দর্পণ ডেস্ক : নির্মাণকাজ শেষে উদ্বোধনের অপেক্ষায় থাকা দেশের প্রথম ছয় লেনের কালনা সেতুর টোল নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে যানবাহন চলাচলের জন্য দৃষ্টিনন্দন সেতুটি সম্পূর্ণরূপে প্রস্তুত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সেতুর প্রকল্প ব্যবস্থাপক ও সওজের নড়াইলের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান।
তিনি বলেন, গত ৩০ আগস্ট সেতুর মূল কাজ শেষ হয়েছে। এখন লাইটিংয়ের কাজ চলছে। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে তারিখ ঘোষণা হলেই চূড়ান্ত হবে উদ্বোধনের দিনক্ষণ। উদ্বোধনের অপেক্ষায় আছেন নড়াইল, গোপালগঞ্জ, যশোর, বেনাপোল, সাতক্ষীরা, খুলনাসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বেশ কয়েকটি জেলার কোটি কোটি মানুষ।
সেতু কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে যাত্রীবাহী বাসসহ অন্যান্য যানবাহন সংশ্লিষ্টরা উদ্বোধনের প্রহর গুনছেন। সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের ক্রস বর্ডার রোড নেটওয়ার্ক ইম্প্রুভমেন্ট প্রজেক্টের আওতায় জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) অর্থায়নে কালনা সেতু নির্মিত হয়েছে।
সেতু কর্তৃপক্ষ আরও জানায়, কালনা সেতুর টোল নির্ধারণ করা হয়েছে। টোলের ক্ষেত্রে বড় ট্রেইলার ৫৬৫, তিন বা ততোধিক অ্যাক্সেল বিশিষ্ট ট্রাক ৪৫০, দুই অ্যাক্সেল বিশিষ্ট মিডিয়াম ট্রাক ২২৫, মিনি বা ছোট ট্রাক ১৭০, কৃষিকাজে ব্যবহৃত পাওয়ার টিলার ও ট্রাক্টর ১৩৫, বড় বাসের ২০৫, মিনিবাস বা কোস্টার ১১৫, মাইক্রোবাস, পিকআপ, কনভারশন জিপ ও রেন্ট এ-কার ৯০, প্রাইভেটকার ৫৫, টেম্পো, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, অটোভ্যান ও ব্যাটারিচালিত তিন চাকার যান ২৫, মোটরসাইকেল ১০ এবং রিকশা, ভ্যান ও বাইসাইকেল পাঁচ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। উদ্বোধনের পর প্রথমে ম্যানুয়াল (হাতে) পদ্ধতিতে টোল আদায় করা হবে। পরে ডিজিটাল পদ্ধতিতে টোল আদায় হবে। ডিজিটাল পদ্ধতিতে টোল আদায়ের ক্ষেত্রে কমপক্ষে একমাস সময় লাগবে। অপারেটরের মাধ্যমে টোল আদায় হবে।
স্থানীয়রা জানান, এপারে নড়াইলের কালনাঘাট। ওপারে গোপালগঞ্জের শংকরপাশা। মাঝ দিয়ে প্রবাহিত মধুমতি নদী। এ নদীর ওপরই নির্মিত হয়েছে দেশের প্রথম ছয় লেনের কালনা সেতু।
কালনা সেতুর প্রকল্প ব্যবস্থাপক এবং সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের (সওজ) নড়াইলের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আশরাফুজ্জামান বলেন, কালনা সেতু দেশের প্রথম ছয় লেনের সেতু। ধনুকের মতো বাঁকা সেতু এটি। সেতুটির দৈর্ঘ্য ৬৯০ মিটার ও প্রস্থ ২৭ দশমিক ১ মিটার। উভয় পাশে ছয় লেনের সংযোগ সড়ক প্রায় সাড়ে চার কিলোমিটার। সেতু নির্মাণে ব্যয় হয়েছে প্রায় ৯৬০ কোটি টাকা। এশিয়ান হাইওয়ের ওপর অবস্থিত এটি। সড়ক যোগাযোগের ক্ষেত্রে সিলেটের তামাবিল হয়ে ঢাকা, ভাঙ্গা, নড়াইল, যশোর, বেনাপোল, কলকাতা পর্যন্ত সরাসরি ভূমিকা রাখবে কালনা সেতু। কালনা