অনলাইন ডেস্ক : ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তি জিকোর মতে, এই বিশ্বকাপ নাকি ন্যায়বিচারের বিশ্বকাপ। মাঠের খেলায় যে দুটি দল ভালো খেলছে তারাই ফাইনালে উঠেছে। এমনটা নাকি খুব একটা দেখা যায় না। তিনি আরও মনে করেন, দল হিসেবে ভালো খেলছে বলেই ফ্রান্স ও ক্রোয়েশিয়া ফাইনালে উঠেছে। এ কারণেই মেসি, রোনালদো, নেইমার, হ্যাজার্ড, কেনকে ছিটকে যেতে হয়েছে। তবে দলগত পারফরম্যান্সের মাঝেও দুই ফাইনালিস্ট দলের কয়েকজন তারকা নিজেদের আলাদা করে চিনিয়েছেন। লুকা মডরিচ, কিলিয়ান এমবাপ্পে, ইভান রাকিটিচ, আন্তোনিও গ্রিজম্যানরা আলো করে রেখেছেন রাশিয়া। আজ লুঝনিকির মহামঞ্চে শিরোপা লড়াইয়েও কে জিতবে, সেটাও তাদের ওপরই নির্ভর করছে। ফাইনালে ঝলক দেখাতে পারবেন যিনি, শেষ হাসিটা হাসবেন তিনিই।

এবারের বিশ্বকাপে ক্রোয়েশিয়ার উত্থানের পেছনে মূল কারিগর লুকা মডরিচ। রিয়াল মাদ্রিদের এই ক্রোয়াট মিডফিল্ডার গোল্ডেন বলের অন্যতম দাবিদার। ক্রোয়েশিয়া জিততে অবধারিতভাবেই এবারের বিশ্বকাপের সেরা ফুটবলারের পুরস্কার যাবে তার হাতে। তখন ব্যালন ডি’অর জয়ের দৌড়ে সবার চেয়ে এগিয়ে থাকবেন তিনি। রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে তিনটি চ্যাম্পিয়ন্স লীগ জিতলেও এতদিন কোনো আলোচনাই হতো না মডরিচকে নিয়ে। সব আলো ছিল এক ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর ওপর। অথচ পরিসংখ্যান বলছে, রিয়ালের জার্সিতে রোনালদো যত গোল করেছেন তার ষাট ভাগ পাস এসেছে মডরিচের পা থেকে। তবে রাশিয়া বিশ্বকাপ পাদপ্রদীপের আলোয় নিয়ে এসেছে তাকে। অনেকের মতে, এরই মধ্যে গোল্ডেন বল জেতার মতো পারফরম্যান্স করে ফেলেছেন মডরিচ। দুটি গোল ও দুটি অ্যাসিস্ট দিয়ে তার পারফরম্যান্সের মাহাত্ম্য বোঝানো যাবে না। পুরো মাঠ দাপিয়ে বেড়ান অফুরন্ত প্রাণশক্তির এ মিডফিল্ডার। শেষটা রাঙাতেও মরিয়া তিনি। ফাইনালের আগে তিনি পরিস্কার বলেছেন, ‘কখনোই ব্যক্তিগত ট্রফির কথা মাথায় রেখে খেলি না। দলের সাফল্যটাই আসল।’ আজও লুঝনিকিতে তার ওপরই অনেকটা নির্ভর করছে ক্রোয়েশিয়ার সাফল্য।

