দর্পণ ডেস্ক : দীর্ঘ সাত বছর পর অনুষ্ঠিত হচ্ছে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন কৃষক লীগের ত্রিবার্ষিকী সম্মেলন। এই সম্মেলনে অংশ নিতে সারাদেশ থেকে আসা নেতাকর্মীদের স্লোগান মুখরিত হয়ে উঠেছে রাজধানী সোহরাওয়ার্দী উদ্যান সম্মেলন স্থল। সম্মেলনে প্রধান অতিথি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মেলন কাজ শুরু হয়। বুধবার (৬ নভেম্বর) বেলা ১১ টা ১০ মিনিটে বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন তিনি। এরপর পবিত্র কোরআন তেলওয়াত করা হয়।
এর আগে বেলা ১১টা ৭মিনিটে সম্মেলন স্থলে পৌঁছান তিনি। তার আগমনকে কেন্দ্র করে স্লোগান আর করতালি দিয়ে শুভেচ্ছায় মুখরিত হয়ে ওঠে পুরো এলাকা। দলীয় নেত্রীকে বরণ করে নেন কৃষক লীগের সভাপতি মোতাহার হোসেন মোল্লা এবং সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক রেজা। মঞ্চে উঠে শেখ হাসিনা নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে হাত নেড়ে অভিনন্দনের জবাব দেন।
আওয়ামী লীগের অন্যতম সহযোগী এ সংগঠনের এটি ১০ম সম্মেলন। প্রায় আট বছর পর কৃষক লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সম্মেলন হয় সর্বশেষ ২০১২ সালের ১৯ জুলাই। ৩ বছরের কমিটির মেয়াদ থাকলেও চলেছে প্রায় ৮ বছর।
এদিকে দীর্ঘদিন পর সংগঠনের সম্মেলনকে কেন্দ্র করে সোহারাওয়ার্দী উদ্যান পরিণত হয়েছে উৎসবের স্থান হিসেবে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও এর আশপাশ এলাকা সেজেছে বর্নিল সাজে। রাস্তার মোড়ে মোড়ে ব্যানার ফেস্টুনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনাকে শুভেচ্ছা জানানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে কেন্দ্র করে পুরো এলাকা ঝকঝকে করে তোলা হয়েছে।
শেখ হাসিনা সম্মেলন স্থালে পৌঁছালে মঞ্চের পাশে ‘আমার বাড়ি আমার খামার’-এর একটি মডেল দেখানো হয়। পরে পবিত্র আল কোরআনসহ ধর্মগ্রন্থ থেকে পাঠ করে সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়। পবিত্র কোরআন থেকে তেলোয়াত করেন কৃষক লীগের সহ সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা ওমর ফারুক। গীতা থেকে পাঠ করেন চন্দন জোতষী। বাইবেল থেকে পাঠ করেন গৌড়িয়া ঝর্না। ত্রিপিটক থেকে পাঠ করেন নৃঞ নৃঞ ক্ষেতো। ধর্মগ্রন্থ পাঠের পর প্রধান অতিথিকে কৃষক লীগের পক্ষ থেকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান সংগঠনটির নেত্রী উম্মে কুলসুম ও হোসনে আরা। প্রধানমন্ত্রীকে সম্মেলনের ব্যাজ পরিয়ে দেন কৃষক লীগের মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক ও সাংসদ শামীমা শাহরিয়ার।
‘যদি রাত পোহালে শোনা যেতো বঙ্গবন্ধু মরে নাই’, ‘কৃষক বাঁচাও দেশ বাঁচাও’ শীর্ষক গানের পর পরিবেশন করা হবে কৃষকদের গ্রামীণ নৃত্য। পরে বায়ান্ন থেকে একাত্তর পর্যন্ত শহীদদের স্মরণে শোক প্রস্তাব থাকবে। এরপর সভাপতির স্বাগত ভাষণের পর সাংগঠনিক রিপোর্ট পেশ করবেন কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদকদের। প্রধান অতিথির ভাষণের পর সম্মেলনের প্রথম পর্বে অনুষ্ঠান শেষ হবে। দ্বিতীয় সেশন শুরু হবে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে দুপুরের খাবারের বিরতির পর। এই সেশনে থাকবেন শুধু কাউন্সিলরা।
স্বাধীনতার স্মৃতিস্তম্ভ সংলগ্ন লেকের পূর্ব দিকের উত্তর পাশে দক্ষিণমুখী করে লম্বায় ৯০ ফুট আর প্রস্থে ৩০ ফুট মূল মঞ্চ করা হয়েছে। এর সামনে ৯ ফুট প্রস্থ আর ৪২ ফুট দৈর্ঘ্যের আরেকটি মঞ্চ করা হচ্ছে।
মঞ্চের ডানপাশে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং বাম পাশে সাংবাদিকের জন্য আলাদা দুটি মঞ্চ হচ্ছে। মঞ্চের সামনে থাকবে অতিথিদের বসার জায়গা। এরপরই থাকবে আগত কাউন্সিলর ও ডেলিগেটদের স্থান। সেখানে ২০ হাজার পর্যন্ত চেয়ার বসানোর জায়গা থাকবে বলে জানান কৃষক লীগের সভাপতি মোতাহার হোসেন মোল্লা।
কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক সামসুল হক রেজা রাইজিংবিডিকে জানান, ১০ হাজারের মত কাউন্সিলর হওয়ার কথা রয়েছে। তবে ডেলিগেটের কোনো হিসেব নেই।
কৃষক লীগ সূত্রে জানা গেছে, এবারের সম্মেলনে সংগঠনটির গঠনতন্ত্রে বেশ কিছু পরিবর্তন এবং সংযোজন-বিয়োজন হবে। বাড়তে পিারে কমিটির আকার।
দেশে কৃষির উন্নয়ন এবং কৃষকের স্বার্থ রক্ষার জন্য জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালের ১৯ এপ্রিল বাংলাদেশ কৃষক লীগ প্রতিষ্ঠা করেন।
কৃষক লীগের শীর্ষ দুই পদের জন্য আলোচনায় রয়েছেন সংগঠনের বর্তমান কমিটির কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ওমর ফারুক, সহ-সভাপতি শরীফ আশরাফ হোসেন, সহ-সভাপতি কৃষিবিদ বদিউজ্জামান বাদশা, সহ-সভাপতি শেখ মো. জাহাঙ্গীর আলম। সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সমীর চন্দ্র, সাংগঠনিক সম্পাদক সাবেক ছাত্রলীগ নেতা বিশ্বনাথ সরকার বিটু, কৃষিবিদ সাখাওয়াত হোসেন সুইট, আসাদুজ্জামান বিপ্লব, আবুল হোসেন, গাজী জসিম উদ্দিন, কাজী জসিম, আতিকুল হক আতিক।