়ারম্যান মাওলানা আশরাফ আলী বলেন, ‘জনদরদী নেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, যার মাধ্যমে আমরা এ নেয়ামত (স্বীকৃতি) পেলাম। নজিরবিহীন এ নেয়ামত পেয়েছি। ব্রিটিশ শাসনামলে পাইনি, পাকিস্তান আমলে পাইনি, বাংলাদেশে দীর্ঘদিনে হয়নি। এ জাতিকে, বাংলাদেশকে নজিরবিহীন উপহার দিয়েছেন তিনি। তাকে (শেখ হাসিনা) দীর্ঘায়ু দান করে আল্লাহ বাংলাদেশের খেদমত করার তৌফিক দান করুন।’
জাতীয় দ্বীনি মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ বলেন, ‘আজ কওমি মাদ্রাসার শুধু নয়, সারাদেশের জন্য একটি ঐতিহাসিক দিন। প্রধানমন্ত্রীর মাধ্যমে ইসলামের অনেক কাজ হয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়েছে। এ দেশকে মহাকাশে নিয়ে গেছেন তিনি। দেশের এত উন্নয়ন করেছেন যে পাকিস্তানের জনগণও আমাদের মতো হতে চায়।’
অনুষ্ঠানে মসজিদের ইমাম-মোয়াজ্জিনদের ভাতা প্রদানের দাবি করেন ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ। তিনি বলেন, ‘আপনি এমন ব্যক্তি যা ওয়াদা করেন, সেই ওয়াদা রক্ষা করেন। আমরা নির্দ্বিধায় বিশ্বাস করতে পারি সামনেও (শেখ হাসিনা) আপনি (ক্ষমতায়) এলে ওয়াদা পূরণ করবেন। আপনি আসবেন ইনশাল্লাহ। আপনাকে আমরা আশা করতেই পারি। আল্লাহ আপনাকে কবুল করুন।’ বক্তৃতায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রসঙ্গেও স্মৃতিচারণ করেন ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ।
গওহরডাঙ্গা কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ও গোপালগঞ্জের গওহরডাঙ্গা মাদ্রাসার মহাপরিচালক মুফতি রুহুল আমীন বলেন, ‘আমরা লাল-সবুজের পতাকা পেয়েছিলাম যার অবদানে, তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি শুধু আমাদের লাল-সবুজের পতাকাই দেননি, ইসলামের জন্য অবদান রেখেছেন। তিনি ইসলামি ফাউন্ডেশন করেছেন, তাবলিগ জামাতকে টঙ্গীতে ও কাকরাইলে জায়গা দিয়েছেন। তার ধারাবাহিকতায় বঙ্গবন্ধুর কলিজার টুকরো শেখ হাসিনা টঙ্গীর যে বাকি কাজ করেছেন, সে কাজ সর্ম্পূণ করবেন। বঙ্গবন্ধুকন্যা, আপনি স্বীকৃতি দিয়েছেন, সবকিছু উপেক্ষা করে।’
এ সময় শেখ হাসিনাকে ‘কওমি জননী’ উপাধি দেন মুফতি রুহুল আমীন। তিনি বলেন, ‘আমরা আপনার কাছে দাবি রাখবো আপনার পরবর্তী জেনারেশন আমাদের সজীব ওয়াজেদ জয় আংকেলকেও ওলামা কেরামদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট করে দিয়ে যাবেন। আজকে তার (জয়) অবদান, দেশে ডিজিটাল বাংলাদেশ। আমরা কওমি মাদ্রসারা সামান্য তথ্যও ঘরে বসে মেসেজের মাধ্যমে পেয়ে যাই।’ স্বীকৃতির জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে রুহুল আমীন বলেন, ‘আমাদের কিছু দাবি এখনও রয়ে গেছে। আমরা আল্লাহর কাছে দোয়া করবো, এ সরকারের ধারাবাহিকতা থাকলে সব দাবি পূরণ করবেন।’
পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বক্তব্যে দেশের আলেম সমাজের কাছে দোয়া চেয়ে বলেন, ‘আপনাদের দোয়া চাই, সামনে নির্বাচন আছে। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন, নিশ্চয়ই তিনি আবার বাংলাদেশের জনগণের খেদমত করার জন্য সুযোগ আমাকে দেবেন। আর যদি আল্লাহ না চান, আমাকে দেবেন না। আমার কোনো আফসোস থাকবে না। কারণ, আমি সবকিছু আল্লাহর ওপর ছেড়ে দিয়েছি।’
প্রসঙ্গত, গত ১৮ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদে ‘কওমি মাদ্রাসাসমূহের দাওরায়ে হাদিসের (তাকমীল) সনদকে মাস্টার্স ডিগ্রি (ইসলামিক স্টাডিজ ও আরবি) সমমান প্রদান আইন, ২০১৮’ পাস করা হয়। এর মাধ্যমে কওমি মাদ্রাসার সর্বোচ্চ ডিগ্রিকে মাস্টার্স ডিগ্রির সমমান দেওয়ার দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সংবর্ধনা দিতে এ শোকরানা মাহফিলের আয়োজন করা হয়।