সমাবর্তন

দেশের সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেবে না বলে ইতিমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্বাবিদ্যালয় বুয়েট। কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষায় কোন গুরুত্বপূর্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এটিই আসা প্রথম সিদ্ধান্ত।

গতমাসের শেষদিকে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন জানায় যে এই শিক্ষাবর্ষ থেকেই বাংলাদেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয়ভাবে একসাথে ভর্তি পরীক্ষা নেয়া হবে। তবে এই পরীক্ষা কে আয়োজন করবে, কিভাবে অনুষ্ঠিত হবে এসব প্রক্রিয়া ও পদ্ধতির বিষয়ে এখনও চূড়ান্ত কোন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।

১৯৭৩’এর অধ্যাদেশে যেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে স্বায়ত্বশাসন দেয়া হয়েছে, সেই চারটি বিশ্ববিদ্যালয় এবং বুয়েট গত সপ্তাহে জানিয়েছিল যে তারা নিজেদের অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের বৈঠক শেষে সিদ্ধান্ত জানাবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ও কি একই পথে হাঁটছে?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও ১৯৭৩ সালের অধ্যাদেশ অনুযায়ী চলার ব্যাপারে মত পাওয়া গেছে বিভিন্ন সভায়। এই অধ্যাদেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে নিজের সিদ্ধান্তের ব্যাপারে স্বায়ত্তশাসনের অধিকার দেয়া হয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান বিবিসিকে জানিয়েছেন, “বিষয়টি নিয়ে যখন বড় আকারের বিতর্ক তৈরি হল তখন আমরাও গুরুত্ব দিয়ে ভেবেছি। আমরা গুরুত্বপূর্ন ফোরামে বিষয়টি আলোচনা করেছি যেখানে আমাদের সাবেক উপাচার্য, জাতীয় অধ্যাপকবৃন্দ ও প্রফেসর এমেরিটাস মহোদয় ছিলেন।”

“তারা পরামর্শ দিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯৭৩ সালের অধ্যাদেশ সমন্বিত রাখতে হবে। ডিন কমিটির সভায় এই সুপারিশ গ্রহণ করার ব্যাপারে তারাও একমত হয়েছেন।”

তিনি জানিয়েছেন যে আলাপ তারা করেছেন সেখানে নিজস্ব পরীক্ষা পদ্ধতি বজায় রাখার সুপারিশ এসেছে।

তিনি বলছেন, “সুপারিশটা হল এরকম, আমাদের দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত, গ্রহণযোগ্য, বিশ্বস্ত, খুবই পরিশীলিত যে ব্যবস্থাটি আছে – সেটি গ্রহণ করাই সমীচীন।”

আরো পড়ুন:

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এ বছর থেকেই সমন্বিত ভর্তি

সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার বিরুদ্ধে কিছু শিক্ষক

অধ্যাপক মোহাম্মদ আখতারুজ্জামানকে জিজ্ঞেস করেছিলাম তিনি নিজে ব্যক্তিগতভাবে কী মনে করেন?

এর জবাবে তিনি বলেছেন, “আমি ৭৩ এর অধ্যাদেশের আদেশ বলে ভাইস চ্যান্সেলর। যার ফলশ্রুতিতে সেটি আপহোল্ড করা এবং অধ্যাদেশের নীতি-দর্শনের প্রভাব সর্বত্র যাতে অনুসৃত হয়, সেটি করার শক্ত কমিটমেন্টতো আমার থাকবেই।”

তবে তিনি বলছেন, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা অ্যাকডেমিক কাউন্সিলের। যাদের সভা রয়েছে ২৪ ফেব্রুয়ারি। যেদিন তাদের সিদ্ধান্ত জানা যেতে পারে।

বুয়েট কেন অংশ নিতে চায় না?

