পুনশ্চ প্যারিস

পর্ব ::৪৪
[পূর্বে প্রকাশিতের পর]

৫. ১৯৩০ : রবীন্দ্রনাথ ও প্যারিস

একথা এখন সকলেরই জানা যে, রবীন্দ্রনাথই ছিলেন এই উপমহাদেশের চিত্রকলার জগতে প্রথম ‘আধুনিক ধারার’ চিত্রশিল্পী। আর প্যারিসেই তার চিত্রকর্মের প্রথম আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়েছিলো ১৯৩০ সালের মে মাসে। এর আগের এক দশকে রবীন্দ্রনাথ আধুনিক চিত্রকলা নিয়ে প্রচুর পড়াশোনা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছিলেন। শুধু নিজেই যে এক্সপেরিমেন্ট করেছিলেন তা-ই নয়, ১৯২২ সালে (জার্মানী থেকে প্রত্যাবর্তনের এক বছর বাদে) কলকাতায় ইন্ডিয়ান সোসাইটি অব ওরিয়েন্টাল আর্ট (ISOA)-এর উদ্যোগে জার্মানির অত্যাধুনিক Bauhaus ধারার চিত্রকর্মের এক অভিনব প্রদর্শনীরও আয়োজন হয় তারই উদ্যোগে (যদিও এ নিয়ে প্রশান্ত কুমার পাল evidence-র দুর্বলতার প্রশ্ন তুলেছেন)। ‘বাউ হাউস’ শব্দটি জার্মান-এর আক্ষরিক অর্থ ‘বিল্ডিং হাউস’; অন্যভাবে বললে ‘স্থাপত্য-ভবন’। এই আন্দোলনের সাথে পল ক্লী Klee বা ক্লে), কান্ডিনস্কি, রুশ ‘কনস্ট্রাকটিভিস্ট’ আর্টিস্ট লিসিৎস্কি (Lissitzky),De Stijl (মানে ‘স্টাইল’) আন্দোলনের ডাচ পেইন্টার  Thea van Doesburg, অস্ট্রিয়ার ককশকা (Osker Kokoschka) প্রমুখ জড়িত ছিলেন। ক্লী-কান্ডিনস্কির চিত্রকর্ম রবীন্দ্রনাথের উৎসাহে (এবং প্রত্যক্ষ প্ররোচনায়) প্রদর্শিত হলো ১৯২২ সালে ঔপনিবেশিক ভারতবর্ষে কলকাতায়- ভাবা যায়? আজ যদি ঢাকায় কেউ ফ্রাঙ্ক স্টেলা (frank stella), রিচার্ড ডিবেনকর্ন (Diebonkorn), পিটার ব্লেইক (Blake), গেরহার্ড রিখটার (Richter), ডেভিড হকনি (Hockney), হাওয়ার্ড হচকিন (Hodgkin), বাংক্‌সি (Banksy), ইয়োশিটমো নারা (Yoshitomo Nara), কুসামা (Yayai Kusama), জুলিয়ান ওপি (opie), বারবারা রে (Rae) প্রমুখের চিত্রকর্ম নিয়ে একটি প্রদর্শনীর আয়োজন করেন, তাহলে রবীন্দ্রনাথের সেদিনের আয়োজনের তাৎপর্য কিছুটা হলেও বোঝা যেতে পারে।