সেতু চালু হলে শুধু জাতীয় ক্ষেত্রেই নয়, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখবে এটি। ভারত, কলকাতা, আসামসহ দেশের মধ্যে স্থলবন্দর বেনাপোল, সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর ও নোয়াপাড়া নদীবন্দরের মধ্যে রাজধানী ঢাকা ও চট্টগ্রামের মধ্যে যোগাযোগের ক্ষেত্রে মাইলফলক রচিত হবে। নড়াইলের লোহাগড়ায় ইপিজেড চালুসহ ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্প্রসারণ ও ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।
কালনাঘাটে স্থাপিত নামফলক থেকে জানা যায়, ২০১৫ সালের ২৪ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘কালনা সেতু’র ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। কালনাঘাট থেকে ঢাকার দূরত্ব মাত্র ১০৮ কিলোমিটার। ফলে ঢাকার সঙ্গে নড়াইল, বেনাপোল, যশোর, খুলনাসহ আশপাশের সড়ক যোগাযোগে ১০০ থেকে ১৫০ কিলোমিটার দূরত্ব কমে যাবে। তবে ঢাকা থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করা হলেও ভাঙ্গা থেকে বেনাপোল পর্যন্ত এই ধরনের সড়ক নির্মিত হয়নি। ফলে এক্সপ্রেসওয়ের সুফল পাচ্ছে না দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বড় একটি অংশ। ভাঙ্গা থেকে নড়াইল-যশোর-বেনাপোল পর্যন্ত এক্সপ্রেসওয়ে সড়ক নির্মাণের বিষয়টি প্রকল্পাধীন বলে জানিয়েছেন কালনা সেতুর প্রকল্প ব্যবস্থাপক আশরাফুজ্জামান। তিনি বলেন, কালনা সেতু চালু হলে যানবাহনের চাপ বেড়ে যাবে। তাই আপাতত যশোরের মনিহার সিনেমা হল চত্বর থেকে নড়াইলের কালনাঘাট পর্যন্ত ৫২ কিলোমিটার সড়কের দুই পাশে তিন ফুট করে প্রশস্ত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বর্তমানে সড়কটি ১৮ ফুট প্রশস্ত থাকলেও তা বাড়িয়ে ২৪ ফুট করা হবে। দরপত্রের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। দরপত্র অনুমোদন হলে যত দ্রুত সম্ভব কাজ শুরু হবে। নড়াইল অংশে প্রায় ৪৭ কোটি এবং যশোর অংশে ৩২ কোটি টাকা ব্যয়ে সড়ক প্রশস্ত করা হবে। এক বছরের মধ্যে কাজ শেষ করা হবে। এ লক্ষ্যে সড়কের দুই পাশে গাছ কাটার কাজ শুরু হয়েছে।
নড়াইল জেলা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির সভাপতি সরদার আলমগীর হোসেন বলেন, কালনা সেতু চালু হলে নড়াইল, যশোর, বেনাপোল, খুলনা, সাতক্ষীরাসহ পাশের জেলাগুলোর সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা বদলে যাবে। অল্প সময়ের মধ্যে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে যাতায়াত করা যাবে। আমরা কালনা সেতু উদ্বোধনের অপেক্ষায় আছি।
এদিকে, কালনা সেতু চালু না হওয়ায় নড়াইল, যশোর, বেনাপোল, নোয়াপাড়া শিল্পনগর, সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দরসহ আশপাশের কয়েকটি জেলার লোকজন পদ্মা সেতুর সরাসরি সুফলও পাচ্ছেন না। কারণ, কালনাঘাটে এসে ফেরি পারাপারের বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে সব ধরনের যানবাহনকে।

News Editor : Ganash Chanro Howlader. Office: 38-42/2 Distillery Road, 1st floor, Gandaria, Dhaka-1204.