ঢাকা: পোস্টার ও মাইকিংবিহীন নির্বাচন প্রচার ব্যবস্থায় যাওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। শুধু তাই নয়, নির্বাচনী প্রচারের নামে যেন যানজট সৃষ্টি বা জনসাধারণের চলাচলে কোনো বাধার সৃষ্টি না হয়, সে বিষয়ে কঠোর আইনি কাঠামো গড়ে তোলার পরিকল্পনা করছে নির্বাচন আয়োজনকারী সংস্থাটি।
১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনের পর্যালোচনা নিয়ে মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে আয়োজিত একটি বিশেষ সভায় এ নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয় ইসি।
বৈঠকে একটি লিখিত প্রস্তাব করেন নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম। তার মতে নির্বাচনে বর্তমানে প্লাস্টিকের লেমিনেটিং করা পোস্টার ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে পরিবেশের মারাত্মক বিপর্যয় হচ্ছে। এছাড়া কেবল কাগজের তৈরি আড়াই হাজার টন পোস্টারও যদি ড্রেনে যায়, তাহলে জলাবদ্ধতা ব্যাপক আকার ধারণ করবে। ঢাকা সিটি নির্বাচনে প্লাস্টিকে মোড়ানোর পোস্টারগুলো সরিয়ে নেওয়া হলেও পরিবেশ বিপর্যয় ঠেকানো যাবে না। কেননা, এগুলো পোড়ালে পরিবেশ দূষণ হবে। মাটিতে ফেললেও পরিবেশ দূষণ হবে। তাই পোস্টার ছাড়া নির্বাচনী প্রচারণা নিয়ে ভাবা প্রয়োজন।
এছাড়া নির্বাচনে মাইকিং ব্যবহারের আইনি অনুমতি থাকলেও বাস্তবে যেভাবে লাউড স্পিকার ব্যবহার করা হয়, তাতে দুপুর ২টা থেকে ৮টার সময়সীমা কেউ মানে না। এছাড়া একাধিক স্পিকার ব্যবহার করা হয় উচ্চমাত্রায়। ফলে ব্যাপক শব্দদূষণের সৃষ্টি হয়।
অন্যদিকে নির্বাচনী প্রচারের নামে মিছিল, শোডাউন করে ফেলেন অনেকে। যদিও এটা আইনে বৈধতা নেই। এতে যানজটের সৃষ্টি হয়ে দুর্ভোগের সীমা থাকে না।
আর এজন্য পরিবেশবান্ধব, শব্দ দূষণমুক্ত এবং যানজটহীন নির্বাচনী প্রচার ব্যবস্থা গড়ে তোলার পক্ষে অবস্থান এই নির্বাচন কমিশনারের।
বৈঠক সূত্র জানায়, রফিকুল ইসলামের প্রস্তাবে একমত প্রকাশ করেছে পুরো কমিশন। এক্ষেত্রে নির্বাচনী আচরণবিধি সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে এজন্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনার কথাও উঠে আসে বৈঠকে।
বৈঠক শেষে নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানম বাংলানিউজকে বলেন, মাইকিং ও পোস্টারবিহীন নির্বাচনী প্রচারের জন্য নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এজন্য আচরণবিধি সংশোধন করতে হবে। প্রয়োজনে আমরা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গেও আলোচনা করবো। এতে পরিবেশের ব্যাপক বিপর্যয় হচ্ছে। লেমিনেটিং পোস্টার সরাসরি পরিবেশ বিপর্যয় ডেকে আনছে। এটার জন্য পরিবেশ আইন ছিল। তারপরও আমরা বিষয়টাকে আমলে নিয়েছি।
নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা তিনটি বিষয় ঠেকাতে চাই। আর তা হলো- পরিবেশ দূষণ, শব্দদূষণ ও যানজটমুক্ত নির্বাচনী প্রচার। এটার জন্য যা যা করা দরকার আমরা সবাই করবো।
তিনি বলেন, আদালত একটি নির্দেশনা দিয়েছেন, প্লাস্টিকের পোস্টার ব্যবহার না করতে। আমরা আমাদের ইনহেরিট্যান্ট পাওয়ার থেকে পরিবেশ ও মানুষের যাতে সমস্যা না হয়, সে উদ্যোগটি হাতে নিয়েছি।
‘এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (এসডো)’ নামে একটি সংগঠন সম্প্রতি ঢাকা দুই সিটি ভোটের পোস্টার থেকে আড়াই হাজার টন বর্জ্য সৃষ্টি হওয়ার গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
গত ২২ জানুয়ারি হাইকোর্ট প্লাস্টিকের লেমিনেট করা পোস্টার উৎপাদনে নিষেধাজ্ঞা দেন। এছাড়া ভোটের পর পোস্টার সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশও দেন। অনেক প্রার্থী এবং সিটি করপোরেশন থেকে সে ব্যবস্থাও নেওয়া হয়।
বাংলাদেশ সময়: ২০৩২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৪, ২০২০
ইইউডি/এএ