রবীন্দ্রনাথের মধ্যে আধুনিক চিত্রকলা নিয়ে এই তাগিদ দেখা দিয়েছিল কেন? মানুষের মধ্যকার নানা সত্ত্বার মতো রবীন্দ্রনাথের মধ্যেও নানা রবীন্দ্রনাথের উপস্থিতি ছিল। থাকাটাই স্বাভাবিক। সেখানে যেমন গীতাঞ্জলির জীবনদেবতা ছিল; লালনের মনের মানুষ ছিল; তেমনি ছিল পদ্মাপাড়ের বৃত্তান্ত, তার ছোট ছোট দুঃখ-কথা। সেভাবেই ছিল স্বদেশি যুগের গোরা; ঘরে-বাইরের বিমলা-নিখিলেশ-সন্দ্বীপ। এভাবেই রবীন্দ্রনাথ জাতীয়তাবাদের পক্ষে এক সময় অবস্থান নিলেও পরে সেই অবস্থান থেকে সরে এসেছেন ‘ন্যাশনালিজম’ প্রবন্ধমালায়। Nation-র Mythology নির্মাণ করতে চাননি তিনি। যেটা বেঙ্গল স্কুল অব আর্ট সচেতন বা অসচেতনভাবে করে চলেছিল। যে দৃষ্টিকোণ থেকে তিনি গান্ধীর চরকা ও অসহযোগ আন্দোলনকে ‘ক্রিটিক’ করেছিলেন, সেই একই দৃষ্টিভঙ্গি থেকে তিনি বেঙ্গল স্কুলের Neo-traditionalism কে আঘাত করলেন সর্বাধুনিক ইউরোপীয় চিত্রকলার আফ্রিকা-প্রভাবিত প্রিমিটিভিস্ট ও এক্সপ্রেশনিস্ট আর্টের প্রদর্শনীর আয়োজন করে। কেবল তার নিজের দেশের ও কাছের ভুবনের চিত্রশিল্পীদের মনোযোগ আকর্ষণ করার জন্য। তাতেও যখন কাজ হলো না, তখন রং-তুলি ধরলেন তিনি নিজেই। ১৯৩০ সালে ফ্রান্সে তার চিত্র-প্রদর্শনীতে এসে কবি ও শিল্প-সমালোচক পল ভালেরী রবীন্দ্রনাথের এক্সপ্রেশনিস্ট চিত্রকলা দেখে হতবাক হয়েছিলেন। জার্মানিতেও যেসব শহরে প্রদর্শনী হয়েছে, সেখানেই প্রতিক্রিয়া স্বাভাবিক কৌতূহলের গণ্ডি ছাড়িয়ে যারপরনাই বিস্ময়ে পরিণত হয়েছে। এই ভূভাগের আধুনিক ও সাম্প্রতিক চিত্রকলার জনক আসলে আর কেউ নন- রবীন্দ্রনাথ স্বয়ং। আধুনিক চিত্রকলার চারিত্র নিয়ে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাথে রবীন্দ্রনাথের একাধিকবার তর্ক-বিতর্ক হয়েছিল। যেমন, প্রশান্ত কুমার পাল তার রবিজীবনীর ৮ম খণ্ডে জানিয়েছেন যে, কবি শিল্প-কলায় সহজ-সরল রিয়ালিস্ট ধারার অনুকৃতিকে পছন্দ করতেন না। তার বরং আগ্রহ ছিল আকৃতি ও গঠনের ভাঙচুর, অর্থাৎ ফর্মের ডি-কনস্ট্রাকশনের প্রতি। যেটি সেজান-পরবর্তী আধুনিক চিত্রকলার একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য। রবীন্দ্রনাথের বক্তব্যটি গুরুদাস মল্লিক লিপিবদ্ধ করেছেন ও প্রশান্ত কুমার পাল তা হুবহু তুলে ধরেছেন। শিল্পকলা বিষয়ে অবনীন্দ্রনাথ ও রবীন্দ্রনাথের আলোচনায় কবি বললেন : ‘আর্ট অসীমের প্রকাশ; রূপ অবশ্যই দরকার। কিন্তু সেইটিই যেন শেষ লক্ষ্য না হয়। নিরাকারের আভাস দেবে সে, তার ব্যতিক্রম প্রতারণা মাত্র।’- ‘Was art an expression,- accurate or artistic,- only of pleasure or pain, of an happening, historical or otherwise? No, it should ever express the infinite, revealed through either of these elements. A realistic portrayal of these could be called skill or decoration, but not art.’ এর থেকেই বোঝা যায় যে, অবনীন্দ্রনাথ নন্দলালের সনাতনী রিপ্রেজেন্টেশনাল আর্ট-কেন্দ্রিক শিল্প-চিন্তার বিপরীতে ১৯২২ সালেই রবীন্দ্রনাথ চিত্রকলা নিয়ে কতটা প্রাগ্রসর চিন্তা-ভাবনা করতেন। আবারও বলছি, রবীন্দ্রনাথই এই ভূভাগ থেকে উত্থিত প্রথম সচেতনভাবে ইউরোপীয় অর্থে ‘আধুনিক’ ধারার চিত্রকর। প্রিমিটিভ ও এক্সপ্রেশনিস্ট আর্টের অন্যতম পথিকৃৎ। ১৯৮২ সালে টেট গ্যালারিতে যে ৬ জন উপমহাদেশের চিত্রশিল্পী নিয়ে পুরোধা ব্রিটিশ চিত্রকর ও শিল্পী ভূপেন খাকারের ঘনিষ্ঠ বন্ধু হাওয়ার্ড হচকিন চিত্র-প্রদর্শনীর আয়োজন করেছিলেন তার মধ্যে প্রথমেই এসেছিল রবীন্দ্রনাথের নাম। সেটা তার কবিখ্যাতির জন্যে নয়, প্রধানত তার মৌলিক চিত্রকর্মের স্বীকৃতিদানের তাগিদে।

