,

it-shop.Com

ঘরে মা ও দুই মেয়ের লাশ

Spread the love

অনলাইন ডেস্ক : রাজধানীর মিরপুর দারুস সালামের সরকারি কোয়ার্টারের একটি ফ্ল্যাট থেকে মা ও দুই মেয়ের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ঘরের দরজা ভেঙে এই তিনজনের লাশ উদ্ধার করা হয়। তারা হলেন— জেসমিন আক্তার (৩৫) এবং তার দুই মেয়ে হাসিবা তাহসিন হিমি (৯) ও আদিবা তাহসিন হানি (৫)। জেসমিন ছিলেন ঢাকার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের কোষাধ্যক্ষ। স্বামী হাসিবুল ইসলাম চাকরি করেন সংসদ সচিবালয়ে। দুই মেয়ে ও স্বজনদের নিয়ে পাইকপাড়া ‘সি টাইপ কলোনি’র ১৩৪ নম্বর ভবনের চারতলার বাসায় থাকতেন তারা। হাসিবুল হাসানের গ্রামের বাড়ি পঞ্চগড়ের ভজনপুর গ্রামে। জেসমিনের বাড়ি ঠাকুরগাঁওয়ে। সাবেক স্পিকার ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকারের পিএ ছিলেন হাসিবুল। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা পুলিশ কর্মকর্তা জানান, বদ্ধ ওই ঘরে শিশু দুটির লাশ ছিল বিছানায়। তাদের মায়ের লাশ পড়েছিল বিছানার পাশেই মেঝের ওপর। এ সময় ঘরে টিভি চলছিল। জেসমিনের গলা ও দুই হাতের কব্জি ছিল কাটা। পেটে ৮-১০টি ছোরার ঘা রয়েছে। বড় মেয়ে মিহিরের গলা কাটা ছিল। বুকে তিনটি ছুরির আঘাত ও হাতের কব্জিও ছিল কাটা। আর ছোট মেয়ে হানির পেটে একটাই ছুড়ির আঘাত। সেটি ছিল বেশ বড়। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ একটি ছোরা উদ্ধার করে।

ঘটনাস্থল পরিদর্শন, খুনের ধরন ও গতি প্রকৃতি দেখে পুলিশ ধারণা করছে, দুই মেয়েকে হত্যা করে জেসমিন আত্মঘাতী হয়েছেন। তাদের ধারণা, বিকালেই এই রক্তক্ষয়ী ঘটনা ঘটে। ভাই শাহিনুর ইসলাম জেসমিনের সঙ্গে থাকেন। তিনি চাকরি খুঁজছেন। তিনি বলেন, ‘আমার বোনের মাইগ্রেনের সমস্যা ছিল। গত মাসেও ঘুমের ওষুধ খেয়েছিল। সবসময় দুশ্চিন্তা করত। মানসিক চাপে থাকত।’ তিনি বলেন, ‘৩টার দিকে বাসায় ঢুকে দেখি রুম আটকানো। টিভির শব্দ শোনা যাচ্ছিল।’ এরপর তিনি আর ডাকাডাকি করেননি। কিন্তু দরজা না খোলায় পরে বাইরে চলে যান। সন্ধ্যা ৬টায় ফিরে তখন দেখতে পান দুলাভাই বাসায় আছেন। কিন্তু বোনের রুমের দরজা তখনো বন্ধ। তার দুলাভাই ৫টার দিকে বাসায় ফেরেন। তখন তাদের সন্দেহ হয়। আবার কি আগের মতো ঘুমের ওষুধ খেয়েছেন? ডাকাডাকি করেন। দুলাভাই দরজার ফাঁক দিয়ে রক্ত দেখতে পান। এরপর তারা দরজা ভাঙেন। সেখানে দেখেন মা ও দুই মেয়ের লাশ। ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে ডিএমপির জয়েন্ট কমিশনার (ক্রাইম) শেখ নাজমুল আলম উপস্থিত সাংবাদিকদের জানান, তারা ধারণা করছেন, দুই সন্তানকে হত্যা করে জেসমিন নিজে আত্মহত্যা করেছেন। রুমের দরজা ভিতর থেকে আটকানো ছিল। তবে এ ঘটনার পেছনে অন্য কোনো কারণ আছে কিনা, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। জেসমিনের ভাই শাহিনুর ইসলাম ধারণা করেন, আনুমানিক বিকাল ৪টা থেকে ৬টার মধ্যে এ ঘটনা ঘটেছে। জেসমিনের খালাতো বোন রেহানা পারভীন জানান, তার আপা ভারতসহ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে মাইগ্রেনের চিকিৎসা নিয়েছে। মানসিক রোগী ছিল না। তবে মানসিকভাবে খুব বিপর্যস্ত ছিল। সন্তানদের জন্য দুশ্চিন্তা করত। পুলিশ জানিয়েছে, বিকাল ৫টার দিকে জেসমিনের স্বামী হাসিব কর্মস্থল থেকে ফিরে তাদের শোবার ঘর ভিতর থেকে বন্ধ দেখতে পান। ৩টার দিকে দুপুরের খাবার খেয়ে দুই মেয়েকে নিয়ে শোবার ঘরে ছিলেন জেসমিন। অন্য ঘরে জেসমিনের ভাইসহ অন্য স্বজনরা ছিলেন। দারুস সালাম থানার ওসি মো. সেলিমুজ্জামান বলেন, হাসিবুল ফেরার পর অনেক ডাকাডাকি করেও সাড়া না পেয়ে দরজা ভেঙে ঢুকে তিনজনের মৃতদেহ দেখতে পান। এরপর থানায় খবর দেওয়া হলে পুলিশ গিয়ে লাশ তিনটি উদ্ধার করে। মানসিক সমস্যা থেকে জেসমিন ২৫ দিন আগে মেয়েদের অতিরিক্ত ঘুমের বড়ি খাওয়াতে গিয়েছিলেন বলে পরিবারের সদস্যরা পুলিশকে জানিয়েছে। ওসি বলেন, ‘এক মেয়েকে খাওয়ানোর পর অন্য মেয়েকে খাওয়ানোর সময় পরিবারের সদস্যরা টের পেয়ে গিয়েছিল। যে মেয়েকে খাইয়েছিল, তাকে চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করে তোলা হয়।’ ঘটনাস্থল প্রাথমিকভাবে খতিয়ে দেখে ডিএমপির মিরপুর বিভাগের উপকমিশনার মাসুদ আহমেদ বলেন, ‘যেখানে ঘটনা ঘটেছে, সেখানে বাইরে থেকে এসে কোনো লোক দিয়ে ঘটানোর সম্ভাবনা খুবই কম।’

রাত সাড়ে ১০টার পর সিআইডি ক্রাইম সিন ইউনিটের পরিদর্শক সাইফুল ইসলামের নেতৃত্বে ৮ সদস্যের একটি টিম ঘটনাস্থলে গিয়ে কাজ শুরু করে।

 

it-shop.Com

     এই বিভাগের আরও খবর