নিহত ১৫ বছর বয়সী রাকিব হাসান গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার হিয়াতপুর গ্রামের বাসিন্দা। তার বাবার নাম সামছুল ইসলাম। ৩ জুন বগুড়ার সোনাতলা উপজেলায় এক ডোবা থেকে রাকিবের অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
জানা গেছে, ৩ জুন সোনাতলা উপজেলার চমরগাছ লাহিরীপাড়া গ্রামের এক ডোবাতে রাকিবের লাশ দেখে পুলিশে খবর দেয় স্থানীয়রা। পরে বেলা ১১টার দিকে তার লাশ উদ্ধার করে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে পাঠায় পুলিশ। লাশ উদ্ধারের পর নিহতের পরিচয় প্রথম দিকে জানা না গেলেও পরে নিশ্চিত হন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। এ ঘটনায় শুক্রবার মধ্যরাতে বগুড়ার সোনাতলা থানায় অজ্ঞাতদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন নিহতের ভাই বেলাল হোসেন।
গ্রেফতাররা হলেন- গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার হিয়াতপুর গ্রামের ১৫ বছর বয়সী এক কিশোর ও একই গ্রামের ২০ বছর বয়সী আহসান হাবীব সজীব। তাদের শনিবার আদালতে জবানবন্দি দেন। এর আগে, শনিবার সকালে নিজ গ্রাম থেকে দুজনকে গ্রেফতার করা হয়।
রাকিব ও গ্রেফতার দুজনের বাড়ি একই গ্রামে। এ কারণে তাদের মধ্যে ভালো সম্পর্ক ছিল। এছাড়া গ্রেফতার হওয়া ওই কিশোর রাকিবের বন্ধু ছিলেন। গত ৩১ এপ্রিল রাত ৮টার দিকে রাকিবসহ ওই দুজন এক নারীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ার জন্য বগুড়ার সোনাতলা উপজেলায় আসেন। তাদের ভাড়া করা নারীটির আসতে দেরি হচ্ছিল। কিন্তু রাকিব ও সজীবের মধ্যে কে আগে নারীটির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হবেন, বিষয়টি নিয়ে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। ওই সময়ই রাকিবকে গাছের ডাল দিয়ে পিটিয়ে ও শ্বাসরোধে খুন করা হয়। এ হত্যাকাণ্ডের তিনদিন পর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
রোববার বেলা ১১ টার দিকে নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশননের (পিবিআই) বগুড়ার এসপি আকরামুল হোসেন।
তিনি বলেন, অর্থের বিনিময়ে এক নারীকে ভাড়া করেন নিহত রাকিবসহ গ্রেফতার হওয়া দুজন। বগুড়ার সোনাতলার চমরগাছা লাহিড়ীপাড়া গ্রামের পতিত জমিতে ওই নারীটির সঙ্গে তাদের ঘনিষ্ঠ হওয়ার কথা ছিল। শুক্রবার রাতে রাকিব, তার বন্ধু গ্রেফতার হওয়া কিশোর ও সজীব নির্ধারিত স্থানে যান। নারীটির জন্য অপেক্ষা করছিলেন তারা। ওই সময় তারা নিজেদের মধ্যে আলোচনা শুরু করেন যে, কে আগে নারীটির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হবেন। ওই সময় রাবিক ও সজীব দুজনই আগে নারীটির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হতে চান। এ নিয়ে তাদের মধ্যে শুরু হয় বাকবিতণ্ডা। একপর্যায়ে গাছের ডাল দিয়ে রাকিবের মাথায় এলোপাতাড়ি আঘাত করেন সজীব।
এসপি আরো বলেন, মারধরের শিকার হয়ে রাকিব মাটিতে লুটিয়ে পড়ে অচেতন হয়ে যান। এর কিছুক্ষণ পরেই রাকিবকে ডাক দেন সজীব। কিন্তু রাকিবের কোনো সাড়া পাওয়া যাচ্ছিল না। এমন অবস্থা দেখে রাকিবের গলা চেপে ধরে মৃত্যু নিশ্চিত করেন সজীব। পরে তার লাশ ডোবায় ফেলে কচুরিপানা দিয়ে ঢেকে রেখে তারা পালিয়ে যান।
আকরামুল হোসেন বলেন, রাকিবের লাশ উদ্ধারের পর থেকেই এ ঘটনার রহস্য উদঘাটনে মাঠে নামা হয়। পরে স্থানীয়ভাবে নানারকম তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে এ হত্যার রহস্য উদঘাটন করা হয়েছে।