রবীন্দ্রনাথের চিত্রকলা নিয়ে এখানে নতুন করে কিছু যোগ করার নেই। এ নিয়ে নানা গুণীজন ইতোপূর্বে আলোচনা করেছেন। অবনীন্দ্রনাথ, নন্দলাল, বিনোদবিহারী, রামকিংকর, যামিনী রায় এরা রবীন্দ্রনাথের ছবি নিয়ে লিখেছেন, মন্তব্য করেছেন- তার কোনোটি হয়তো চিত্রকর রবীন্দ্রনাথের কোনো বিশেষ দিক তুলে ধরে, কোনোটি হয়তো তর্কসাপেক্ষ পর্যালোচনা। চলচ্চিত্রকার ও চিত্রশিল্পী সত্যজিৎ রায় যেমন আগেই বলে গেছেন রবীন্দ্রনাথের ছবির মৌলিকত্বের কথা। তিনি বলেছেন, ‘It is important to stress that he was uninfluenced by any painter, eastern or western.’ এটা কিছুটা বাড়িয়েই বলা। কেননা, আমরা একটু পরেই দেখব যে প্রভাব এসে পড়েছিল নানা সূত্র থেকেই।

আমি বিশেষ করে উল্লেখ করব গণেশ পাইন-এর ‘শিল্পীর দৃষ্টিতে রবীন্দ্র-চিত্রকলা’, সত্যজিৎ চৌধুরীর ‘চিত্রকর রবীন্দ্রনাথ’, কাইয়ুম চৌধুরীর ‘রবিতীর্থে’, সোমেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘চিত্রী রবীন্দ্রনাথ :অনাগত কালের আগামবার্তা’, আবুল মনসুরের ‘রবীন্দ্রনাথ-চিত্রশিল্পী-কলাভবন পরম্পরার সম্পর্কসূত্র’, আলী আনোয়ারের ‘রবীন্দ্রনাথের চিত্রমালার ল্যাবিরিন্‌থ’, আনা ইসলামের ‘প্যারিসে রবীন্দ্রনাথ’, সুশোভন অধিকারীর ‘রবীন্দ্রনাথ ও বাউহাউস :কিছু চেনা, কিছু অচেনা খবর’ শীর্ষক প্রবন্ধ এবং অতি-আবশ্যিকভাবে কেতকী কুশারী ডাইসন ও সুশোভন অধিকারীর ‘রঙের রবীন্দ্রনাথ’-এর মতো মৌলিক গবেষণা-গ্রন্থ। শেষোক্ত গ্রন্থের বিতর্কিত মন্তব্য (‘লাল রংটা রবীন্দ্রনাথের চোখে ঠিকমতো ধরা দিত না’) সত্ত্বেও এর উল্লেখ করেছি, কেননা এটি তথ্যে ঠাসা একটি গবেষণা কাজ। আমি শুধু বর্তমান আলোচনার মূল বিষয়বস্তু- আধুনিক ইউরোপীয় চিত্রকলার ওপরে প্রিমিটিভ ও ট্রাইবাল আর্টের প্রভাব-এর সঙ্গে সংগতি রেখে রবীন্দ্রনাথের চিত্রকলায় প্রিমিটিভ ও ট্রাইবাল আর্টের প্রতিফলন নিয়ে কিছু মন্তব্য করব। প্যারিসের কুই ব্রানলি মিউজিয়ামে গিয়ে রবীন্দ্রনাথের চিত্রকলার এই অজানা দিকটির প্রতি আমি সজাগ হয়ে উঠি।

