গোফরান পলাশ, পটুয়াখালী: কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে হিন্দু সম্প্রদায়ের
আড়াইশ’ বছরের ঐতিহ্যবাহি শ্রীকৃষ্ণের রাস উৎসব উলু ধ্বনী ও পূন্যস্নানের
মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে। পূন্যার্থী এবং দর্শনার্থীরা মঙ্গলবার সকালে
সুর্যোদয়ের পূর্বে সমুদ্রে পূন্যস্নান করে পাপ মোচন এবং মনের বাসনা যেন
পূর্ন হয় তার প্রার্থনা করেন। পূন্যস্নান শেষ করে শ্রী শ্রী রাধাকৃষ্ণের
১৭ জোড়া যুগল মূর্তি দর্শন ও ধর্মীয় আচার আচরন পালন করেন রাধা কৃঞ্চ
ভক্তরা।
সোমবার (১১নভেম্বর) রাতে রাস পূজা ও রাস মেলা উৎসব শুরু হয়। রাতভর সমুদ্র
সৈকতসহ দর্শনীয় স্পট গুলোতে পুণ্যার্থী ও দর্শনার্থীদের ছিল উপচে পড়া
ভীড়। মঙ্গলবার সমুদ্র ¯পূন্যস্নান শেষে পুণ্যার্থীরা নিজ নিজ গন্তব্যে
ফিরে গেছেন।
এদিকে রাস মেলাকে কেন্দ্র করে কুয়াকাটায় ভাসমান ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা রং
বেরঙের খেলনা সামগ্রী ও প্রসাধনীর পসরা নিয়ে বসে ছিল। ব্যবসায়ীরা জানান,
ঘূর্নিঝড় বুলবুল’র কারনে মেলায় এবছর তেমন ভালো বেচাকেনা হয়নি। তবে রাস
মেলায় আগত দর্শনার্থী ও পুণ্যার্থীদের যাতে কোন ধরনের হয়রানী হতে না হয়
সেজন্য আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ছিল তৎপর। নিরাপত্তার চাঁদরে ঢাকা ছিল
কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত। কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।
সোমবার রাতে মূল মঞ্চে (মন্দিরের সামনে) শ্রী কৃষ্ণের নাম যজ্ঞ ও
উলুধ্বনীর মধ্য দিয়ে রাত শেষ হয়। প্রতি বছরের মতো এ বছরও গঙ্গাস্নান
উপলক্ষে সৈকতে মেলা বসেছে। এ উৎসবকে কেন্দ্র করে জাতি-ধর্ম-বর্ণ
নির্বিশেষে হাজার হাজার মানুষের উপস্থিতিতে পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটা
সমুদ্র সৈকত মিলনমেলায় পরিনত হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর টহল ছিলো
চোখে পড়ার মতো।
রাসমেলা উদযাপন কমিটির সভাপতি বিপুল চন্দ্র হাওলাদার জানান, ’প্রায়
আড়াইশ’ বছর পূর্ণিমা তিথিতে এ রাসলীলা উৎসব ও মেলা চলে আসছে। দ্বাপর যুগে
মানুষের দুঃখ-দুর্দশা, হিংসা, হানাহানি দেখে দুষ্টের দমন ও সৃষ্টের
লালনের জন্য স্বয়ং ভগবান শ্রীকৃষ্ণ নাম ধারণ করে পৃথিবীতে অবতীর্ণ হন।’
কুয়াকাটা পৌর আওয়ামী লীগ সাংগঠনিক সম্পাদক বাবু অনন্ত কুমার মুখার্জী
জানান, ’ব্যাপক নিরাপত্তা, উৎসাহ উদ্দিপনা, ধর্মীয় ভাব গাম্ভীর্য, রাতভর
শ্রী কৃষ্ণের নাম যজ্ঞ ও উলুধ্বনীর মধ্য দিয়ে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের
ঐতিহ্যবাহী ধর্মীয় অনুষ্ঠান গঙ্গাস্নান ও শ্রী কৃষ্ণের রাস লীলা উৎসব
সুন্দরভাবে সম্পন্ন হয়েছে। তবে ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের কারণে প্রতি বছরের মতো
জমে ওঠেনি। যার ফলে কুয়াকাটার ব্যবসায়ীদের কমপক্ষে এক কোটি টাকা ক্ষতি
হয়েছে।’
কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল সূত্র জানায়, এ বছর রাসমেলা ও গঙ্গাস্নান উৎসবে
আবাসিক হোটেলগুলোয় তেমন ভিড় ছিল না। অন্যান্য বারের চেয়ে এ বছর মেলায়
ব্যবসায়ীদের বেচা কেনাও ভাল হয়নি বলে তারা দাবি করেন।
কলাপাড়া ইউএনও মোঃ মুনিবুর রহমান জানান, ’সকল প্রস্তুতির পাশাপাশি রাস
উৎসবে আগত সকল তীর্থ যাত্রীদের নিরাপত্তার স্বার্থে প্রশাসন প্রস্তত
ছিলো। কোন প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই এবারের রাসমেলা সুন্দর ভাবে
সম্পন্ন হয়েছে।