মডরিচ যেমন ক্রোয়েশিয়ার ইঞ্জিন, ঠিক তেমনটি ফরাসিদের নায়ক কিলিয়ান এমবাপ্পে। সারা বিশ্বের তরুণ প্রজন্মের আইডল হয়ে গেছেন তিনি। এবারের বিশ্বকাপে ধ্রুবতারার মতো জ্বলজ্বল করছেন ১৯ বছরের এ তরুণ। তার সবচেয়ে বড় সম্পদ দুরন্ত গতি। আর্জেন্টিনা তো তার গতির কাছেই ছিটকে গেছে। ওই ম্যাচের পর পেলের সঙ্গে তুলনা হচ্ছে এমবাপ্পের। তার কারণেই প্রতিপক্ষ ডিফেন্স সবসময় বাড়তি চাপে থাকে। ফরাসি লীগে সবচেয়ে কম বয়সে হ্যাটট্রিক করার পর তাকে মোনাকো থেকে কিনে নেয় প্যারিস সেন্ট জার্মেই। সেখানে নেইমার ও কাভানির পাশে খেলে ভীষণ ধারালো হয়ে উঠেছেন তিনি। ফাইনালেও তিনি ফ্রান্সের তুরুপের তাস। সেমিতে বেলজিয়ামকে হারানোর পর এমবাপ্পে ঘোষণা দিয়েছেন, যে কোনো মূল্যে ট্রফি চান তিনি। তিনি গোল পেলেন বা না পেলেন এসব তার কাছে এখন কোনো বিবেচ্য বিষয় না।

তবে এখন পর্যন্ত প্রত্যাশা পূরণ করতে না পারলেও ফরাসি তারকা আন্তোনিও গ্রিজম্যানের ওপরও নজর রাখতে হবে। অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদের এই ফরোয়ার্ড উদ্ভাবনী নৈপুণ্যের পাশাপাশি গোল করায়ও ভীষণ দক্ষ। ফাইনালে তিনি যে নিজের সেরাটা দিতে মরিয়া হয়ে উঠেবেন, সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। শিরোপা জিততে তিনি যে কতটা মরিয়া তা বোঝা গেছে শুক্রবারের সংবাদ সম্মেলনেই, ‘আমরা আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলে জিতলাম নাকি রক্ষণাত্মক রণনীতিতে জিতলাম, সেটা বড় বিষয় নয়। আসল হলো ট্রফি জেতা।’ তবে এত সহজে ছাড় পাবেন না গ্রিজম্যান। তাকে আটকানোর জন্য ক্রোয়েশিয়ার মধ্যমাঠে আছেন ইভান রাকিটিচ। বার্সেলোনার এ মিডফিল্ডার হলেন নীরব শিকারি। তারও আছে অফুরন্ত প্রাণশক্তি। সেমিতে ১০২ ডিগ্রি জ্বর নিয়ে পুরো একশ’ কুড়ি মিনিট খেলে তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন তার সামর্থ্য। প্রতিপক্ষের আক্রমণ রুখে দেওয়ার পাশাপাশি গোলের সুযোগ তৈরিতেও রাকিটিচের জুড়ি মেলা ভার। মডরিচ ও রাকিটিচ জুটিকে এবারের বিশ্বকাপের সেরার তকমা দেওয়া হচ্ছে।

ফাইনালে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে দু’দলের রক্ষণভাগকেও। এখানে সম্ভবত ফরাসিরা একটু হলেও এগিয়ে থাকবেন। তাদের দুই সেন্টারব্যাক স্যামুয়েল উমতিতি ও রাফায়েল ভারানে প্রতিপক্ষের আক্রমণ ঠেকানোর পাশাপাশি গোলও করছেন। ক্রোয়েশিয়ার দেয়ান লভরেনের কথাও বলতে হবে। সম্ভবত এবারের বিশ্বকাপের সেরা ডিফেন্ডার লিভারপুলের এ ক্রোয়াট তারকা। নজর রাখতে হবে দু’দলের গোলরক্ষক ড্যানিয়েল সুবাসিচ ও হুগো লরিসের ওপরও। গত তিনটি বিশ্বকাপ নিষ্পত্তি হয়েছে অতিরিক্ত সময়ে। এর মধ্যে ২০০৬ সালে টাইব্রেকারে। তাই দুই গোলকিপারের ওপরও নির্ভর করবে অনেক কিছু।