দর্পণ ডেস্ক : দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের স্বপ্নের পায়রা সেতু যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হয়েছে। আজ রোববার (২৪ অক্টোবর) সকাল ১১টায় সেতু উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় সরকার প্রধান বলেন, যোগাযোগ ব্যবস্থার ক্রমাগত উন্নতির ফলে দেশ অনেক এগিয়ে যাবে। বাংলাদেশকে আর কেউ পিছিয়ে রাখতে পারবে না। বিশেষ করে অবহেলিত দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের জীবনমান আরও সমৃদ্ধ হবে। পায়রা সেতুর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে গণভবন থেকেই যুক্ত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। সেতুটি উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ৫০ লাখ মানুষের স্বপ্নের বাস্তবায়িত হলো। বরিশাল-পটুয়াখালী-কুয়াকাটা মহাসড়কের লেবুখালী এলাকায় নির্মিত এ সেতুটি চার লেনের। আজ রোববার থেকেই পটুয়াখালীর পায়রা নদীর ওপর নির্মিত পায়রা সেতুর ওপর দিয়ে যান চলাচল শুরু হয়। সেতু প্রকল্প অফিস সূত্র জানায়, ঢাকা-বরিশাল-পটুয়াখালী-কুয়াকাটা মহাসড়কের পটুয়াখালীর দুমকী উপজেলার লেবুখালী এলাকার পায়রা নদীর ওপর নির্মাণ করা হয়েছে পায়রা সেতু। ৪ লেনবিশিষ্ট সেতুটি নির্মিত হয়েছে এক্সট্রাডোজড কেবল স্টেইড প্রযুক্তিতে। ১ হাজার ৪৭০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১৯ দশমিক ৭৬ মিটার প্রস্থের সেতুটি কেবল দিয়ে দু’পাশে সংযুক্ত থাকবে। নদীর জলতল থেকে সেতুটি ১৮ দশমিক ৩০ মিটার উঁচু হবে। উভয় পাড়ে সাত কিলোমিটারজুড়ে নির্মাণ করা হয়েছে সংযোগ সড়ক। এ সেতুতে ১৩০ মিটার গভীর পাইল বসানো হয়েছে। নদীর মাঝখানে মাত্র একটি পিলার ব্যবহার করা হয়েছে। এতে নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ ঠিক থাকবে।
এ সেতুতে ‘ব্রিজ হেলথ মনিটর’ (সেতুর স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণ) স্থাপিত হচ্ছে। ফলে বজ্রপাত ও ভূমিকম্পসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিংবা অতিরিক্ত মালামাল বোঝাই যানবাহন চলাচলে সেতুর ভাইব্রেশন সিস্টেমে কোনো ক্ষতির আশঙ্কা থাকলে সেই বিষয়ে সংকেত দেবে। এছাড়া সেতুর পিলারের পাশে নিরাপত্তা পিলার স্থাপন করা হয়েছে। এতে কোনো কিছুর ধাক্কায় সেতুর ক্ষতি ঠেকানো সম্ভব হবে, বাড়বে সেতুর স্থায়িত্ব। আলাদা সাবস্টেশনের মাধ্যমে সেতুতে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে, যাতে আলোকিত হবে এটি। থাকছে সৌরবিদ্যুতের ব্যবস্থাও।
প্রকল্প কর্মকর্তারা জানান, সরকার ২০১২ সালের মে মাসে সেতু নির্মাণ প্রকল্পের অনুমোদন দেয়। কুয়েত ফান্ড ফর আরব ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট ও ওপেক ফান্ড ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টের যৌথ অর্থায়নে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান লংজিয়ান রোড অ্যান্ড ব্রিজ কনস্ট্রাকশন সেতুটি নির্মাণে কাজ করছে। সেতুটি নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ১ হাজার ১১৮ কোটি টাকা।
পায়রা সেতু উদ্বোধন প্রসঙ্গে প্রকল্প পরিচালক আবদুল হালিম জানান, মূল সেতু, সংযোগ সড়কের নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। পদ্মা সেতু নির্মাণ শেষ হলে ঢাকা থেকে কুয়াকাটা পর্যন্ত নিরবচ্ছিন্ন সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হবে।
সেতুটি উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ৫০ লাখ মানুষের স্বপ্ন বাস্তবায়িত হলো। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ১০টি মেগা উন্নয়ন প্রকল্পের একটি হচ্ছে পায়রা সেতু। দফায় দফায় সময় ও ব্যয় বাড়িয়ে পায়রা সেতুর নির্মাণকাজ পুরোপুরি শেষ করতে ৯ বছরের বেশি সময় লেগেছে। সেতুটি চালু করার মধ্য দিয়ে বরিশাল থেকে সড়কপথে পর্যটনকেন্দ্র পটুয়াখালীর কুয়াকাটা পর্যন্ত নিরবচ্ছিন্ন যাতায়াতের পথ খুলে যাবে। আর পদ্মা সেতু খুলে দিলে ঢাকা থেকে দক্ষিণাঞ্চলে যাতায়াতও হবে নিরবচ্ছিন্ন। যোগাযোগব্যবস্থার এমন উন্নতির ফলে দক্ষিণাঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্যেও গতি আসবে বলে ওই অঞ্চলের মানুষ আশা করছে। আধুনিক প্রযুক্তি ও নান্দনিক নকশার পায়রা সেতু এরই মধ্যে দক্ষিণাঞ্চলের অন্যতম দর্শনীয় স্থানে পরিণত হয়েছে। প্রকল্প পরিচালক আবদুল হালিম বলেন, পরামর্শক নিয়োগে দেরি, সেতুর নকশা দুই দফা পরিবর্তন এবং দরপত্রের কাজে দেরি হওয়ায় কাজ শুরু হয় ২০১৬ সালে। এ ছাড়া করোনাও একটা কারণ। তবে ব্যয় বাড়ার অন্যতম কারণ হলো নির্মাণসামগ্রীর দাম বেড়ে যাওয়া। পায়রা সেতু প্রকল্পের কর্মকর্তারা জানান, ঢাকা-বরিশাল-পটুয়াখালী-কুয়াকাটা মহাসড়কের পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলার লেবুখালী এলাকার পায়রা নদের ওপর নির্মাণ করা হয়েছে চার লেনের পায়রা সেতু।
টোলহার : এই সেতুতে রিকশা, ঠেলাগাড়ি, ভ্যান, সাইকেল থেকে শুরু করে বাস, ট্রাক ও কনটেইনারবাহী লরিও চলবে। যানভেদে নির্ধারণ করা হয়েছে টোলের হার। সবচেয়ে বেশি টোল দিতে হবে কনটেইনারবাহী লরিকে, ৯৪০ টাকা। ভারী ট্রাক ৭৫০ টাকা, মাঝারি ট্রাক ৩৭৫, বড় বাস ৩৪০, ছোট ট্রাক ২৮০, ট্রাক্টর ২২৫, মিনিবাস ১৯০, মাইক্রোবাস ১৫০, পিকআপ ১৫০, প্রাইভেট কার ৯৫, অটোরিকশা ৪০, মোটরসাইকেল ২০ টাকা। রিকশা, ভ্যান, সাইকেল, ঠেলাগাড়ির জন্য টোল দিতে হবে ১০ টাকা করে। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের টোল ও এক্সেল শাখা থেকে টোলের হার নির্ধারণ করা হয়েছে।