অনলাইন ডেস্ক : ইয়াবার রাজধানী টেকনাফ হলে, মাদকসেবীদের রাজধানী হবে পৌর শহরটির চৌরাস্তার বাস ও সিএনজি স্টেশন এলাকা। দিনের আলোয় বাস স্টেশনের পেছনে কাইয়ুকখালীতে (কেকেপাড়া) ইয়াবা সেবনের আসর বসাতেন পরিবহন শ্রমিকরা। বাসের সিটের নিচে বা বিশেষ কায়দায় এখান থেকেই ইয়াবার চালান পাঠানো হয় ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্নস্থানে। এই কেকেপাড়ার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ছিলেন র‌্যাবের সঙ্গে কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত একরামুল হক। যে ইয়াবা ব্যবসার অভিযোগে একরামুল হককে করুণ পরিণতি ভোগ করতে হয়েছে, তিনিই ইয়াবা সেবনের কয়েকটি আস্তানা ধ্বংস করেন। অগ্নিসংযোগ করেন রোহিঙ্গাদের কাছে ভাড়া দেওয়া পাড়ার কুঁড়েঘর। অগ্নিসংযোগের পর ৫ সদস্যের রোহিঙ্গা পরিবারকে টেকনাফ নয়াপাড়ার নিবন্ধিত ক্যাম্পের সামনে থাকা অস্থায়ী তাঁবুতে পাঠিয়েও দেন একরামুল হক।
শ্যামলী পরিবহনের কাউন্টারের পাশের গলিতে কিছু দূর গিয়ে একটি পুকুরপারে ওই খুপড়িঘরের অবস্থান। সরেজমিন দেখা গেছে, ওই ঘটনার পর বাড়ির মালিক আবদুস মাবুদের উদ্যোগে ঘরের চালে ত্রিপল টানানো হয়। তবে এখনো অগ্নিসংযোগের ক্ষত বহন করছে খুপড়িঘরের পেছনে থাকা লম্বা একটি গাছ। সেই সময় আগুনে জ্বলে যায় গাছটি।

স্থানীয়রা বলছেন, নিজ ওয়ার্ডে অন্তত ইয়াবা সেবনের আড্ডাস্থল বন্ধ করতে ভোটের আগে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন একরাম। কিন্তু ইয়াবা ব্যবসায়ীরা ছিলেন তাদের চেয়ে অনেক প্রভাবশালী। অর্থবিত্তে শক্তিশালী। আর তাদের প্রতি ছিল স্থানীয় সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদির আশীর্বাদ। এ কারণে চোখের সামনে ইয়াবা সেবন হলেও নিশ্চুপ থাকতেন একরাম। এমনকি নাফ হোটেলসংলগ্ন একরামের বাড়ির প্রধান ফটক নড়বড়ে থাকায় প্রায়ই ইয়াবাসেবীরা ওই এলাকায় ইয়াবা সেবনের আড্ডা বসাতেন।
সারাদেশে ইয়াবার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার পর যখন তালিকাভুক্ত ও তালিকার বাইরে থাকা চিহ্নিত ইয়াবা ব্যবসায়ী এবং তাদের সহযোগীরা গা-ঢাকা দেন, সেই মুহূর্তে মাদকের আড্ডাস্থল গুঁড়িয়ে দেন কাউন্সিলর একরাম।
একরামুল হকের স্ত্রী আয়েশা বেগম আমাদের সময়কে বলেন, যে মানুষটি দুদিন আগেও ইয়াবার আস্তানা পুড়িয়ে দিয়েছিলেন, তিনি কীভাবে ইয়াবা ব্যবসা করেন। যার সঙ্গে গত দেড় মাস ধরে র‌্যাব ৭-এর কর্মকর্তারা নিয়মিত ওঠবস করেন, হঠাৎ করে র‌্যাবের হাতে তাকে মরতে হলো কেন? আয়েশার প্রশ্নের অনেক আগে একটি গণমাধ্যমে খবর এসেছেÑ একরামুল হকের চট্টগ্রামে বাড়ি ও ঢাকায় ফ্ল্যাট আছে। অনেক টাকা, এগুলো আপনারাই বের করুন।
এদিকে একরামুল হকের মৃত্যুর পর টেকনাফ পৌর শহরের বিভিন্ন স্থানে ব্যবসায়ী, যুবলীগসহ নানা সংগঠনের ব্যানারে একরামকে হত্যার অভিযোগ এনে জড়িতদের বিচার দাবি করা হয়। তবে প্রাণের ভয়ে অনেকে ঘরছাড়া, আবার যারা আছেন তারাও এ বিষয়ে মুখ খুলতে চাইছেন না।