হরলাল রায় সাগর, সিনিয়র রিপোর্টার: সারাদেশের নৌপথ অরক্ষিত ও ঝুঁকিপূর্ণই রয়ে যাচ্ছে। ঢাক-ঢোল পিটিয়ে হারিয়ে যাওয়া নদী ও নাব্য হারানো নৌপথ পুনরুদ্ধারে কাজ চললেও নিরাপত্তা নিশ্চিতে পদক্ষেপ নেই। ঢাকা-বরিশাল-পটুয়াখালী-পিরোজপুর-ভোলা-সন্দীপ-কক্সবাজারসহ নৌপথগুলোতে পর্যাপ্ত পথ নির্দেশক কিংবা নৌসহায়ক যন্ত্রপাতি নেই। ঝুঁকি নিয়ে চলছে যাত্রীবাহীসহ সব ধরণের নৌযান। পাঁচ ভাগের এক ভাগ পথ নির্দেশকের মাধ্যমে জোড়াতালি দিয়ে নৌপথ পরিচালনা করছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীন নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ-বিআইডব্লিউটিএ।
বিআইডব্লিউটিএ সূত্রে জানা গেছে, সারাদেশে নৌপথ ছিল তিন হাজার নয়শ কিলোমিটার। গত প্রায় ৮ বছরে নাব্য হারানো বা মরে যাওয়া নদী খননের মাধ্যমে আরো ছয়শ কিলোমিটার পুনরুদ্ধার করা হয়েছে। হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে এই নৌপথ খনন কাজ চলছে। কিন্তু নৌপথ সংরক্ষণ এবং নিরাপদ নৌপথ নিশ্চিত করতে তেমন কোনো উদ্যোগ নেই। বিআইডব্লিউটিএ’র নৌ সংরক্ষণ ও পরিচালন বিভাগের ২০১৭ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, নৌপথগুলোতে বাতিযুক্ত বয়া, টাওয়ার বিকন, স্ফেরিক্যাল গোল বয়া, জিআরপি বয়া, ড্রাম বয়া, ডায়ম- মার্কার, এইচ মার্কার, ও এবং ক্রস মার্কার, পিসি পোল ও এলইডি বাতি স্থাপন করা আছে তিন হাজার ৫৪টি। এরমধ্যে বাতিযুক্ত বয়া ৬৬টি, টাওয়ার বিকন ৩১৫টি, স্ফেরিক্যাল গোল বয়া ৫৯টি, জিআরপি বয়া ১১টি, ড্রাম বয়া ৫২টি, ডায়ম- মার্কার ৫৪২টি, এইচ মার্কার ৩১৮টি, ও এবং ক্রস মার্কার ৪৫০টি, পিসি পোল এক হাজার ১৩৮টি এবং এলইডি বাতি ১০৩টি। এসব নৌসহায়ক যন্ত্রপাতির পাশাপাশি বাঁশের মার্কার স্থাপন করা হয় নৌপথে। এর সংখ্যা ২২ হাজার ৪৩৯টি। এই নির্দেশক বা নৌসহায়ক যন্ত্রাপাতি প্রায়ই বিকল বা নষ্ট হয়। তা মেরামত করার সময় এসবের সংখ্যা আরো কমে যায়। আর বাঁশ নষ্ট হলে নতুন কিনে বসাতে হয়। এই পথ নির্দেশক বা নৌসহায়ক যন্ত্রপাতি কেনা ও মেরামত এবং তা স্থাপনের জন্য বছরে বরাদ্দ মাত্র প্রায় দেড় কোটি টাকা।
সংশ্লিষ্টরা জানান, আন্তর্জাতিক মান বা আইএসও অনুযায়ী ৩ থেকে ৪ কিলোমিটার পর পর নৌসহায়ক যন্ত্রপাতি বা পথ নির্দেশক থাকা দরকার। তবে আমাদের দেশে নদীর বাঁক ও চরের উপর নির্ভর করে প্রয়োজন মাফিক পথ নির্দেশক স্থাপন করা প্রয়োজন। এ হিসেবে বর্তমানে সুষ্ঠু ও নিরাপদ নৌপথের জন্য আরো চার-পাঁচগুণ অর্থাৎ ১২ হাজার থেকে ১৫ হাজার পথ নির্দেশক প্রয়োজন বলে মনে করেন বিআইডব্লিউটিএর নৌ সংরক্ষণ ও পরিচালন বিভাগের পরিচালক মো. শাহজাহান। তিনি বলেন, জোড়াতালি দিয়ে নৌপথ সংরক্ষণ করার প্রাণপণ চেষ্টা করা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, নৌ চ্যানেল ও গভীরতার নির্দেশক হিসেবে নৌসহায়ক যন্ত্রপাতি স্থাপন করা হয়। এই পথ নির্দেশক-বয়া, বিকন, মার্কার দেখে নৌযান চালন চালকরা। কিন্তু নদীগুলোতে পথ নির্দেশকের অভাবে নৌযান চালাতে হয় ঝুঁকি নিয়ে। পথ নির্দেশক না থাকায় অনেক সময় চরে নৌযান আটকে যায়। আবার গতিপথও হারিয়ে ফেলেন নৌযান চালকরা।