বুয়েটের শিক্ষা পরিষদের সদস্য অধ্যাপক মিজানুর রহমান বিবিসিকে জানিয়েছেন, “৪৮ বছর ধরে যে পদ্ধতিতে বুয়েটে ভর্তি পরীক্ষা হয়ে আসছে তাতে আমরা সেরা শিক্ষার্থীদেরই পাচ্ছি, এটা একেবারে প্রমাণিত।”

“আমাদের পরীক্ষা পদ্ধতিতে দেশের সবার আস্থা রয়েছে। কেউ কখনো প্রশ্ন তোলেনি। তাই আমরা আগের মতোই পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”

আরো পড়ুন:

আজীবন বহিষ্কার হচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬০ ছাত্র

বুয়েটে নির্যাতনের সংস্কৃতি: প্রশাসনের ব্যর্থতা কতটা?

বুয়েটে ভর্তির জন্য সাধারণত প্রতিযোগিতা করেন বিজ্ঞান শাখায় পড়াশোনা করা দেশের সেরা শিক্ষার্থীরা। কিন্তু কেন সেখানকার কর্তৃপক্ষ মনে করছেন সমন্বিত পদ্ধতির পরীক্ষায় সেরা শিক্ষার্থীদের পাওয়া যাবে না?

এই প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক রহমান বলছেন, “আমরা এই ভর্তি পরীক্ষার ইতিবাচক বা নেতিবাচক বিষয় কোনটি নিয়েই কথা বলছি না। তবে সবার মত আগের পদ্ধতিতে পরীক্ষা নেয়ার ব্যাপারে।”

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন যা বলছে

সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের যুক্তি হল দেশের গুরুত্বপূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বিভিন্ন শহরে অবস্থিত। শিক্ষার্থীরা অন্তত একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি নিশ্চিত করতে একের অধিক বা সবগুলোতে পরীক্ষা দেয়ার চেষ্টা করেন।

তা করতে চাইলে একজন শিক্ষার্থীকে প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য আলাদা প্রস্তুতি নিতে হয়। অর্থ খরচ করে প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি ফরম কিনতে হয় এবং আলাদা শহরে যেতে হয়। অনেক সময় একই তারিখে একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা পড়ে যায়।

এসব জটিলতা দুর করতে সমন্বিত পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানানো হয় কমিশনের পক্ষ থেকে। এই বছরই সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা নেয়া হবে – বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের এমন ঘোষণার পরপরই বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়।

এই প্রশ্নের জবাবে কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক কাজী শহীদুল্লাহ বলছেন, “আমরাতো কারো উপর সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিচ্ছি না। ২৬ তারিখ জানা যাবে কারা আমাদের সাথে থাকবে বা থাকবে না।”

“যেসব প্রশ্ন উঠেছে সেনিয়ে আমরা কথা বলবো, তা শেয়ার করবো। যদি সবাই কনফিডেন্ট তাহলে আমরা এগোবো। যারা রাজি হবে তাদের নিয়েই এগোবো।”

বুয়েটের পিছিয়ে যাওয়ার সম্ভাব্য প্রভাব

শিক্ষা গবেষক অধ্যাপক সিদ্দিকুর রহমান বলছেন, “এতে দেখা যাবে বাংলাদেশে যতগুলো প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় আছে তাদের একত্রে পরীক্ষা হবে আর বুয়েটের আলাদা হবে। আর বুয়েট বের হয়ে গেলে অন্য বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্যেও কেন্দ্রীয় পরীক্ষা থেকে বের হয়ে যাওয়ার সুযোগ তৈরি হবে।”

গবেষক সিদ্দিকুর রহমানের মতে এখানে একটি আর্থিক বিষয়ও কাজ করতে পারে। তিনি বলছেন, “আমি পরীক্ষা প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত ছিলাম। এসব ভর্তি পরীক্ষা থেকে প্রচুর অর্থ আয় হয়। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যা সরকারের কাছে জমা দেয়না। এটা একটি কারণ হয়ত হতে পারে।”

তবে সমন্বিত পরীক্ষার উদ্যোগটিই ভেস্তে যাবে কিনা সেই প্রশ্নও এখন তৈরি হয়েছে।

অন্যান্য খবর:

গ্রামীণফোনকে সোমবারের মধ্যে হাজার কোটি টাকা শোধ করতে হবে

বিসিবি সভাপতির ক্ষোভ কতটা যৌক্তিক?

মায়ের হত্যাকারীর সাথে দেখা হলে তাকে কী বলবেন?

নারী সেজে ইসরাইলি সেনাদের হামাসের ধোঁকা