ঝাড়খণ্ডের ‘লেডি টারজান’ যমুনা টুডু। ছবি: সংগৃহীত

নামটা অনেকেরই আর মনে নেই হয়তো। কিন্তু ২০১৯ সালে তিনি নজর কেড়েছিলেন গোটা ভারতের। পদ্মশ্রী পুরস্কার গ্রহণ করার পর, মঞ্চে দাঁড়িয়ে গোটা দেশের মানুষকে অনুরোধ করেছিলেন অরণ্যনিধনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সামিল হওয়ার জন্য। 

ওড়িশার রায়রংপুরে জন্ম যমুনার। পরবর্তীতে বিবাহের পর তিনি চলে আসেন সিংভূমে। সেখান থেকেই শুরু হয়েছিল তার লড়াই। সেটা ১৯৯৮ সাল। তখন মাত্র ১৮ বছর বয়স যমুনার। সেদিন তার ঘুম ভেঙেছিল শাশুড়ির চিৎকার-চেঁচামিচিতে। পেছনের দরজা দিয়ে বাইরে বেরিয়ে দেখেছিলেন, রাতারাতি কারা যেন সাফ করে ফেলেছে প্রায় এক একর অরণ্য। না, এই অঞ্চল তার পরিবারের ব্যক্তিগত মালিকানাধীন নয়। তা সত্ত্বেও, তাকে এবং তার পরিবারকে সেদিন অস্থির করে তুলেছিল প্রকৃতির ওপর মানব সভ্যতার এই অত্যাচার।

এই ঘটনার পর, একক উদ্যোগেই গ্রামে অরণ্যনিধনের বিরুদ্ধে প্রচারাভিযানে নামেন যমুনা। গ্রামের আদিবাসী নারীদের একত্রিত করে গড়ে তোলেন ‘বন সুরক্ষা সমিতি’। সেদিন মাত্র ৩২ জনকে নিয়েই শুরু হয়েছিল এই ছোট্ট দল। আজ যার সদস্য সংখ্যা প্রায় ১০ হাজার। বেআইনি লগিং এবং কাঠ চোরাচালানকারীদের বিরুদ্ধেই তারা লড়াই করে যাচ্ছেন অহরহ। দা, কুড়ুল, কাস্তে, তীর-ধনুককেই তারা অস্ত্র করে নিয়েছেন মাফিয়াদের বিরুদ্ধে। প্রতিদিন রাতের বেলায় টহল দেওয়া থেকে শুরু করে, বৃক্ষরোপণ কিংবা পরিবেশ দূষণ সম্পর্কে সচেতনতা গড়ে তোলা— পূর্ব সিংভূমের সবটাই দেখাশোনা করেন ‘বন সুরক্ষা সমিতি’-র সদস্যরা।

তবে এই স্বেচ্ছাসেবী কাজের জন্য হাজারো বিপত্তির সম্মুখীন হতে হয়েছে যমুনাকে। তার প্রাণ নিয়েও টানাটানি হয়েছে একাধিকবার। মাফিয়াদের আক্রমণে রক্তাক্ত অবস্থায় বাড়ি ফিরতে হয়েছে তার স্বামীকে। 

 এমন একটি জায়গায় কাস্তে, কুড়ুল কিংবা অন্যান্য ধারালো অস্ত্র নিয়ে অরণ্যে অরণ্যে ঘুরে বেড়ানোকে প্রাথমিকভাবে খুব একটা সহজ চোখে দেখেনি প্রশাসন। তবে বিগত দুদশকে তার পরিচয় সম্পর্কে যথেষ্ট অবগত আইনের রক্ষকরাও। বদলেছে পরিস্থিতি। বর্তমানে প্রশাসনের সঙ্গে হাত মিলিয়েই কাজ করে চলেছেন ঝাড়খণ্ডের এই ‘লেডি টারজান’।  

যমুনা জানান, মানুষের সঙ্গে প্রকৃতির বন্ধুত্ব গড়ে না উঠলে প্রকৃতি ধ্বংসের এই ধ্বংসযজ্ঞ থামবে না। তাই বছর দশেক আগে ভাইফোঁটা ও রাখীবন্ধনের অভিনব রীতি প্রচলন করেন যমুনা। তার লক্ষ্য, প্রকৃতি ও মানুষের মধ্যে সেতুস্থাপন করা।