দর্পণ ডেস্ক : অত্যাধুনিক সংস্কৃতিতে মানুষ হওয়া কানাডিয়ান তরুণী ক্যাথরিন অলেটি নিজের দেশ ছেড়ে যোগগুরুকে জীবনসঙ্গী করার জন্য সাত সমুদ্র ১৩ নদীর পেরিয়ে চলে এলেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কালনার যুবকের বউ হতে।
ফটনার শুরু যোগাসন শেখাতে গিয়ে। দুজনের মধ্যে সৃষ্টি হয় গভীর প্রেমের । তারপরই ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কালনার যুবকের বউ হতে সাত সমুদ্র ১৩ নদীর পেরিয়ে চলে এলেন কনে। ষষ্ঠীর দিন দুগ্গা দুগ্গা করে মালবদলও হয়ে গেল। এখন সুখেই ঘরকন্না করছেন কানাডিয়ান বউ। গ্রাম বাংলার আদব কায়দায় মানিয়ে নিতে অসুবিধা হলেও চেষ্টা করে চলেছেন ওই কানাডিয়ান ধনীর দুলালি।

বিদেশিনী বউ দেখতে কালনার আশ্রমপাড়ার বাসিন্দা টিঙ্কু রায়ের বাড়িতে ভিড় উপচে পড়েছে। সকাল বিকাল শুধু লোকজনের লাইন রায়বাড়ির সামনে।

সূত্র জানায়, টিঙ্কুবাবুকে ভালবেসে বিয়ে করেছেন কানাডিয়ান তরুণী ক্যাথরিন অলেটি। পাশ্চাত্যের যাবতীয় সুখের উপকরণ ছেড়ে একেবারে সাদামাটা জীবনযাপন করছেন টিঙ্কুর টিনের বাড়িতে। পরনে লাল শাড়ি, হাতে শাখা-পলা, সিঁথিতে সিঁদুর নিয়ে বউটি করে চলছে রান্নাবান্নাও। বাড়ির কাঠের উনুনে বিদেশিনীকে রান্না করতে দেখে উৎসুক বাসিন্দারা ভিড় জমাচ্ছেন অহরহ। তবে কোনো কিছুতেই নতুন বউ ক্যাথরিনের ক্লান্তি নেই। একগাল হেসে সবাইকে অভ্যর্থনা জানাচ্ছেন।

টিঙ্কু যোগাসন শেখান। দেশের বিভিন্ন জায়গাতেই তার যোগাসনের ক্লাস চলে। প্রশিক্ষণও প্রচারের জন্য বেনারসেও যান টিঙ্কু। গতবছরও গিয়েছিলেন। কাশিতে এক ক্লাসে আসেন কানাডিয়ান তরুণী ক্যাথরিন অলেটি। তিনি তখন ভারত ভ্রমণে এসেছিলেন।

কাশিতে টিঙ্কুবাবুর যোগাসনের ক্লাস তার ভাল লেগে যায়। এরপর কাশিতে থাকাকালীন প্রতিদিন সেই ক্লাসে আসতেন। এই সূত্র ধরেই তাদের দুজনের মধ্যে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। একটা সময় ওই যুবক কালনার বাড়িতে ফিরে আসেন। ক্যাথরিন চলে যান কানাডায়। কিন্তু যোগাযোগ থেকেই যায়।

বন্ধুত্ব বদলে যায় প্রেমে। বিয়ের সিদ্ধান্ত নেন তারা। তবে তার আগে ক্যাথরিনের অনুরোধে কানাডা যান টিঙ্কু রায়। তরুণীর বাবা-মায়ের সঙ্গে দেখাও করেন। বিয়ের কথা পাকা হয়ে যায়। এরপর গত ষষ্ঠীর দিন টিঙ্কুবাবুর বাড়িতেই চলে আসেন ওই তরুণী। শুভলগ্নে চার হাত এক হয়ে যায়। বিয়ে করে ভালই আছেন নবদম্পতি।

ইতিমধ্যেই নতুন বউ বাংলা শিখতে শুরু করেছেন। পেশায় স্কুল শিক্ষিকা ক্যাথরিন গ্রাম বাংলার প্রেমে পড়েছেন। গ্রামের মানুষের সরলতা তাকে আকৃষ্ট করেছে। কিন্তু ভাষা না জানায় কথা বলতে পারছেন না। সেই অভাব দূর করতেই শুরু হয়েছে নয়া প্রশিক্ষণ।

গ্রামবাসী বিদেশিনী বউ পেয়ে খুশি প্রতিবেশী অরণ মল্লিক। তিনি জানান, মেয়েটি খুব ভাল। এখানে নতুন বউমার পরিবারের কেউ না থাকায় বিয়ের অনুষ্ঠানে তিনিই কন্যা সম্প্রদান করেছেন। এই ধরনের ঘটনা গ্রাম বাংলায় তো খুব একটা দেখা যায় না। তবে প্রেমের টান বড় গভীর। তাই তারা সুখেই থাকবে, তার আশা।
কানাডিয়ান তরুণীকে বিয়ে করে খুশি টিঙ্কুবাবুও। তিনি বলেন, কীভাবে আমাদের সম্পর্ক তৈরি হয়েছে জানিনা। তবে এই বিয়েতে পরিবারের পাশাপাশি গ্রামের বাসিন্দারাও খুব খুশি।