বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) ৭২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী শুক্রবার। দেশের অন্যতম বৃহত্তম বামপন্থি দলটির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে পালিত হবে দেশজুড়ে।

১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষের বিভক্তির পর ১৯৪৮ সালের ৬ মার্চ কলকাতা সম্মেলনে আনুষ্ঠানিকভাবে পাকিস্তানের কমিউনিস্ট পার্টি গঠিত হয়। একই সম্মেলনে খোকা রায়কে সম্পাদক করে কমিউনিস্ট পার্টির পূর্ববাংলা আঞ্চলিক কমিটি তথা পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক কমিটি গঠন করা হয়। স্বাধীনতার পর দলটি বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি সংক্ষেপে সিপিবি নামে পরিচিত হয়।

১৯৪৮ সালে প্রতিষ্ঠা পেলেও এর অনেক আগে থেকেই এ দেশে কমিউনিস্ট আন্দোলনের যাত্রা শুরু হয়েছিল। ১৯২০ সালে এই ভূখণ্ডে এ আন্দোলনের সূচনা ঘটে। ১৯২৫ সালে ভারতবর্ষের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিআই) প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৪৮ সালে এই সিপিআইর দ্বিতীয় কংগ্রেসেই পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক কমিটি গঠিত হয়, যা কালক্রমে সিপিবি নামে পরিচিতি পায়।

পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর পরই পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী কমিউনিস্ট কর্মীদের ওপর হত্যা-নির্যাতন ও জেল-জুলুম-হুলিয়ার খড়গ চালায়। হাজার হাজার কমিউনিস্টকে দেশত্যাগে বাধ্য করা হয়। ১৯৫০ সালের ২৪ এপ্রিল রাজশাহী জেলের খাপড়া ওয়ার্ডে কমিউনিস্ট রাজবন্দিদের ওপর পুলিশ গুলি চালালে সাতজন কমরেড শহীদ হন। এটাই এ ভূখণ্ডের প্রথম জেল হত্যাকাণ্ড। দলটি তেভাগা, নানকার ও টঙ্কসহ নানা কৃষক-শ্রমিক আন্দোলনের পাশাপাশি ছাত্র ও সাংস্কৃতিক আন্দোলন সংগঠিত করেছে।

ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ, স্বৈরাচারবিরোধী গণতান্ত্রিক সংগ্রাম, সাম্প্রদায়িকতা ও সাম্রাজ্যবাদবিরোধী লড়াই এবং জাতীয় সম্পদ রক্ষা, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও যুদ্ধাপরাধী সংগঠন জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধের আন্দোলনসহ সব আন্দোলন-সংগ্রামেই সিপিবি অনন্য ভূমিকা পালন করেছে। কিংবদন্তি কমিউনিস্ট নেতা সিপিবির সাবেক সভাপতি কমরেড মণি সিংহ ছিলেন মুক্তিযুদ্ধকালীন প্রবাসী সরকারের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য। এ ছাড়া ন্যাপ-কমিউনিস্ট পার্টি-ছাত্র ইউনিয়ন যৌথ গেরিলা বাহিনী গঠন করে সিপিবি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে আন্তর্জাতিকভাবে জনমত সৃষ্টিতেও তাদের ভূমিকা ছিল অনন্য।

১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর জেল-জুলুম-নির্যাতন অগ্রাহ্য করে সিপিবি এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে রাজপথে রুখে দাঁড়িয়েছে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে প্রায় অর্ধেক সময় দলটি বেআইনি ছিল। এমনকি স্বাধীন দেশেও সিপিবিকে একাধিকবার বেআইনি হতে হয়েছে।

দীর্ঘ চলার পথে আন্দোলন-সংগ্রামে সিপিবির অসংখ্য নেতাকর্মীকে জীবন দিতে হয়েছে। ১৯৭৩ সালের ১ জানুয়ারি ছাত্র গণসংগঠনের সাম্রাজ্যবাদবিরোধী মিছিলে পুলিশ গুলি করলে ২ জন নেতা শহীদ হন। ১৯৭৩ সালের ১০ মার্চ গোপালগঞ্জের দুই কমিউনিস্ট নেতা ও দুই ছাত্র ইউনিয়ন নেতাকে প্রকাশ্যে হত্যা করা হয়। ২০০১ সালের ২০ জানুয়ারি পল্টন ময়দানে সিপিবির মহাসমাবেশে বোমা হামলা হলে পাঁচজন নেতাকর্মী শহীদ হন।

সিপিবির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে শুক্রবার সারাদেশের কার্যালয়ে দলীয় পতাকা উত্তোলন, আলোচনা সভা ও লাল পতাকা মিছিলসহ বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করা হবে। কেন্দ্রীয় কর্মসূচিতে আজ বিকেল ৪টায় রাজধানীর পুরানা পল্টনের মুক্তি ভবনের মৈত্রী মিলনায়তনে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।

দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সিপিবির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাহ আলম এক বিবৃতিতে দলের সমর্থক-শুভানুধ্যায়ীসহ দেশবাসীকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।