রবীন্দ্রনাথ যে জার্মান শিল্পী এমিল নোল্ডে (Nolde)-এর এক্সপ্রেশনিস্ট চিত্রকলায় বিমোহিত হয়েছিলেন এবং তার অনেক চিত্রকর্মের মধ্যে নোল্ডের প্রভাব অনুভব করা যায়- এটি নানাজনের সাক্ষ্য থেকেই বেরিয়ে এসেছে। কিন্তু নোল্ডে নিজে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন কার থেকে বা কোন উৎস থেকে? এ ক্ষেত্রে প্রথমেই যেটা নজরে পড়ে তা হলো নোল্ডে (বা নোল্‌দে)-এর ছবিতে মুখ ও মুখোশের প্রবল উপস্থিতি, যা রবীন্দ্রনাথের চিত্রকর্মেও দেখা যায়। এ নিয়ে ডাইসন-অধিকারী তাদের বইতে লিখেছেন :’নোল্‌দের ছবির সঙ্গে [রবীন্দ্রনাথের] যে কিছু পরিচয় ছিল- অন্তত বইপত্রে প্রতিলিপির মাধ্যমে- তা সন্দেহাতীত। জার্মানিতে ভ্রমণকালে [রবীন্দ্রনাথ] কিছু মূল ছবি দেখেছিলেন এমন অনুমান করাও অসংগত নয়। ফর্মে ও থিমে নোল্‌দের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের এমন কিছু চমকপ্রদ মিল লক্ষ্য করা যায়, যা থেকে মনে হয় নোল্‌দের কিছু ছবি তিনি রীতিমতো স্টাডি করেছিলেন।’ কিন্তু নোল্‌দে কার দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন? ডাইসন-অধিকারী ইঙ্গিত করেছেন প্রশান্ত মহাসাগরের দ্বীপপুঞ্জের আদিবাসীদের প্রতি। সেটা যেমন মুখের (বা Head-স্টাডি করার) ক্ষেত্রে, তেমনি মুখের সম্প্রসারণে মুখোশের (বা Mask-স্টাডি করার) ক্ষেত্রে। পুরো উদ্ৃব্দতিটি এখানে তুলে দেওয়া প্রাসঙ্গিক হবে :

