কলাপাড়া (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ’শুধু মানুষের ঘরে বিদ্যুৎ যাবে না, সেই সাথে সাথে এখানে শিল্প কল-কারখানাও গড়ে উঠবে। কৃষিকে যান্ত্রিকীকরণ করব, মানুষের ব্যবসা বাণিজ্যের সুযোগ সৃষ্টি হবে। এ অঞ্চলের মানুষ আর কখনও কষ্ট পাবে না। এই দক্ষিণাঞ্চলে আরও একটি পরমাণু বিদ্যুকেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনাও আমাদের রয়েছে।’
তিনি বলেন, ’পায়রাবন্দর ভবিষ্যতে গভীর সমুদ্রবন্দর হিসেবে উন্নীত হবে। আমরা এলএনজি টার্মিনাল করে দেব। গত ১০ বছরে সমগ্র বাংলাদেশে উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে। প্রত্যেকটি এলাকায় সাধারণ মানুষ যাতে ভালোভাবে থাকতে পারে তার ব্যবস্থা করতে আমরা সক্ষম হয়েছি।’
শনিবার (২৭ অক্টোবর) দুপুরে পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার পায়রা তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের উন্নয়ন কর্মসূচি ও ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য নির্মিত ‘স্বপ্নের ঠিকানা’ আবাসন পল্লী পরিদর্শন শেষে নতুন ৫টি প্রকল্পের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন ও ১৬টি উন্নয়ন কার্যক্রমের ফলক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ’স্বপ্নের ঠিকানা’ নামে যে বাড়িঘর তৈরি করে দিয়েছি, আমি আশা করি ক্ষতিগ্রস্থরা অত্যন্ত সুন্দরভাবে সেখানে বসবাস করবেন এবং যে বিদ্যুৎকেন্দ্র হচ্ছে, তা সম্পন্ন হলে তাদের (ক্ষতিগ্রস্তদের) কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে, তাদের ছেলেমেয়েদেরও কাজের ব্যবস্থা হবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ’এখানকার বাড়িগুলো খুব সুন্দর হয়েছে। পরিদর্শনকালে আমি বাড়ির মালিকদের সাথে কথা বলেছি, তারা খুব খুশি। সবকিছুই আছে এখানে তারপরও এখানে আমি একটি মাল্টিপারপাস সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণ করার নির্দেশ দিয়েছি। পায়রাবন্দরেও একটি সাইক্লোন শেল্টার তৈরি করে দিতে বলেছি। কারণ প্রকৃতির খেলা বোঝা ভার। যেকোন সময় ঘূর্ণিঝড় জলোচ্ছ্বাস হতে পারে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ’কলাপাড়ায় ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণে কাজ চলছে, এটাকে ভবিষ্যতে আরো ১৩২০ মেগাওয়াটে উন্নীত করা হবে। এ অঞ্চলে যাতে শিল্প কল-কারখানা গড়ে উঠতে পারে সে ব্যবস্থা আমরা করবো। এ অঞ্চলের উন্নয়ন করতে গিয়ে, যে মানুষগুলো এখানে বসবাস করতো, তারা যাতে গৃহহারা না হয়ে যায় সেদিকে আমরা সবসময় দৃষ্টি রাখছি।’
শেখ হাসিনা আরও বলেন, ’দক্ষিণের এই অঞ্চলটা সবসময় অবহেলিত ছিলো। তাই এ অঞ্চলকে ঘিরে আমরা নানান পরিকল্পনা নিয়েছি। আমাদের বিশাল সমুদ্রসীমা রয়েছে। ব্লু -ইকোনোমি পরিকল্পনা আমরা ইতিমধ্যে ঘোষণা দিয়েছি। যার মাধ্যমে এই সমুদ্র সম্পদ আমাদের আর্থসামাজিক উন্নয়নে যাতে কাজে লাগে সে ব্যবস্থা নেব।’
তিনি বলেন, নদীগুলো ড্রেজিং করার পরিকল্পনা আমরা হাতে নিয়েছি। ড্রেজিং করে আমরা এখান থেকে যেন উত্তরবঙ্গ পর্যন্ত নৌপথ সচল হয় তার ব্যবস্থা করছি। এর সাথে আমরা ডেল্টা প্লান ২১০০ প্রণয়ন করেছি। যা আমরা বাস্তবায়ন করব। ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত। ২০২০ সালের ১৭ মার্চ জাতির পিতার জন্ম শতবার্ষিকী পালন করব এবং ২০২১ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করব। ২০২০-২০২১ সালকে আমরা মুজিববর্ষ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছি।’
বক্তব্যের শেষ দিকে প্রধানমন্ত্রী হাসিমুখে নৌকার জন্য ভোট চেয়ে বলেন, সবার কাছে নৌকা মার্কায় ভোট চাই, নৌকা মার্কায় ভোট চাই।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সডক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, নৌ-মন্ত্রী শাজাহান খান, শিল্প মন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বানিজ্য মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, জাতীয় সংসদের চীফ হুইপ আ.স.ম ফিরোজ এমপি, স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যান আবুল হাসনাত অবদুল্লাহ এমপি, পটুয়াখালী-৩ আসনের
সংসদ সদস্য আখম জাজাঙ্গীর হোসেন, স্থানীয় সাংসদ মো: মাহবুবুর রহমান সহ সরকারের বিভিন্ন দফতরের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তারা।