অনলাইন ডেস্ক : কেমিক্যালযুক্ত আমে সয়লাব হয়ে গেছে রাজধানীর আমের বাজার। অভিজাত দোকানসহ রাজধানীর অলিতে-গলিতেও মিলছে পাকা আম। যদিও আম ক্যালেন্ডার অনুযায়ী বাজারে পাকা আম আসতে এখনো বাকি কয়েক দিন।
অভিযোগ আছে, ইথোফিনের মতো কেমিক্যাল দিয়ে পাকানো হচ্ছে এসব আম। এই অপরাধে গত ৪ দিনে রাজধানীতেই কেমিক্যালযুক্ত অপরিপক্ব ২৭২১ মণ আম জব্দ করে বিনষ্ট করেছে র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। তবুও থামছে না এসব আমের বিকিকিনি।
শনিবার মিরপুরে ভেজাল আমবিরোধী অভিযানে ১১০০ মণ কেমিক্যালযুক্ত আম জব্দ করে ধ্বংস করে র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। শাস্তি দেয়া হয় ৬ জনকে।
এর আগে বৃহস্পতিবার রাজধানীর যাত্রাবাড়ী ফলের আড়তে অভিযান চালায় র্যাব-১০ এর ভ্রাম্যমাণ আদালত। সেখানে কৃত্রিমভাবে আম পাকানোর অভিযোগে এবং মেয়াদ উত্তীর্ণ খেজুর মজুদের অভিযোগে ৯ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড এবং ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। জব্দ করা হয় এক হাজার মণ অপরিপক্ব আম এবং ৪০ টন খেজুর।
এর আগে কারওয়ান বাজারে একই ধরনের অভিযান চালায় র্যাব-২ এর ভ্রাম্যমাণ আদালত। সেখান থেকে ৬শ’ মণ আম জব্দ করে তা ধ্বংস করা হয়। যেগুলো কেমিক্যাল দিয়ে অপরিপক্ব অবস্থায় পাকানো হয়েছিল।
১০ মে রাজধানীর বাদামতলীতে ফলের আড়তে অভিযান চালিয়ে র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত ৩টি প্রতিষ্ঠানকে ১১ লাখ ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করে। ধ্বংস করা হয় ৬০ মণ খেজুর ও ২১ মণ আম।
বিএসটিআই, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন ও নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তারা এসব অভিযানে উপস্থিত ছিলেন।
র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সরোয়ার আলম জানিয়েছেন, ইতিমধ্যে রাজধানীর বাজারগুলোতে কেমিক্যালযুক্ত আমের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হয়েছে। আম সংগ্রহ মৌসুম চলাকালীন এবং পরবর্তী সময়েও এই অভিযান অব্যাহত থাকবে।
কার্বাইড কিংবা ইথোফিনের মতো কেমিক্যাল দিয়ে পাকানো আম খেলে ক্যান্সারের মতো দুরারোগ্য ব্যাধি হতে পারে বলে মনে করেন চিকিৎসকরা। তেজগাঁও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ডা. সাহবুদ্দিন খান এ প্রসঙ্গে বলেন, কেমিক্যালযুক্ত আম খেলে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া হিসেবে ডায়রিয়া কিংবা মাথাব্যথা হতে পারে। ৮-১০ বছর পর এসব কেমিক্যালের কারণে ক্যান্সারও হতে পারে।
আমে কেমিক্যাল রোধের জন্য গত কয়েক বছর ধরে আম বাজারজাতকরণের জন্য একটি ‘আম ক্যালেন্ডার’ তৈরি করা হয়েছে।
১৫ এপ্রিল চাঁপাইনবাবগঞ্জের জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে কেমিক্যালমুক্ত আম উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ বিষয়ক সভায় আম ক্যালেন্ডার তৈরি করা হয়। সভায় এ বছর সব ধরনের গুটি আম ২০ মে, গোপালভোগ ২৫ মে, হিমসাগর ও ক্ষিরসাপাতি ২৮ মে, লক্ষণভোগ ১ জুন, ল্যাংড়া ও বোম্বাই ৫ জুন, আম্রপালি, ফজলি ও সুরমা ফজলি ১৫ জুন, আশ্বিনা ১ জুলাই থেকে বাজারজাত করার সময় নির্ধারণ করা হয়।
এদিকে পরিপক্ব আমে ইথোফিনের ব্যবহার বিশ্বের বিভিন্ন দেশে হলেও বাংলাদেশে অপরিপক্ব আমে তা ব্যবহার করায় একদিকে যেমন সৃষ্টি হচ্ছে স্বাস্থ্য ঝুঁকি অন্যদিকে নষ্ট হচ্ছে আমের আসল স্বাদ। আবার ইথোফিনের যথাযথ ব্যবহারের বিষয়েও নেই কৃষকদের জ্ঞান। তাই এ বিষয়ে যথাযথ প্রচারণা ও প্রশিক্ষণের তাগিদ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের কৃষি তথ্য সার্ভিসের প্রধান তথ্য অফিসার ড. মো. খালেদ কামাল বলেন, ফল যদি ইথোফিন দিয়ে অপরিপক্ব অবস্থায় পাকানো হয় তাহলে ফলের কোয়ালিটি যেটা থাকার কথা তা আর থাকে না। কিন্তু ফল কিছুটা পরিপক্ব হওয়ার পর যদি ইথোফিন দেয়া হয় তাহলে কোনো সমস্যা হওয়ার কথা না। কিন্তু সেটা গ্রহণযোগ্য মাত্রায় দিতে হয়। তবে আম চাষিরা যেন অতিরিক্ত মাত্রায় ইথোফিন ব্যবহার না করেন এবং তা কেবল পুষ্ট কাঁচা আমে ব্যবহার করেন সে বিষয়ে প্রশিক্ষণ দান ও ব্যাপক প্রচারের ব্যবস্থা নেয়া অত্যাবশ্যক বলে মনে করেন তিনি।