- দর্পণ ডেস্ক:
আর মাত্র চার মাস বাকি নির্বাচনের। এ সময়টা পুরোপুরি রাজপথে থাকবে আওয়ামী লীগ। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দুই ধরনের হিসাব সামনে রেখে দলটি তৎপর হবে। দলটির শীর্ষ কয়েক নেতা জানান, আগামী দুই মাস দেশের রাজনীতি থাকবে টার্নিং পয়েন্টে। বিএনপি নির্বাচনে আসলে এক হিসাব আর না আসলে আরেক হিসাব। মূলত এই দুই ইস্যুকে আপাতত সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে আওয়ামী লীগ।
কারণ অক্টোবরে নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণা করবে।
সে হিসেবে অক্টোবরের মধ্যে নির্বাচনে অংশ নেয়া নিয়ে বিএনপিকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। যদি বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নেয় এবং আগের মতো জ্বালাও-পোড়াও রাজনীতি করে তাহলে তা মোকাবিলা করবে আওয়ামী লীগ। নেতারা জানান, বিএনপিকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলার জন্য তারা প্রস্তুত রয়েছেন। তারা আরো বলেছেন, আমাদের মজবুত সংগঠন রয়েছে। তৃণমূলও যথেষ্ট শক্তিশালী। তাই যেকোনো ধরনের আন্দোলন মোকাবিলার সক্ষমতা আওয়ামী লীগের রয়েছে।
শীর্ষ নেতারা বলেন, বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নিলে তারা নিঃসন্দেহে আন্দোলন মুডে যাবে। সেজন্য তাদের ঈদের পর পরই মাঠে নামতে হবে। তাই সে হিসাব আগে থেকেই করে রাখা হয়েছে। এদিকে নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগকে তিনটি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে বলে জানান শীর্ষ নেতারা। এগুলো হচ্ছে- অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশনকে সর্বাত্মক সহায়তা করা, রাজনৈতিক দল হিসেবে একটি আসনে একাধিক প্রতিদ্বন্দ্বীকে ম্যানেজ করা ও নির্বাচনে সব রাজনৈতিক দলকে অংশ নেয়ার নিশ্চয়তা। তবে বিএনপির ক্ষেত্রে দলটির অবস্থান অনড়।
কয়েকজন নেতা জানান, নির্বাচনে অংশ নেয়ার জন্য বিএনপির সঙ্গে সংলাপের কোনো অধিকার আওয়ামী লীগের নেই। বরং এ দায়িত্বটা এখন নির্বাচন কমিশনের। এসব প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ বলেন, সামনে সময় অনেক কম। অক্টোবরের পর বিএনপির আর সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় থাকবে না। তাই সেপ্টেম্বরের মধ্যেই তাদের নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নিতে হবে। যদি তারা অংশ নেয় তাহলে নির্বাচন হবে ওপেন কম্পিটিশনে।
সেক্ষেত্রে তারা জোটবদ্ধভাবে অংশ নেবে। আমরাও জোটবদ্ধভাবে অংশ নেবো। আর যদি বিএনপি অংশ না নেয় তাহলে জাতীয় পার্টি হয়তো আলাদা জোট হবে। অর্থাৎ নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নিলে এক ধরনের প্রক্রিয়া হবে আর না নিলে আরেক ধরনের প্রক্রিয়া হবে। তিনি বলেন, নির্বাচন না করলে বিএনপিকে আন্দোলন মুডে যেতে হবে। সেক্ষেত্রে তাদেরকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলার জন্য আওয়ামী লীগ প্রস্তুত রয়েছে। একই প্রসঙ্গে দলের অপর সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মুহাম্মদ ফারুক খান বলেন, রাজনৈতিক বিবেচনায় আওয়ামী লীগ সব সময় রাজপথে থাকার দল।
