ছয় ঋতুর সুজলা সুফলা সবুজে ঘেরা শ্যামল দেশ বাংলাদেশ। শরৎ এর আকাশে রাতের শেষে ঘন কুয়াশায় যেন বলে দিচ্ছে শীতের আগমনী বার্তা। সূর্যাস্ত যাওয়ার আগে হালকা মৃদু বাতাসে খেজুর গাছে চরে গাছিরা রস সংগ্রহের প্রস্তুতির জন্য গাছ পরিস্কারের কাজ শুরু করেছে। সপ্তাহ খানিকের মধ্যেই গাছ থেকে রস সংগ্রহের পর্ব শুরু হবে। নাটোর জেলায় প্রান্তিক জনপদের গ্রামে গ্রামে সকালের শিশিরের সাথে শুরু হয়েছে মৃদু শীতের আমেজ।
গ্রাম বাংলার খেজুর গাছ থেকে আর মাত্র কয়েক দিন পর রস সংগ্রহ করে রস থেকে লালি ও গুড় তৈরির পর্ব শুরু হয়ে চলবে প্রায় মাঘ মাস পর্যন্ত। খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহের প্রস্তুতি নাটোর জেলার প্রতিটি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে এ দৃশ্য চোখে পড়ছে। খেজুর রস ও গুড়ের জন্য নাটোর জেলার এক সময় খ্যাতি ছিল। সময়ের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছে গ্রাম বাংলার প্রাচীনতম ঐতিহ্যবাহী খেজুরের রস গুড়। কিছুদিন আগেও বিভিন্ন এলাকার অধিকাংশ বাড়িতে, ক্ষেতের আইলে, ঝোপ-ঝারের পাশে ও রাস্তার দুই ধার দিয়ে ছিল অসংখ্য খেজুর গাছ। কোন পরিচর্চা ছাড়াই অনেকটা প্রাকৃতিক ভাবে বেড়ে উঠতো এই সব খেজুর গাছ। প্রতিটি পরিবারের চাহিদা পূরন করে অতিরিক্ত রস দিয়ে তৈরি করা হতো সুস্বাদু খেজুরের গুড়। গ্রামীণ জনপদে সাধারণ মানুষের সচেতনতার অভাবে পুকুর পাড়ে রাস্তার ধারে পরিবেশ বান্ধব খেজুর গাছ এখন আর তেমন চোখে পড়ে না। ইট ভাটার রাহু গ্রাসে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার বেশি হওয়ার কারণে যে পরিমাণ গাছ চোখে পড়ে তা নির্বিচারে নিধন করায় দিনদিন খেজুর গাছ কমেই যাচ্ছে।
নাটোর জেলার গাছিয়া জানান, আমরা পেশাগত কারণে প্রায় প্রতি বছরেই নাটোর জেলার এই এলাকার খেজুর গাছ মালিকদের কাছ থেকে ৪ মাসের জন্য গাছ ভেদে ৫ থেকে ৭ কেজি করে খেজুরের গুড় দিয়ে গাছ গুলো আমরা নেই। চাহিদা মত খেজুর গাছ না পাওয়ার কারণে রস কম হওয়ায় আশানুরুপ গুড় তৈরি করতে পাড়ি না। যার কারণে তেমন পোষায় না। তারপরও এবছর প্রায় ২ শ’ টির বেশি খেজুর গাছের মালিকদের সাথে চুক্তি করেছি। বাপ-দাদার পেশা ছেড়ে না দিয়ে জীবন-জীবিকার জন্য এই পেশায় ধরে রেখেছি। তবে যে ভাবে খেজুর গাছ কাটা হচ্ছে অল্প দিনের মধ্যেই এই এলাকায় আর আমাদের ব্যবসা হবে না। বর্তমান বাজারে আখের গুড় চিনি যে মূল্যে বেচাকেনা হচ্ছে তার চেয়ে মানসম্পূর্ন খেজুরের গুড়ের দাম এবছর কিছুটা বেশি হবে এমনটায় আসা করছেন গাছিরা। শীত একটু বেশি পড়তে শুরু করলে আত্মীয়-স্বজন আনা-নেওয়া ও পিঠা-পুলির উৎসবে খেজুর গুড়ের দাম ও চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় সে সময় আমাদের লাভ একটু বেশি হয়। যে পরিমাণে শ্রম দিতে হয় সে পরিমাণে আমরা লাভ করতে পারি না। তবুও পেশাগত কারণে চালিয়ে যাচ্ছি এই ব্যবসা।
