দর্পণ ডেস্ক : বর্তমানে দেশে যে পাট ও পাটজাত পণ্য উৎপাদিত হয় তার শতকরা ৯৫ শতাংশই বেসরকারি পাটকলে উৎপাদিত হয়। সরকারি খাতটি অত্যন্ত সংকুচিত হয়ে গেছে। যা প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছিল না। সরকার বিজেএমসির পরিচালিত রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলোর আধুনিকায়ন এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে একে আরো সক্ষম করে গড়ে তুলতে উৎপাদন বন্ধ করে শ্রমিকদের এককালীন পাওনা পরিশোধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এজন্য বাংলাদেশ জুট মিলস কর্পোরেশন’র (বিজেএমসি) ২৫টি রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলে শ্রমিকদের প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকার পাওনা পরিশোধ করবে সরকার। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে গণভবনে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলসমূহ নিয়ে অনুষ্ঠিত এক গুরুত্বপূর্ণ সভায় এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এগুলোকে আবার প্রতিযোগিতায় কিভাবে আনা যায় এবং কিভাবে শক্তিশালী করা যায় সে বিবেচনায় এখন পাটকলগুলো বন্ধ করার ঘোষণা করা হয়েছে।
বিজেএমসির পরিচালিত রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলোর আধুনিকায়ন এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে একে আরও সক্ষম করে গড়ে তুলতে উৎপাদন বন্ধ করে শ্রমিকদের এককালীন পাওনা পরিশোধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
এসব পাটকল বন্ধ থাকলে যে পরিমাণ ক্ষতি হয় চালু থাকলে তার চেয়ে বেশি পরিমাণ ক্ষতি হয়। কাজেই এসব পাটকলের সঙ্গে জড়িত শ্রমিক ভাইদের জীবন-জীবিকার নিশ্চয়তার জন্য সরকার তাদেরকে ২০১৫ সালের জাতীয় মজুরি কাঠামো অনুযায়ী সম্পূর্ণ টাকা পরিশোধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী এই নির্দেশনাও দিয়েছেন যে- পাটকলগুলি বন্ধ আছে সেগুলো কিভাবে চালু করা যায় এবং সেগুলো যাতে বর্তমান এবং আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে পারে। এ সংক্রান্ত একটি কর্মপন্থতা প্রস্তুত করে অতি দ্রুত তার নিকট নিয়ে আসার জন্যও সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলো গত ৪৮ বছরের মধ্যে শুধু চার বছর লাভের মুখ দেখেছে এবং ৪৪ বছর ধরে অব্যাহতভাবে মোট ১০ হাজার ৬৭৪ কোটি টাকা লোকসান দিয়েছে। লোকসান হলে কর্মচারীদের বেতন-ভাতার জন্য সরকারের অর্থের ওপর নির্ভর করতে হোত বলে প্রতি মাসেই শ্রমিক-কর্মচারীদের এ সংক্রান্ত সমস্যা চলছিল। পাটকল শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধের লক্ষ্যে আগামী তিন দিনের মধ্যে তাদের তালিকা প্রস্তুত করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
২০১৫ সালের সর্বশেষ মজুরি কাঠামো অনুযায়ী পাটকলসমূহের ২৫ হাজার শ্রমিককে তাদের অবসরকালীন সুবিধাসহ পাওনা পরিশোধ বাবদ সরকারের ৫০০০ কোটি টাকা ব্যয় হবে। পাটখাতের প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ নজর রয়েছে এবং প্রধানমন্ত্রীর দর্শন হচ্ছে পাটকল শ্রমিকদের বাঁচানো। এরই প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী ইতোপূর্বে পাটের জন্মরহস্য উন্মোচনের জন্য গবেষণা খাতে অর্থায়ন করেছিলেন এবং পাটের বহুমুখী ব্যবহারের ওপর বিশেষ নজর দেন। প্রধানমন্ত্রী বন্ধের সিদ্ধান্ত দেয়ার সময় আবেগআপ্লুত হয়ে পড়েন।
পাওনা বুঝিয়ে দেয়ার ক্ষেত্রে যেসব শ্রমিক অনধিক দুই লক্ষ টাকা প্রাপ্য তাদেরকে পুরো টাকা এককালীন নগদ পরিশোধ করা হবে। এছাড়া দুই লক্ষ টাকার বেশি পাওনাদার শ্রমিকরা গড়ে ১৩.৮৬ লাখ টাকা এবং সর্বোচ্চ ৫৪ লাখ টাকা পাবেন। পাওনা টাকার মধ্যে ৫০ শতাংশ এককালীন নগদ এবং অবশিষ্ট ৫০ শতাংশ শ্রমিকদের ভবিষ্যৎ জীবন-জীবিকা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র আকারে পরিশোধ করা হবে। ১১ শতাংশ সুদে প্রত্যেক শ্রমিক প্রতি তিন মাসে সর্বনিম্ন ১৯ হাজার ৩২০ টাকা এবং সর্বোচ্চ ৭৪ হাজার ৫২০ টাকা পর্যন্ত পাবেন।
এছাড়া অনেক আগে অবসরে যাওয়া ৮ হাজার ৯৫৬ জন পাটকল শ্রমিকের অবসর ভাতা পরিশোধ করতেও সরকারের ১০২০ কোটি টাকা খরচ হবে ।
অবসর ভোগীদের টাকা আগামী সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যেই নিজ নিজ ব্যাংক একাউন্টে চলে যাবে। এখানে কাউকে চাকরিচ্যুত করা হচ্ছে না এবং পরবর্তীতে এ কারখানাগুলো পুনরায় চালু হলে নিয়োগের ক্ষেত্রে বর্তমান শ্রমিকদের অগ্রাধিকার দেয়া হবে।
প্রধানমন্ত্রীর এই সিদ্ধান্তের ফলে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের পক্ষ থেকে শ্রমিকদের স্বার্থ বাঁচানোর জন্য তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয়।
পাটকল শ্রমিকদের পাওনা টাকা সরাসরি তাদের ব্যাংক হিসাবে পাঠানো হবে এবং কোন পাটকল অথবা অন্য কোনো মধ্যস্বত্বভোগী এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকবে না।