দর্পণ ডেস্ক : সরকার উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় জলভূমিকে মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে যুক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছে । এ লক্ষ্যে ১১ কিলোমিটার দীর্ঘ এলিভেটেড সড়ক নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর ফলে হাওর অঞ্চলে সার্বিক যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজীকরণের মাধ্যমে কৃষি উৎপাদন এবং উৎপাদিত কৃষিপণ্য বাজারজাত করা সহজ হবে। হাওর-সহিষ্ণু অবকাঠামো উন্নয়নপূর্বক এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে ৩ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘হাওর এলাকায় উড়াল সড়ক ও ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। প্রকল্পটি গতকাল মঙ্গলবার (২৩ নভেম্বর) অনুষ্ঠিত (জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি) একনেক সভায় অনুমোদন দেয়া হয়েছে। পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানিয়েছে, সরকার নিজস্ব অর্থায়নে সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোনা জেলার হাওরের ওপর দিয়ে ১১ কিলোমিটার উড়াল সড়ক নির্মাণে ব্যয় করবে ৩ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় অঞ্চলে পর্যটন আরও সমৃদ্ধ হবে। হাওর পরিস্থিতি সহনশীল অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে হাওর এলাকায় সামগ্রিক যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হবে, কৃষি উৎপাদন ও বিপণনে সহায়ক হবে।
স্থানীয় সরকার বিভাগের অধীনস্থ সংস্থা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ (এলজিইডি) প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে সুনামগঞ্জ জেলার ধর্মপাশা, তাহিরপুর, বিশ্বম্ভরপুর ও জামালগঞ্জ উপজেলা এবং নেত্রকোনা জেলার বারহাট্টা উপজেলা উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার আওতায় আসবে। প্রকল্পটি ২০২১-২২ অর্থবছরের এডিপিতে বরাদ্দবিহীন অননুমোদিত নতুন প্রকল্প তালিকায় অন্তর্ভুক্ত না থাকলেও প্রকল্পটির প্রক্রিয়াকরণে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সম্মতি রয়েছে ।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পের আওতায় ৯৭ দশমিক ৮৬ কিলোমিটার অল সিজন উপজেলা সড়ক এবং ২০ দশমিক ২৭ কিলোমিটার ইউনিয়ন সড়ক উন্নয়ন করা হবে। ১৬ দশমিক ৫৩ কিলোমিটার সাবমার্সিবল উপজেলা সড়ক, ২২ দশমিক ৮৬ কিলোমিটার সাবমার্সিবল ইউনিয়ন ও গ্রাম সড়ক, ১০ দশমিক ৮১ কিলোমিটার উড়াল সড়ক উন্নয়ন; এবং ৫৭টি ব্রিজ ও ১১৮টি কালভার্ট নির্মাণ করা হবে, যার মোট দৈর্ঘ্য হবে ৫ হাজার ৬৮৮ মিটার। কমিশন জানিয়েছে, সরকারের ৮ম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় গ্রাম, ইউনিয়ন সড়ক উন্নয়ন, গ্রোথ সেন্টার ও বাজার উন্নয়ন, সেতু নির্মাণ ইত্যাদি বিষয়ের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে বিধায় প্রকল্পটি ওই পরিকল্পনার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ।
এ বিষয় পরিকল্পনা কমিশনের মতামতে জানা গেছে, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে হাওর এলাকায় ভৌত অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে সারা বছর মালামাল পরিবহন, উৎপাদিত কৃষিপণ্য, মৎস্য সম্পদ ইত্যাদি দ্রুত ও সুলভে পরিবহনের সুযোগ সৃষ্টি হবে এবং গ্রামীণ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড গতিশীল হবে। অধিকন্তু, প্রকল্পটি গ্রামীণ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে দারিদ্র্য দূরীকরণে অবদান রাখবে। জানা গেছে, পানিতে তলিয়ে যাবে এমন ১৬ দশমিক ৫৩ কিলোমিটার উপজেলা ও ২২ দশমিক ৮৬ কিলোমিটার ইউনিয়ন ও গ্রাম সড়ক এবং ৫৭টি সেতু ও ১১৮টি কালভার্ট নির্মাণ করা হবে। বাংলাদেশ প্রযুক্তি ও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) প্রস্তাবিত উড়াল সড়কের সম্ভাব্যতা যাচাই করেছে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ২০২৬ সালের মধ্যে প্রস্তাবিত উড়াল সড়কে যানবাহন চলাচল সম্ভব হবে। প্রতিবছর বর্ষাকালে বিপুল পরিমাণ কৃষিজমি পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় হাওর এলাকাগুলো বিচ্ছিন্ন হওয়ার হাত থেকে রক্ষা পাবে।
প্রকল্প পরিকল্পনায় জানা গেছে, পর্যটকদের বিস্তীর্ণ হাওরের নৈসর্গিক সৌন্দর্য উপভোগের সুযোগ করে দিতে উড়াল সড়কের দুই পাশে অন্তত ৬ থেকে ৭টি দ্বিতল টাওয়ার নির্মাণ করা হবে। এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম জানিয়েছেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে হাওরের আওতাভুক্ত দুটি জেলার ৫টি উপজেলার জনগণ এর দ্বারা অর্থনৈতিক সুফল পাবে। বদলে যাবে এখানকার সামাজিক অর্থনৈতিক পরিবেশ।

News Editor : Ganash Chanro Howlader. Office: 38-42/2 Distillery Road, 1st floor, Gandaria, Dhaka-1204.