দর্পণ ডেস্ক :  ভূমিদস্যু জসীম ইকবালের গড়ে তোলা সেই ‘নতুনপাড়া’ গ্রামটি অবশেষে গুঁড়িয়ে দিয়েছে বন বিভাগ ও প্রশাসন। তার বিলাসবহুল চারতলা বাড়ির একাংশও বুলডোজার দিয়ে ভেঙে ফেলা হয়েছে। প্রায় শতকোটি টাকা মূল্যের ১০ একর বনভূমি উদ্ধারের মধ্য দিয়ে শনিবার শুরু হয়েছে বন বিভাগের এ অভিযান।

কালিয়াকৈরের উপজেলার চন্দ্রা পল্লী বিদ্যুৎ জোড়াপাম্প এলাকায় অবৈধভাবে বনের জায়গা দখল করে স্থাপনা নির্মাণকারীদের সরে যাওয়ার জন্য শনিবার সকাল থেকেই মাইকিং করা হয়। বনখেকো জসীম ইকবালের লাশ বনের ভেতর থেকে উদ্ধারের পরপরই অবৈধভাবে ঘরবাড়ি তৈরি করা লোকজন আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। তার সহযোগীরাও গা ঢাকা দেয়। মাইকিং শুনে দ্রুত বনের জায়গায় বসবাসকারীরা তাদের মালপত্র সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন।

স্থানীয়রা জানান, শনিবার জসীমের আলিশান বাড়িটি ছিল সুনসান নীরব। কোনো লোক ছিল না। অথচ ক’দিন আগেও ওই বাড়িটি তার ক্যাডার বাহিনীর সদস্যরা ঘিরে রাখত। বন বিভাগের চন্দ্রা বিট কর্মকর্তা মাহমুদুল হক মুরাদ জানান, দুপুরের দিকে তাদের উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়। বন বিভাগের অন্তত দেড়শ’ নিজস্ব কর্মকর্তা ও কর্মচারী এ অভিযানে অংশ নেন। তিনি বলেন, বন কর্মকর্তাদের বাধার মুখেই জসীম ওই বাড়ি নির্মাণ করেছিলেন। জমি দখল করে নতুনপাড়া নামে একটি গ্রাম গড়ে তুলেছিলেন। সেগুলো উচ্ছেদ ও বনভূমি উদ্ধার কর্যাক্রম শুরু হয়েছে। আস্তে আস্তে সব উদ্ধার করা হবে।

জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রাসেল শেখ বলেন, বিরূপ পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য বন বিভাগের এ অভিযানে বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়ের করা হয়েছিল। জবরদখল হয়ে যাওয়া বনভূমি উদ্ধারের ক্ষেত্রে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।

উচ্ছেদ অভিযানের সময় উপস্থিত ছিলেন গাজীপুরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জান্নাতুল ফেরদৌস, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মশিউর রহমান, জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) সনজীব কুমার দেবনাথসহ বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তারা।

গাজীপুর জেলা প্রশাসক ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর বলেন, জবরদখল হয়ে যাওয়া সব জমি উদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত এ অভিযান অব্যাহত থাকবে। উদ্ধার অভিযান শেষে আগামী দু-একদিনের মধ্যেই ওই জায়গাকে সামাজিক বনায়নের আওতায় আনা হবে। এরই মধ্যে সে কাজের প্রস্তুতি শুরুও হয়েছে।

চন্দ্রার জোড়াপাম্প এলাকায় গজারি গাছ কেটে ২৬১ বিঘা জমির বেশিরভাগই দখল করে ‘নতুনপাড়া’ নামে একটি গ্রাম গড়ে তোলেন। রাতারাতি পুরো বনাঞ্চল বিরানভূমিতে পরিণত করে গড়ে তোলা হয় নতুনপাড়া নামে একটি গ্রাম। প্রায় ৩০০ পরিবারের কাছ থেকে ৩-৫ লাখ করে টাকা নিয়ে সেখানে প্লট বিক্রি করে কোটি কোটি টাকার মালিক বনে যান।

শুক্রবার ভোরে বনখেকো জসীম ইকবালের গুলিবিদ্ধ লাশ পাওয়া যায় গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার ভুলেশ্বর নেতারটেক এলাকার গভীর বনের ভেতর।