চাঁপাইনবাবগঞ্জ

মুকুল না ফোটা ছাড়াও মৌসুমের শুরুতেই ক্ষতিকর মিজ পোকা, হপার পোকা, গাছের পাতায় মহার আক্রমণে চাষি ও বাগান মালিকদের কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ বেড়েই চলছে

আমের রাজধানী হিসেবে পরিচিত চাঁপাইনবাবগঞ্জ। জেলাটির প্রধান অর্থনৈতিক ফসল আমই চালু রেখেছে এই এলাকার অর্থনীতি। তবে চলতি বছর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে চাঁপাইনবাবগঞ্জে শীত কিছুটা দেরিতে শুরু হওয়ায় এর বিরূপ প্রভাব পড়েছে আমের মুকুলের উপর। মৌসুমের শুরুতে মুকুল ফুটতে শুরু করলেও; হঠাৎ রাতের তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় মুকুল ফোটা থমকে গেছে। একইসঙ্গে মৌসুমের শুরুতেই ক্ষতিকর মিজ পোকা, হপার পোকা, গাছের পাতায় মহার আক্রমণে চাষি ও বাগান মালিকদের কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ বেড়েই চলছে। এতে ফলন নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন এখানকার চাষিরা।

তবে উদ্ভুত পরিস্থিতিতে খুব বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না বলে মনে করছেন কৃষি বিভাগ।

সরজমিনে জেলার বিভিন্ন বাগান ঘুরে দেখা গেছে, বড় আকারের চেয়ে ছোট ও মাঝারি আকারের গাছগুলোতেই কিছুটা মুকুল এসেছে। বড় বড় বাগানগুলোতে দেখা গেছে বেশিরভাগ গাছেই কোনো মুকুলই আসেনি। আবার কোনো কোনো বাগানের গাছে দেখা গেছে, গাছের যে অংশে কিছুটা রোদ, আলো-বাতাস পড়েছে সে অংশে কিছু মুকুল ফুটেছে। আবার গাছের একাংশে মুকুল আসলেও; একই গাছের অপর অংশে রোদ, আলো-বাতাস না পাওয়ায় কোনো মুকুলই ফোটেনি।

আম চাষি ও বাগান মালিকরা বলছেন, প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে একদিকে যেমন মুকুল বের হতে পারছে না; তেমনি যেসব গাছে ইতোমধ্যে কিছু মুকুল ফুটেছে তা নষ্ট হচ্ছে কুয়াশায়।

জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার কালুপুর এলাকার একটি আমবাগানে গিয়ে দেখা যায়, গাছে স্প্রে করছেন আমচাষি আল আমিন। তিনি জানান, আমের মুকলের অবস্থা ভালো না। গত বছর এই সময় যেখানে গাছগুলোতে শতভাগ মুকুল এসেছিলো; এবার তা অর্ধেকেরও কম। তার ওপর হপার পোকার আক্রমণে তারা দিশেহারা।

শামসুল আলম নামে আরেক আমচাষি জানান, মুকুল ফোটার এই সময়টাতে পর্যাপ্ত রোদ, বাতাস এবং তাপমাত্রার দরকার ছিলো। কিন্তু আবহাওয়া বিরুপ হওয়ায় এবার মুকুল বির্পযয় দেখা দিয়েছে।

সময় শেষ হতে চললেও মুকুলের দেখা নেই বেশিরভাগ বাগানে। <strong>ঢাকা ট্রিবিউন</strong>

 আম চাষি তসিকুল ইসলাম জানান, গাছের পাতা মহার কারণে কালো হয়ে যাচ্ছে। তার জন্য বালাইনাশক ও ছত্রানাশক স্প্রে করে পাতা পরিষ্কার করছি। আশপাশের সব বাগানেই একই অবস্থা।

আম চাষি ও বাগান মালিক আহসান হাবীব জানান, গত কয়েক বছর আমের বাম্পার ফলন হলেও; দাম না পাওয়ায় এবার সঠিকভাবে বাগানের পরিচর্যাও করেনি এখানকার চাষিরা। এছাড়া এবার আবহাওয়া আমের মুকুল ফোটার পক্ষে নয়।

এ বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের জেলা প্রশিক্ষণ অফিসার মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম জানান, “ফলন বাড়াতে ও উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরে রাখতে মাঠ পর্যায়ে আম চাষি, বাগান মালিকদের বিভিন্ন পরামর্শ ও প্রশিক্ষণসহ তদারকির কাজ চলছে।

কৃষি বিভাগের এই কর্মকর্তা জানান, এখন পর্যন্ত জেলার আমবাগানগুলোতে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ মুকুল এসেছে। শীতের কারণে এবার মুকুল আসা কিছুটা বিলম্বিত হচ্ছে। শীতটা কমে গেলেই ও তাপমাত্রা কিছুটা বাড়লেই, যেসব গাছে মুকুল আসেনি সেসব গাছে মুকুল আসবে। বর্তমানে আমরা গাছের গোড়ায় পানি ও বাগানে বালাইনাশক ও ছত্রাকনাশক স্প্রে করার পরামর্শ দিচ্ছি।

তিনি আরও জানান, “এ বছরও যেহেতু আমের চাষাবাদের পরিমাণ বেড়েছে; তাই আমরা আশা করছি এবারও উৎপাদনে খুব একটা প্রভাব পড়বে না।”

তবে কৃষি বিভাগ মুকুল ফোটার ব্যাপারে আশাবাদী হলেও সামনে আর যে কয়েকদিন সময় আছে তাতে নতুন করে গাছে মুকুল ফোটার সম্ভাবনা খুব কমই দেখছেন বলে মন্তব্য করেছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. নজরুল ইসলাম

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৩৩ হাজার হেক্টর জমির বাগানে ২ লাখ ৩৯ হাজার মেট্রিক টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। গত বছর যা ছিলো ২ লাখ ৭৫ হাজার মেট্রিক টন।