“মুখের প্রসঙ্গে আরও দেখতে পাই, নোল্‌দের প্রশান্ত মহাসাগরের দ্বীপপুঞ্জে ভ্রমণ থেকে এমন কতগুলি মনোক্রোমধর্মী স্কেচ জন্ম নেয়, যাদের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের শেষ দিকের কালি-তুলির স্কেচের সাদৃশ্য লক্ষ্য করবার মতো। …তাঁর [১৯১৩/১৪ সালের] ‘একজন স্থানীয় আদিবাসীর মাথা’ বা ‘স্থানীয় আদিবাসী’-এর পাশাপাশি রাখা যায় রবীন্দ্রভবনের ১৯৩৬, ২৯৬৪, বা ৩৪৫০-র মতো ছবিকে। …মুখোশও দুই শিল্পীর মধ্যে একটা সাধারণ এলাকা। …রবীন্দ্রভবনের রেখাঙ্কনধর্মী ২৭৯৮, ২৮৫৪, বা ২৯২৫-সংখ্যক [ছবির] সঙ্গে তুলনীয় নোল্‌দের ১৯১১-র মুখোশভিত্তিক স্টিল লাইফগুলি।” নোল্‌দে-রবীন্দ্রনাথের মুখোশভিত্তিক ছবিগুলোও প্রিমিটিভ ও ট্রাইবাল আর্টের সুবাদেই অনুপ্রাণিত :’পিকাসোর ছবিতে যেমন আফ্রিকান মুখোশের একটা স্টাইলাইজেশন ঘটে …নোল্‌দের এই ছবিগুলিতে তেমনটি হয় না। এই ছবিগুলিতে মুখোশগুলি প্রথমতঃ বর্ণোজ্জ্বল গ্রোটেস্ক নৃতাত্ত্বিক সামগ্রী হিসাবেই চিহ্নিত, যেন সংগ্রহশালার শো-কেসে সাজানো রয়েছে। আবার তাদের মধ্যে মানুষের মুখের ভাবের অতিরিক্ত অভিব্যক্তিও সঞ্চারিত করা হয়েছে, নাটকের মুখোশে যেমন।’ নোল্‌দের মুখোশগুলো রবীন্দ্রনাথকে আচ্ছন্ন করেছিল :নোল্‌দের ১৯১২ সালে করা ‘মানুষের মাথা’ ছবিটিতে তিনটি মাথা আঁকা হয়েছে। ‘তিন মুখে তিন রকমের রঙের প্রাধান্য’। রবীন্দ্রনাথের ২১৭৮-সংখ্যক ছবিতেও ঠিক তেমনি পাশাপাশি সাজানো তিনটি মুখোশ :’রবীন্দ্রনাথের মুখোশ-ছবিতে নোল্‌দের মতো বর্ণৌজ্জ্বল্য না পাওয়া গেলেও সারি-বাঁধা মুখোশের উপস্থিতি ভারতীয় চিত্রকলায় অভিনব। এইসব মুখোশের ঠোঁট কোথাও চাপা, কোথাও ফাঁক-করা, কোথাও বা তাদের চোখের তারা বিস্ম্ফারিত। কার্টুনঘেঁষা ভাবভঙ্গিতে এরা রবীন্দ্রচিত্রবিশ্বে এক নতুন, অদ্ভুত জগৎ রচনা করে।’
তাহলে দেখা যাচ্ছে যে, আফ্রিকা বা পলিনেশিয়ার প্রিমিটিভ ও ট্রাইবাল আর্ট (ও আর্ট-ফর্ম) শুধু যে ব্র্যাক, মাতিস, পিকাসো, ক্লি, কিরশনের, নোল্‌দে প্রমুখকেই প্রভাবিত করেছে তা-ই নয়, এদের ছবির সুবাদে বা প্রত্যক্ষভাবে প্রিমিটিভ আর্টের প্রভাব এসে পড়েছে রবীন্দ্রনাথের চিত্রকলার ক্ষেত্রেও। এই প্রভাব রবীন্দ্রনাথকে তার নিজের মতো করে ‘এক্সপ্রেশনিস্ট’ হতে সাহায্য করেছে। আমরা শুধু পাশ্চাত্যের কাছ থেকে হাত পেতে গ্রহণই করিনি, আমরাও পাশ্চাত্যকে দান করতে কার্পণ্য করিনি। এই ‘আমরা’ আসলে কারা? এই ‘আমরা’ এ যুগের (বা সে যুগের) পাশ্চাত্যের অন্ধ-অনুকরণপ্রিয় বাঙালি মধ্যবিত্ত সত্ত্বা নয়। দান এসেছিল আমাদের দেশের নিম্নবর্গ অন্ত্যজ শ্রেণির কাছ থেকেই। কিরশ্‌নের যেমন করে প্রভাবিত হয়েছিলেন অজন্তার গুহাচিত্রের নাম-না-জানা নিম্নবর্গের শিল্পীদের দ্বারা।

[ক্রমশ]