দর্পণ ডেস্ক :
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলা পূর্বাচল থেকে ৩ যুবকের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। শুক্রবার সকালে উপজেলার পূর্বাচল উপশহরের কাঞ্চন-কুড়িল বিশ্বরোড (৩০০ ফিট) সড়কের আলমপুর এলাকার ১১নং সেতুর নিচ থেকে ওই লাশগুলো উদ্ধার করা হয়। নিহতদের পরিবার দাবি করছে তাদের মানিকগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা পুলিশ পরিচয়ে আটকের পর পরিকল্পিতভাবে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। তবে আটক ও হত্যার দায়ভার অস্বীকার করেছে মানিকগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা পুলিশ।
রূপগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মনিরুজ্জামান জানান, শুক্রবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে রূপগঞ্জের পূর্বাচল উপশহরের কাঞ্চন-কুড়িল বিশ্বরোড সড়কের আলমপুর এলাকার ১১নং সেতুর নিচে পাশাপাশি গুলিবিদ্ধ ৩ যুবকের লাশ পড়ে থাকতে দেখে এলাকাবাসী পুলিশকে খবর দেয়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশগুলো উদ্ধার করে। এ সময় লাশের দেহ তল্লাশি করে একজনের পকেট থেকে একটি ভিজিটিং কার্ড উদ্ধার করে লাশের পরিচয় শনাক্ত করা হয়। তাদের মধ্যে মুন্সীগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলার বিক্রমপুর গ্রামের মৃত আবদুল ওহাবের ছেলে নুর হোসেন বাবু (২৯) তার ভায়রা ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার গুড়েলা এলাকার আবদুল মান্নানের ছেলে শিমুল আজাদ (২৬) বর্তমানে রাজধানীর মুগদা মান্ডা এলাকার হাজীর বাড়ির ভাড়াটিয়া এবং তাদের বন্ধু ও ব্যবসায়িক অংশীদার রাজধানীর মহাখালী দক্ষিণপাড়া এলাকার মৃত শহিদুল্লাহর ছেলে সোহাগ ভূইয়া (৩৪)।
তারা ৩ জনই মুগদা এলাকায় অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে গার্মেন্ট পণ্যের ব্যবসা করতেন। এদের মধ্যে নিহত শিমুলের প্যান্টের পকেট থেকে ৬৫ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করা হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। নিহত প্রত্যেককেই মাথায় ও বুকসহ একাধিক স্থানে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে বলে জানান ওসি।
নিহত ব্যবসায়ী শিমুলের স্ত্রী নীপা ইসলাম জানান, আমার স্বামী শিমুল ভগ্নিপতি নুর হোসেন বাবু ও তাদের ব্যবসার পার্টনার সোহাগ মিলে গত ১২ সেপ্টেম্বর বুধবার সকালে তাদের গ্রামের বাড়ি ঝিনাইদহের সদর থানাধীন মহারাজপুর ইউনিয়নের গুড়েলা গ্রামে বেড়াতে যায়। জরুরি কাজে সেদিন রাতেই আবার তারা ঢাকার উদ্দেশ্য রওনা হয়। ১৩ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার ভোরে গাড়িতে থাকা অবস্থায় সবার মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়। পরে খোঁজাখুঁজির এক পর্যায়ে গাড়ির সুপারভাইজারের মাধ্যমে জানতে পারেন পাটুরিয়া ফেরিঘাটের সামনে থেকে ১৩ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার ভোরে ডিবি পুলিশের জ্যাকেট পরা ১৫-১৬ জন ব্যক্তি তাদের আটক করে নিয়ে গেছেন। নিহতের আত্মীয়স্বজনরা মানিকগঞ্জ গোয়েন্দা পুলিশ, র্যাব কার্যালয় ও স্থানীয় থানা-হাসপাতালগুলোতে তাদের সন্ধান করেও পাননি। শুক্রবার সকালে রূপগঞ্জ থানা পুলিশের মাধ্যমে তার স্বামীসহ ৩ জন নিহতের সংবাদ পেয়ে তারা ঘটনাস্থলে এসে লাশগুলো শনাক্ত করেন। নিপা ইসলাম দাবি করেন, তার স্বামীসহ নিহত কারোর বিরুদ্ধে থানায় কোনো ধরনের মামলা এমনকি সাধারণ ডায়রি পর্যন্ত নেই।
তিনি বলেন, পুলিশ আটক করে তাদের অজ্ঞাত কারণে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে। এ ব্যাপারে ঢাকা-ঝিনাইদহ রুটের পূর্বাশা বাস সার্ভিসের সুপারভাইজার আশরাফুল ইসলাম বলেন, ১২ সেপ্টেম্বর বুধবার রাতে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার লাউতলা বাসস্ট্যান্ড থেকে ওই তিনজন গাড়িতে ওঠেন। ১৩ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার ভোরে গাড়িটি ফেরি পার হয়ে পাটুরিয়া ঘাটে আসার পর ডিবি লেখা জ্যাকেট পরা ১৫-১৬ জন ব্যক্তি দুটি হায়েস প্রাইভেটকার নিয়ে আমার গাড়িকে ব্যারিকেড দেয়। এ সময় ২৯ জন যাত্রীর মধ্যে থেকে তাদের তিনজনকে নামিয়ে নিয়ে যায় তারা। আমি তাদের পরিচয় জিজ্ঞাসা করলে তারা নিজেদের মানিকগঞ্জ জেলা ডিবি পুলিশ পরিচয় দেয় এবং আটকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে বলে আমাদের জানানো হয়।
এ ব্যাপারে মানিকগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের ওসি নজরুল ইসলাম বলেন, ১৩ সেপ্টেম্বর ভোরে পাটুরিয়া ঘাটে মাদকদ্রব্য উদ্ধারের জন্য আমাদের বিশেষ অভিযান চলছিল। আমি নিজে সে অভিযানে উপস্থিত ছিলাম। আমরা কাউকে আটক করিনি। ক্রসফায়ারের তো প্রশ্নই ওঠে না। নিহতদের লাশ উদ্ধারের পর ময়নাতদন্তের জন্য নারায়ণগঞ্জ মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় নিহতদের পরিবারের পক্ষ থেকে রূপগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।

News Editor : Ganash Chanro Howlader. Office: 38-42/2 Distillery Road, 1st floor, Gandaria, Dhaka-1204.