ছবি: সংগৃহীত

তিনি পুরো সময়টা কোরআনের পেছনে ব্যয় করেছেন। হাতে লিখেছেন মহাগ্রন্থ আল কোরআন। তারপর সেই পান্ডুলিপি বাঁধাই করেছেন। এখন তিনি দেশের ৫০০ মসজিদ আর মাদরাসায় উপহার দিতে চান। যা রীতিমতো নেট দুনিয়ায় আলোড়ন তুলেছে। 

তাসনিম দিয়া বলেন, ২০২০ সালের মার্চ মাসে যখন করোনার কারণে ঘরবন্দী হয়ে গেলাম তখন ভাবলাম সময় কাটানোর জন্য একটা উদ্যোগ নিই। তখন এই কাজ শুরু করলাম। শেষ করতে পারব এই উদ্দেশ্যে শুরু করিনি। ভাবলাম যে সিরিয়াল ধরে একটা একটা লিখি যা পারি। কিন্তু এভাবে কখন যে ৫ পারা পর্যন্ত লেখা শেষ হয়ে গেল আমি বুঝতে পারিনি। তখন তো বাইরে যাওয়া হয় না বসে বসে প্রতিদিন লিখতে থাকি। এটার প্রতি এক প্রকার নেশা হয়ে গিয়েছিলো।

তিনি বলেন, হাফেজ না কিংবা মাদরাসায়ও পড়াশোনা করিনি তবে কোরআন পড়তে পারতাম। আঙ্গুল দিয়ে ধরে দেখে দেখে লিখতে দেড় বছর সময় লেগেছে। এরপর সেটা ডিজাইন করলাম এবং একজন হাফেজ হুজুরের সঙ্গে আলাপ করলাম কিভাবে কি করা যায়। উনারা বলল এটা খুবই ভালো কাজ করেছেন আমরা দেখতেছি। এরপর উনারা ৩০ জন হাফেজ আমার এই পান্ডুলিপি দেখে। ৬৫১ পৃষ্ঠার এই কোরআন শরিফ উনারা দেড় মাস দেখে সংশোধন করে আমাকে দেয়। তারপর উনাদের থেকে মতামত নিয়ে প্রিন্ট করি। 

৫০০ কপি বিতরণের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, প্রথমে আমি এক কপি প্রিন্ট করি। তারপর কয়েক কপি করি আমার মা-বাবার হাতেও তুলে দিই। যেটি আমার জন্য অনেক বড় পাওয়া। এখন আমার চিন্তা-ভাবনা অন্তত ৫০০ কপি করে বিভিন্ন মসজিদ-মাদরাসা এবং যারা নিয়মিত পড়ে তাদের মাঝে বিতরণ করব। যাতে তারা পড়লে আমার সওয়াব হয়। আমাকে কেউ ভুলে গেলেও আমার এই কাজকে কেউ যেন ভুলে না যায়- এখানেই আমার সার্থকতা। 

মা-বাবার অবদানের কথা উল্লেখ করে দিয়া বলেন, আমার অনুপ্রেরণা আমার বাবা-মা। তাদের অনুপ্রেরণা ছাড়া আসলে এটা কোনভাবেই সম্ভব ছিল না। আমি যখন লিখেছি বাবা আমাকে কাগজ কিনে দিয়েছে, মা চেক করে দিয়েছে। তারা সবসময় সাহস যুগিয়েছে। সর্বোপরি পরিবারের সবাই সাপোর্ট দিয়েছে। 

জারিন তাসনিম দিয়া বলেন, আমি ছোট থেকে ইসলামী পরিবেশে বড় হয়ে উঠিনি। আমি স্কুল-কলেজে পড়েছি, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছি। সবার মতো সাধারণভাবেই পড়াশোনা করতাম। তবে আমি এই কাজটি যখন করে ফেলেছি এবং ইসলামের  কিছু অর্থ যখন আমি বুঝেছি তখন অর্থসহ খতম করেছি। আমার পক্ষে যতটুকু সম্ভব আমি চেষ্টা করছি ইসলামের বিধিনিষেধ মেনে চলতে এবং যতটুকু সম্ভব মেনে চলার চেষ্টা করব। 

অনুভূতি জানতে চাইলে তিনি বলেন, কিছু কিছু অনুভূতি বলে প্রকাশ করা যায় না। কোরআন লিখতে আমার অনেক ভালো লাগা কাজ করত। আর এই ভালো লাগার কারণেই আমি শেষ করতে পেরেছি। আর সবার এত এত ভালোবাসা পেয়ে আরও অনেক বেশি ভালো লাগছে। যদিও কেউ কেউ আবার নেগেটিভ কমেন্টও করেছে। এটা লোক দেখানো কাজ ইত্যাদি ইত্যাদি। তবে আমার মনের মধ্যে তো আর এসব নেই, তাই এসব নিয়ে এত ভাবি না।