অনলাইন ডেস্ক : কোটা সংস্কারের আন্দোলনের মধ্যে হলে শিক্ষার্থীদের নির্যাতনের অভিযোগে সংগঠন ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কৃত হয়েছিলেন ইফফাত জাহান এশা, তখন ফুল নিয়ে তার বাসায় যান ছাত্রলীগের একদল সাবেক নেতা, পরে তার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয় (ফেইসবুকে পাওয়া ছবি)
কোটা সংস্কারের আন্দোলনের মধ্যে হলে শিক্ষার্থীদের নির্যাতনের অভিযোগে সংগঠন ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কৃত হয়েছিলেন ইফফাত জাহান এশা, তখন ফুল নিয়ে তার বাসায় যান ছাত্রলীগের একদল সাবেক নেতা, পরে তার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয় (ফেইসবুকে পাওয়া ছবি)
কোটা সংস্কারের আন্দোলনের সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি সুফিয়া হলে ছাত্রলীগ সভাপতি ইফফাত জাহান এশাকে হেনস্তার ঘটনায় ওই হলের ২৫ ছাত্রীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম গোলাম রাব্বানী বৃহস্পতিবার বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি মোতাবেক তাদের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ করে দিয়ে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে।”
এতে বলা হয়েছে, “বিগত ১০ এপ্রিল মঙ্গলবার মধ্যরাতে আপনি কবি সুফিয়া কামাল হলের আবাসিক ছাত্রীদের মধ্যে পরিকল্পিতভাবে মিথ্যা অসত্য রটনা ও গুজব ছড়িয়েছেন যে, উক্ত হলের আবাসিক ছাত্রী ইফফাত জাহান ইশা, মোর্শেদা আক্তার নামক একজন আবাসিক ছাত্রীর রগ কেটে দিয়েছে এবং তাকে মারধর করেছে।
“আপনি অন্যান্য আবাসিক ছাত্রীদের মধ্যে বিভ্রান্তিকর সংবাদ পরিবেশন করেছেন ও তার আলোকচিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়েছেন। আপনার এ ধরনের পূর্বপরিকল্পনা, ষড়যন্ত্র ও প্রচারণা হলের ছাত্রীদের ভীষণভাবে উত্তেজিত ও আতঙ্কিত করে। তাছাড়া আপনি পূর্ব পরিকল্পনা অনুসারে সংঘবদ্ধ হয়ে ইফফাত জাহান ইশাকে মারধর ও লাঞ্ছিত করেন এবং জোরপূর্বক ইফফাত জাহান ইশার গলায় জুতার মালা পরিয়ে দেন এবং তার বস্ত্র হরণ করেন।
“ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি সুফিয়া কামাল হলে সংঘটিত উক্ত অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে গঠিত তদন্ত কমিটি ঘটনার সাথে আপনার জড়িত থাকার প্রমাণ পেয়েছে। একজন শিক্ষার্থী কর্তৃক এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত কার্যকলাপ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা ও মর্যাদাকে ভীষণভাবে ক্ষুণ্ণ করেছে, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা ও আইনের সুস্পষ্ট পরিপন্থি।”
গত ১৮ এপ্রিল শৃঙ্খলা পরিষদের সুপারিশ ও ৩০ এপ্রিলের সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এ ঘটনায় ওই ছাত্রীদের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হবে না তার কারণ চিঠি পাওয়ার দুই সপ্তাহের মধ্যে প্রক্টরের কাছে জমা দিতে বলা হয়েছে।
“নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কোনো জবাব না পাওয়া গেলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আপনার বিরুদ্ধে একতরফাভাবে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে,” বলা হয়েছে এতে।
কারণ দর্শানোর এই নোটিশ ছাত্রীদের হলের ঠিকানা, বিভাগের ঠিকানা ও স্থায়ী ঠিকানায় পাঠানো হয়েছে বলে সুফিয়া কামাল হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক সাবিতা রেজওয়ানা রহমান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, “গতকাল দুপুরে কারণ দর্শানোর এই নোটিশগুলো এসেছে। গতকাল ও আজকে হাউজ টিউটরদের মাধ্যমে চিঠিগুলো ছাত্রীদের দেওয়া হয়েছে। পুরো বিষয়টিই এখন প্রক্টর অফিস দেখছে।”
কারণ দর্শানো নোটিশ পাওয়া কয়েকজন দাবি করেছেন, ওই ঘটনায় তারা জড়িত ছিলেন না, বরং তারা সে সময় এশাকে রক্ষা করতে গিয়ে নিজেরাও উত্তেজিত ছাত্রীদের হাতে মার খেয়েছেন।
নাম না প্রকাশ করার অনুরোধ জানিয়ে তাদের একজন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি গিয়েছি এশাকে বাঁচাতে। উল্টা মার খেয়েছি ছাত্রীদের। আমাকে ‘এশার দালাল’ বলেছে ওরা। অথচ এখন তদন্তে বলা হচ্ছে, আমিই নাকি দোষী।”
‘অনিচ্ছায় এই ঘটনায় জড়িয়ে পড়ায়’ এখন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের হয়রানির শিকার হওয়ার অভিযোগ করে তিনি বলেন, “আমি জানি, আমি নির্দোষ। আমাদের সবারই এখন সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা চলছে। এই সময় প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ রকম নোটিশ দেওয়ায় আমরা সবাই মোটামুটি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছি। তাছাড়া আমাদের ডিপার্টমেন্টে আর বাসায়ও নাকি এই নোটিশ দেওয়া হয়েছে। নির্দোষ হয়েও আমাকে পরিবারের কাছে ছোট করছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।”
প্রশাসনের এই পদক্ষেপে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন হেনস্তার শিকার বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্রী ও সুফিয়া কামাল হল ছাত্রলীগের সভাপতি ইফফাত জাহান এশা।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমার সাথে যা হয়েছে তা চরম অন্যায়। তারা আমার নামে গুজব রটিয়েছিলো। আপনারা তো মোর্শেদার ভিডিও দেখেছেন।
“সে ভিডিওতেই বলেছে, তার পা জানালায় লেগে কেটেছে। অথচ দুষ্কৃতিকারীরা আমার নামে গুজব রটিয়েছে। আমি জাস্ট বিচার চাই, সুষ্ঠু বিচার।”
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম