দর্পণ ডেস্ক : মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার ভুয়া প্রশ্নপত্র তৈরি করে তা ফাঁস করা প্রশ্নপত্র বলে প্রচারণা চালিয়ে বিক্রির অভিযোগে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এরপর জাতীয় সংসদে সদ্য পাস হওয়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে তাদের আসামি করে মামলা হয়েছে। এই আইনে এটিই প্রথম মামলা বলে পুলিশ জানিয়েছে।

বৃহস্পতিবার তাদের দুই দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন ঢাকা মহানগর হাকিম সত্যব্রত শিকদার। পুলিশ তাদের আদালতে পাঠিয়ে পাঁচ দিনের রিমান্ডের আবেদন জানিয়েছিল। গ্রেপ্তারকৃতরা হলো পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়া উপজেলার কাউসার গাজী, চাঁদপুরের মতলব উপজেলার সোহেল মিয়া, মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার তারিকুল ইসলাম শোভন, নওগাঁর পত্নীতলা উপজেলার রুবাইয়াত তানভীর ও টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার মাসুদুর রহমান ইমন।

তাদের বয়স ২০ থেকে ২২ বছরের মধ্যে। তাদের কাছ থেকে পাঁচটি মোবাইল ফোন, দুটি ল্যাপটপ এবং বিকাশের রেজিস্টার খাতা উদ্ধার করা হয়। গত বুধবার রাতে যাত্রাবাড়ী ও বাড্ডা এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। গতকাল তাদের বিরুদ্ধে পল্টন থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়।

গতকাল দুপুরে রাজধানীর মালিবাগে সিআইডি কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, গ্রেপ্তারকৃতরা সংঘবদ্ধ প্রতারকচক্রের সদস্য। শুধু মেডিকেল নয়, শিক্ষা ও চাকরি সংক্রান্ত যেকোনো পরীক্ষার কথিত প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় এ চক্রের সদস্যরা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত থাকেন। এ চক্রের দুজনকে যাত্রাবাড়ী এলাকার কাজলা ও দনিয়া থেকে এবং অপর তিনজনকে বাড্ডার আলিফনগর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। ব্রিফিংয়ে উপস্থিত সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইম ইউনিটের বিশেষ পুলিশ সুপার মোল্লা নজরুল ইসলাম জানান, তারা সংঘবদ্ধ প্রতারকচক্রের সদস্য। প্রশ্ন ফাঁস করতে ব্যর্থ হয়ে নিজেদের মতো করে প্রশ্নপত্র তৈরি করত তারা। এরপর সেসব প্রশ্ন বিভিন্ন ফেইক আইডির মাধ্যমে ফেসবুকে আপলোড করে শতভাগ কমনের নিশ্চয়তা দিয়ে শিক্ষার্থীদের কাছে বিক্রি করত। এ চক্রের মাস্টারমাইন্ড কাউসার গাজী। তাকে প্রথমে গ্রেপ্তার করার পর অন্যদের সন্ধান মেলে।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা মামলার তদন্তের বিষয়ে ব্রিফিংয়ে মোল্যা নজরুল বলেন, ‘এ ধারায় এরই মধ্যে মামলার তদন্ত শুরু হয়েছে। আমরা আশা করছি, প্রতারকচক্রের আরো কিছু সদস্যকে এ মামলায় গ্রেপ্তার করতে পারব। আগামীকালও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা আছে। সেখানেও যদি কোনো চক্র প্রশ্নপত্র ফাঁস করতে চায়, তাদের বিরুদ্ধেও আইনগত কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

গ্রেপ্তারকৃতদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে জানানো হয়, প্রশ্ন ফাঁস করতে ব্যর্থ হয়ে নিজেদের মতো করে প্রশ্নপত্র তৈরি করতেন এই চক্রের সদস্যরা। চক্রের মাস্টারমাইন্ড কাউসার গাজীকে এ কাজে সহযোগিতা করতেন তার বন্ধু সোহেল মিয়া। তিনি অন্যের জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করে ভুয়া বিকাশ অ্যাকাউন্ট খোলার মাধ্যমে টাকা লেনদেন করতেন। ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, এবার তারা প্রশাসনের তৎপরতার কারণে প্রশ্নপত্র ফাঁস করতে পারেননি। তাই ভুয়া প্রশ্নপত্র তৈরি করে ১০টি ফেইক ফেসবুক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে মেডিকেলের প্রশ্ন পাওয়ার প্রচারণা চালান। জিজ্ঞাসাবাদে তারা আরো জানান, বিভিন্ন সাজেশন, বিগত বছরগুলোর প্রশ্নপত্র একত্র করে ভুয়া প্রশ্নপত্র তৈরি করতেন তারা। কাওসার গাজীর দেয়া তথ্যের বরাত দিয়ে ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, তিনি তার ভুয়া ফেসবুক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে বিভিন্ন ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র পাওয়া যায় বলে প্রচার চালাতেন। তার প্রচারে আকৃষ্ট হয়ে ভর্তিচ্ছুরা তার ফেসবুকে যোগাযোগ করত। পরে তিনি আগ্রহীদের সঙ্গে ফেসবুক ম্যাসেঞ্জার, ভাইবার ইমো, হোয়াটসঅ্যাপ ইত্যাদি মাধ্যমে যোগাযোগ করে বিকাশ নম্বরের মাধ্যমে অগ্রিম অর্থ সংগ্রহ করতেন।