দর্পণ ডেস্ক : আগামী বছরের এসএসসি পরীক্ষা জুনে এবং এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা জুলাই-আগস্টে আয়োজনের পরিকল্পনার কথা জানালেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এমপি।

‘কাস্টমাইজড’ (সুনির্দিষ্ট) সিলেবাসের ওপর এসব শিক্ষার্থীর পরীক্ষা নেয়া হবে। কতটুকু পড়তে পেরেছে আর কতটুকু পড়ানো সম্ভব হবে-সেই বাস্তবতার আলোকে হচ্ছে এই সিলেবাস।

জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে অধ্যাদেশ জারির পর এ বছরের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হবে।

এ ছাড়া দুই পরীক্ষার শিক্ষার্থীদের প্রস্তুত করতে ফেব্রুয়ারির দিকে সীমিত পরিসরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হতে পারে। সে ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি মেনে তাদের শ্রেণি কার্যক্রম চলবে।

মঙ্গলবার এক যৌথ ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য প্রকাশ করেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এমপি। এতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন এমপিও বক্তব্য দেন।

শিক্ষামন্ত্রী এতে আরও জানান, করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও সরকার যথাসময়ে ছাত্রছাত্রীদের হাতে বিনা মূল্যে পাঠ্যবই তুলে দেয়ার কার্যক্রম শুরু করছে। ৩১ ডিসেম্বর ভার্চুয়াল এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই কার্যক্রম উদ্বোধন করবেন।

পরদিন ছাত্রছাত্রীদের হাতে পর্যায়ক্রমে বই তুলে দেয়া হবে। প্রাথমিকের সব বই তিন দিনে আর মাধ্যমিকের বই ১২ দিনে বিতরণ করা হবে। তিনি আরও জানান, মাধ্যমিকে শিক্ষার্থীদের রোল নম্বর দেয়ার পরিবর্তে অভিন্ন পরিচিতি নম্বর দেয়ার কাজ চলছে।

এই নম্বরই উচ্চ মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত থাকবে। জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষা না হওয়ায় এবার ট্রান্সক্রিপ্ট পাওয়া যাবে না, শুধু সনদ দেয়া হবে। এমপিও নীতিমালা ও শিক্ষা আইন তৈরির কাজ শেষ পর্যায়ে আছে।

জানুয়ারিতে এমপিও নীতিমালা প্রকাশের লক্ষ্য আছে। আগামী ২-৩ মাসের মধ্যে শিক্ষা আইন চূড়ান্ত করে মন্ত্রিসভায় পাঠানো হবে। অনার্স-মাস্টার্স কলেজের শিক্ষক বা ডিগ্রি স্তরের তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির বিষয়ে আরও চিন্তা করা দরকার।

তবে আমরা শিক্ষায় গুণগত পরিবর্তনের কাজ করছি। সে জন্য এখনই অনেক বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া যাবে না। সারা দেশের বিভিন্ন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রায় ৮০ হাজার পদ শূন্য আছে। এসব পদেও নিয়োগ কার্যক্রম শুরু হবে।

সংবাদ সম্মেলনে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন, কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগের সচিব আমিনুল ইসলাম খান, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব হাসিবুল আলম, ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক নেহাল আহমেদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

রোল নম্বরের পরিবর্তে আইডি নম্বর : শিক্ষামন্ত্রী বলেন, রোল নম্বর নিয়ে একটা সমস্যা হয়। প্রত্যেক শ্রেণিতে যে রোল নম্বর থাকে, তার কারণে একটা অনভিপ্রেত প্রতিযোগিতা হয়। শিক্ষার্থীদের মধ্যে সহযোগিতার যে মনোভাব থাকা দরকার, অনেক সময় সেটির অভাব ঘটে। তাই আমরা ২০২১ শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থীদের শ্রেণির রোল নম্বরের পরিবর্তে আইডি নম্বর দেয়ার চেষ্টা করছি। এতে পুরনো রোল নম্বর প্রথার বিলুপ্তি হবে এবং অনভিপ্রেত প্রতিযোগিতা বন্ধ হয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটা সৎ প্রতিযোগিতার মনোভাব তৈরি হবে।

শিক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, প্রাথমিক থেকে সব শিক্ষার্থীর ইউনিক আইডি দেয়া হবে। পুরো শিক্ষাজীবনে সে ওই আইডি নম্বর নিয়ে থাকবে, সে ঝরে পড়ছে কি না, তাকে ‘ট্র্যাক’ করা যাবে। পরে নিজের বক্তব্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেনও বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তবে আগামী বছর নতুন ক্লাসে শিক্ষার্থীরা আগের নম্বরই বহন করবে বলে জানান।

লটারিতে ভর্তি ও অতিরিক্ত ফি : মন্ত্রী বলেন, এবার লটারির মাধ্যমে ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে। আমরা আশা করছি, তাতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে কিছুটা হলেও হয়তো সমতা আসবে। কেননা, কিছু স্কুলে খুব ভালো ফল করে তেমন শিক্ষার্থীরা যায়, কিছু স্কুল থাকে একেবারে ভালো ফল করছে না তেমন শিক্ষার্থীরা যায়। এই যে বৈষম্য তৈরি হয়, এটা তারা স্কুল-কলেজের পুরো সময়টা বয়ে নিয়ে যায়। লটারির মাধ্যমে এই বৈষম্যের জায়গাটা অনেকখানি নিরসন হবে এবং কিছুটা হলেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সমতা আসবে।

এ সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ফি আদায়ের ইস্যুতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যদি অনৈতিক বা অন্যায্য আচরণ করে, তাহলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে। যদিও মন্ত্রণালয় এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের ফি বেঁধে দিতে পারে না। পরে তার আমন্ত্রণে বক্তৃতায় মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. এসএম গোলাম ফারুক বলেন, কোন খাতে ফি নেয়া যাবে না, সেই নির্দেশনা স্কুলে পাঠানো হয়েছে। সেটার আলোকে তারা পদক্ষেপ নেবেন।