পাশাপাশি মানুষ এখন অনেক সজাগ। সচেতন। এর প্রমাণ পাওয়া গেছে কোটা আন্দোলনে। সেখানে বিএনপি ভর করতে চেয়েছিলো। মানুষের সচেতনতার কারণে তারা ব্যর্থ হয়েছে। আর যদি আবারো রাস্তায় জ্বালাও-পোড়াও করতে যায় তাহলে তো সরকার রয়েছে। সেসব মোকাবিলা করবে। তিনি বলেন, সামনে নির্বাচন হওয়ায় আমাদের আপাতত চিন্তা-ভাবনা নির্বাচনকে ঘিরেই। দলের সবাই এখন প্রচারণায় ব্যস্ত। এরই মধ্যে আমাদের নির্বাচনী ইশতেহারের কাজ চলছে।
সেখানে তিনটি বিষয়কে প্রাধান্য দেয়া হবে। প্রথমত, গত নির্বাচনের আগে আমাদের যেসব অঙ্গীকার ছিল তা কতটুকু বাস্তবায়ন করতে পেরেছি তা তুলে ধরা হবে। দ্বিতীয়ত, আসন্ন নির্বাচনে জয়লাভ করলে আমাদের ৫ বছরের পরিকল্পনা ভোটারদের কাছে পেশ করা হবে। সর্বশেষে ইশতেহারে তুলে ধরা হবে ২০৪১ সালের মধ্যে দেশ নিয়ে আওয়ামী লীগের কি ধরনের স্বপ্ন রয়েছে, পরিকল্পনা রয়েছে। বিএনপি প্রসঙ্গে সম্প্রতি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, এই নির্বাচন (একাদশ) নয়, পরবর্তী নির্বাচনের আগে বিএনপির সঙ্গে সংলাপ হবে।
তিনি জানান, নির্বাচনকালীন সরকার রুটিন মাফিক দায়িত্ব পালন করবে, সরকারের মন্ত্রিপরিষদ, পুলিশ প্রশাসন সব কিছুই থাকবে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) অধীনে। তিনি বলেন, আগামী নির্বাচন হবে সংবিধান অনুযায়ী। নির্বাচনকালীন সরকারের হাতে কোনো ক্ষমতা থাকবে না। এ সময় মন্ত্রী বলেন, বিএনপি সংবিধান মানে না, আইন মানে না, আদালত মানে না, বিচার মানে না, কিছুই না। বিএনপি জানে আগামী নির্বাচনে তারা হেরে যাবে। তাই নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর অজুহাত খুঁজছে। তবে ২০১৪ সালের মতো যদি তারা বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চায়। তাহলে জনগণ তা প্রতিহত করবে।
এদিকে নির্বাচনের আর মাত্র চার মাস বাকি থাকায় আওয়ামী লীগের তৃণমূলে নির্বাচনী হাওয়া বইতে শুরু করেছে। বিশেষ করে পবিত্র ঈদুল আজহাকে ঘিরে সরগরম হয়ে উঠেছে তৃণমূল রাজনীতি। প্রতিটি নির্বাচনী এলাকায় প্রার্থীদের নানা রঙের পোস্টার-ব্যানার ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে। তৃণমূলকে আস্থায় নিতে যে যার মতো দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন।
আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা জানান, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী বাছাই এবার কঠিন হবে। তৃণমূলের মতামতকে প্রাধান্য দিয়ে চার স্তরের জরিপ মিলিয়ে দেখা হবে। সে কারণে বর্তমান এমপি কিংবা আওয়ামী লীগ নেতা, সাবেক ছাত্রনেতা এসব যোগ্যতা থাকলেই নৌকার টিকিট পাওয়া যাবে না। যাকে মনোনয়ন দিলে জিতে আসার সম্ভাবনা বেশি, আগামী নির্বাচনে তাকেই দেয়া হবে নৌকার টিকিট। এ কারণে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা এখন তৃণমূলের দিকে ঝুঁকছেন।
তারা সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত নির্বাচনী এলাকায় গণসংযোগ করে বেড়াচ্ছেন। এদিকে দলের পক্ষ থেকে বেশির ভাগ নেতাকে এবারের ঈদ নিজ নিজ এলাকায় করার মৌখিক নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ঈদকে কেন্দ্র করে জনগণের কাছে যাওয়া এবং তাদের সঙ্গে দূরত্ব ঘোচানো একটি সুযোগ হিসেবে দেখছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতারা।

News Editor : Ganash Chanro Howlader. Office: 38-42/2 Distillery Road, 1st floor, Gandaria, Dhaka-1204.