মাজারে স্প্রে করা হচ্ছে জীবাণুমুক্ত করার জন্য

ইরানে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হবার সংখ্যা বাড়ছে, তবে এর মোকাবেলায় কতটা প্রস্তুতি নিয়েছে দেশটির সরকার – তা নিয়ে তৈরি হয়েছে উদ্বেগ।

ইরান সরকার বুধবার বলেছে, এখন পর্যন্ত উনিশ জন মারা গেছে ও ১৩৯ জন সংক্রমিত হয়েছে।

যদিও ভাইরাসে আক্রান্ত হবার সংখ্যা আরও অনেকগুণ বেশি বলে মনে করা হচ্ছে।

পুরো অবস্থা পর্যালোচনা করা ও কী ধরণের সহায়তা দরকার সেটি নিরূপণ করতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একটি দল ইরান যাবে এ সপ্তাহেই।

বিবিসি মনিটরিং বলছে, ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি বলেছেন পুরো শহর কোয়ারেন্টিন করার কোনো পরিকল্পনা সরকারের নেই।

কোম শহরে – যেখানে ভাইরাস সংক্রমণ মহামারির আকার নিয়েছে – সেখানকার ধর্মীয় মাজারগুলো এখনো খোলা আছে।

এর মধ্যে আছে হযরত মাসুমেহ’র মাজার – যেখানে লাখ লাখ শিয়া মুসলিম সমবেত হয়।

জনসাধারণকে কোথাও অপ্রয়োজনীয় জমায়েত থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেয়া হয়েছে এবং কোম শহরে না যেতেও বলা হচ্ছে।

কিন্তু শহরের ধর্মীয় স্থাপনাগুলো – যেখানে বহু মানুষ জমায়েত হয় – সেগুলো বন্ধ করার কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি।

করোনাভাইরাস: প্রাদুর্ভাব ঠেকানোর ‘সুযোগ সংকীর্ণ’ হয়ে আসছে

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত প্রথম ব্যক্তিটি কে?

করোনাভাইরাস: শিশুরা কেন অসুস্থ হচ্ছে না?

সৌদিতে ওমরাহ মানা বিদেশীদের, কিছু দেশের জন্য পর্যটন ভিসা স্থগিত

হযরত মাসুমেহ মাজারের তত্ত্বাবধায়ক বলেছেন, মানুষ ব্যক্তিগত দুঃখ-কষ্ট থেকে মুক্তিলাভের জন্য সেখানে যায় – তাই এটা বন্ধ হতে পারেনা।

“মাজারগুলো বন্ধ করা হবে একটি বড় পদক্ষেপ এবং আন্তর্জাতিক চাপ ছাড়া সেটি কেউ করতে চাইবেনা,” বলছিলেন বিবিসি পার্সিয়ান সার্ভিসের রানা রহিমপুর।

তেহরানে চা আর কফির দোকানগুলোতে শিশা বা নল-লাগানো হুঁকো সেবন নিষিদ্ধ করেছে পুলিশ।

এই শিশার পাইপগুলো বেশিরভাগ সময় অনেকে মিলে একযোগে কিংবা একজনের পর একজন ব্যবহার করে ধূমপানের জন্য।

আক্রান্ত প্রদেশে স্কুল বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করা হয়েছে এবং বাতিল করা হয়েছে খেলা কিংবা সিনেমার প্রিমিয়ার শো।

এএফপি জানিয়েছে, অনলাইনে করোনাভাইরাস নিয়ে গুজব ছড়ানোর অভিযোগে চব্বিশ জনকে এ পর্যন্ত আটক করেছে ইরান সরকার।

সতর্ক করা হয়েছে আরও ১১৮ জনকে, জানিয়েছেন ইরানের সাইবার পুলিশ প্রধান ভাহিদ মজিদ।

করোনাভাইরাস পরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় ডায়াগনস্টিক কিট ও স্বাস্থ্য কর্মীদের জন্য সুরক্ষা সামগ্রী সরবরাহ করছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

চারটি জাহাজে এসব আসার কথা নিশ্চিত করেছে ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

তবে উপকরণ-স্বল্পতায় উদ্বেগ আছে বহু ইরানির মধ্যেই।

আমদানিকারকরা অনেকে বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার কারণে তারা মেডিকেল উপকরণ বিশেষ করে ভাইরাস পরীক্ষার কিট আমদানি করতে পারছেননা।

“করোনাভাইরাস টেস্ট কিট সরবরাহ করতে অনেক আন্তর্জাতিক কোম্পানিই প্রস্তুত আছে, কিন্তু আমরা তাদের অর্থ পাঠাতে পারছিনা,” বলছিলেন রহিম ফাল্লাহ, আমদানিকারকদের সংগঠনের একজন নেতা।

যুক্তরাষ্ট্র অবশ্য মেডিকেল সামগ্রী আমদানির ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে।

দেশে দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ার প্রেক্ষাপটে ইরানিরাও ফার্মেসিগুলোয় ভিড় করছে মাস্ক, জীবাণুমুক্ত করার জেল ও স্প্রে’র জন্য।

যেসব দোকানে এগুলো পাওয়া যাচ্ছে সেখানে অন্তত দশ গুণ বেশি দামে এগুলো বিক্রি হচ্ছে।

তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমন দাবিও করা হচ্ছে যে এসব সামগ্রীর মুল কারণ হলো, কয়েক সপ্তাহ আগে এসব সামগ্রী বিপুল পরিমাণে চীনকে দেয়া হয়েছে।

রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা ইরনা বলছে, ইরান দু-দেশের মধ্যে বন্ধুত্বের নিদর্শন হিসেবে ত্রিশ লাখ মাস্ক দিয়েছে চীনকে।

এর বাইরে চীনা কোম্পানিগুলোও ইরান থেকে এসব সামগ্রী কিনে নিয়েছে যা স্থানীয় বাজারে সংকট তৈরি করেছে।

ইরান সরকার এখন বলছে, মুখের মাস্ক রপ্তানি নিষিদ্ধ করা হয়েছে তিন মাসের জন্য এবং কারখানাগুলোকে দ্রুত উৎপাদন বাড়ানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

ইরান এখনো বিদেশ ভ্রমণ নিষিদ্ধ করেনি, তবে প্রতিবেশী তুরস্ক, পাকিস্তান, ইরাক তাদের সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছে। তুরস্ক ও আরব আমিরাত ইরানে বিমান চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে।

ইরান সরকার বলছে, চীনের ফ্লাইট ২রা ফেব্রুয়ারি থেকে স্থগিত আছে।

তবে ফ্লাইট রেকর্ড বলছে, অন্তত নয়টি ফ্লাইট তারপরেও চলাচল করেছে দু-দেশের মধ্যে।