দর্পণ ডেস্ক : যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা যাওয়ার পর দুই নভোচারীকে নিয়ে ফিরে এসেছে রাশিয়ার উৎক্ষেপণ করা একটি সয়ুজ রকেট।
আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্রে (আইএসএস) যাওয়ার পথে বৃহস্পতিবার এমন ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে কাজাখাস্তানে অবতরণ করা রকেটটির দুই নভোচারী এখন নিরাপদে আছেন বলে বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়ছে।
রুশ নভোচারী আলেক্সেই ওভচিনিন এবং মার্কিন নভোচারী নিক হেগকে বহনকারী ক্যাপসুলটি কাজাখাস্তানের যে অঞ্চলে অবতরণ করেছে সেখানে তাদের খোঁজে তল্লাশি দল পাঠানো হয়েছে।
বিবিসি বলছে, আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্রে পাঠানোর জন্য দুই নভোচারীকে বহনকারী রকেটটি কাজাখস্তানের বৈকানুর থেকে বৃহস্পতিবার ভোরে রওনা হয়েছিল। এটি ছয় ঘন্টা পর আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্রে পৌঁছানোর কথা ছিল।
তবে মাঝ আকাশেই ত্রুটিতে পড়ে যায় রকেটটি। মহাকাশযানের ভেতর থেকে পাঠানো ভিডিও ফুটেজে দুই মহাকাশচারীকে ওই দুর্ঘটনার সময় রীতিমতো কাঁপতে দেখা গেছে।
সয়ুজ রকেটের ‘বুস্টারে’ কারিগরি ত্রুটি দেখা দেয়ার পর এটিকে ‘ব্যালিস্টিক ডিসেন্ট মডে’ পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনা হয় বলে জানিয়েছে নাসা।
‘ব্যালিস্টিক ডিসেন্ট মড’ মানে হচ্ছে সাধারণত যে কোনাকুনি পথে কোন রকেট পৃথিবীতে ফিরে আসে, তার চেয়ে অনেক খাড়া বা সোজা পথে এটিকে পৃথিবীতে অবতরণ করানো।
বিবিসি জানায়, রুশ নভোচারী আলেক্সেই ওভচিনিন এবং মার্কিন নভোচারী নিক হেগ আগামী ছয় মাস আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্রে থাকবেন বলে কথা ছিল।
রুশ নির্মিত সয়ুজ রকেটের ডিজাইন করা হয়েছে বহু দশক আগে। কিন্তু এটিকে এখনো বিশ্বের সবচেয়ে নিরাপদ রকেটগুলোর একটি বলে মনে করা হয়। এই মূহুর্তে আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্রে যাতায়তের জন্য এই সয়ুজ রকেটই একমাত্র ভরসা।
যে কারিগরি ত্রুটির কারণে এই রকেটটি তার যাত্রা শেষ করতে পারলো না, তাকে মহাকাশ বিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় ‘স্টেজিং।’ উপরে উঠতে থাকা রকেটের যে অংশগুলোর জ্বালানি এর মধ্যে শেষ হয়ে গেছে, সেই খালি অংশগুলোকে খসিয়ে দেয়ার নাম স্টেজিং।
বলা হচ্ছে, এই স্টেজিং এর সময় রকেটে থাকা দুই নভোচারী আঁচ করতে পেরেছিলেন যে কোন একটা গোলমাল হয়েছে কারণ তারা ওজনহীনতায় ভুগছিলেন। ওই সময় তাদের ওজনহীন থাকার কথা নয়, পরিবর্তে তারা বরং তাদের বসে থাকা আসনের দিকে একটা প্রবল টান অনুভব করার কথা।
দুই নভোচারীর পৃথিবীতে ফিরে আসার যাত্রা খুব স্বস্তিকর ছিল না বলেই মনে করা হচ্ছে। যেরকম খাড়া পথে তারা ফিরে আসেন, তাতে প্রচণ্ড মাধ্যাকর্ষণ শক্তির মোকাবেলা করতে হয়েছে তাদের।
প্রায় দেড় মাস আগে এই সয়ুজ মহাকাশযানেই একটি ছিদ্র দেখা দেওয়ায় বিপদে পড়েছিলেন আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে থাকা মহাকাশচারীরা। দুই মহাকাশচারী ওই সময় তড়িঘড়ি করে ছিদ্র বন্ধ করে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনকে বড় বিপত্তির হাত থেকে বাঁচান।