দর্পণ ডেস্ক : শেষ মুহূর্তে আরসিইপি চুক্তি থেকে নিজেকে সরিয়ে নিল ভারত। এই চুক্তি হলে চীন থেকে আসা সস্তার কৃষি ও শিল্পসামগ্রী গ্রাস করে নেবে ভারতের বাজার, এই আশঙ্কা থেকেই আরসিইপি থেকে সরে দাঁড়াল ভারত।

দশ সদস্যের আসিয়ান দেশগুলি ও ব্লকের ছয়টি বাণিজ্যের অংশীদার দেশ- সব মিলিয়ে ষোলটি দেশের মধ্যে সাত বছর ধরে আলোচনা চলার পর ঘোষিত হতে চলেছে বিশ্বের বৃহত্তম বাণিজ্যচুক্তি রিজিওনাল কমপ্রিহেনসিভ ইকনোমিক পার্টনারশিপ বা আরসিইপি। আজ এই চুক্তির সফলতার কথা ঘোষণা করবে আসিয়ান গোষ্ঠীর অন্যতম দেশ থাইল্যা‌ন্ড।

সোমবার (৪ নভেম্বর) আসিয়ান সম্মেলনে ছিল ১৬টি দেশের মধ্যে আঞ্চলিক মুক্ত বাণিজ্যচুক্তি (আরসিইপি) নিয়ে বৈঠক ৷ ব্যাংককে হওয়া এই বৈঠকে ভারতের দৃঢ় অবস্থান স্পষ্ট করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ৷

ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, নরেন্দ্র মোদি ব্যাংককে আসিয়ান সম্মেলনে যোগ দিয়ে বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে জানায়, চুক্তির কারণে যে মূল স্বার্থে কোনও আপোষ হতে পারে না।

তিনি বলেন, একবার চুক্তি হলে ভারতের বাজার ভরে যাবে চীনা পণ্যে। অবশ্য এই সম্ভাবনা আগে থেকেই করছিল ভারত। সেটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা হিসেবে খোলা বাজারে সংরক্ষিত পণ্যের তালিকা তৈরির বিষয়ে জোর দিয়েছিল তারা।

কিন্তু সেই প্রচেষ্টা ফলপ্রসূ না হওয়ায় মোদি জানান, একজন ভারতীয় হিসেবে এই চুক্তির মূল্যায়ন করে আমি কোনও ইতিবাচক উত্তর পাইনি। তাই গান্ধিজির আদর্শ বা আমার বিবেক – কেউই এতে মত দেয়নি।

উল্লেখ্য, এই চুক্তির বিরোধিতা করেছে ভারতের প্রধান বিরোধী দল ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস এবং রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সঙ্ঘ।

এ বিষয়ে সংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী টুইট করে বলেন, ‘এই চুক্তি হলে মেক ইন ইন্ডিয়া থেকে এবার বাই ফরম চায়না হয়ে যাবে ৷’

প্রিয়াঙ্কা গান্ধী বলেছেন, ‘ব্যাপক আর্থিক মন্দার মুখোমুখি ভারত ৷ ৯০ লক্ষ কর্মসংস্থান কমেছে ৷ এই চুক্তি হলে আর অবনতি হবে পরিস্থিতির ৷’

ভারত ছাড়া আসিয়ান গোষ্ঠীভুক্ত বাকি ১০টি দেশ ও বাকি পাঁচ দেশ আরসিইপি নিয়ে অবশ্য একমতে পৌছেছে। প্রায় দু’বছর ধরে আসিয়ান গোষ্ঠীভুক্ত বাকি ১০টি দেশ ছাড়াও আরও পাঁচ দেশের মধ্যে এই রিজিওনাল কমপ্রিহেনসিভ ইকনোমিক পার্টনারশিপ নিয়ে আলোচনা চলছে। এই ১৬টি দেশের জনসংখ্যা ৩৬০ কোটি যা প্রায় গোটা বিশ্বের জনসংখ্যার অর্ধেক। তাই এই চুক্তি হলে বিশ্বের সব থেকে বড় মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল খুলে যাবে বিশ্বের সামনে। খবর অনুযায়ী, ভারতের এই সিদ্ধান্তের পরেও বাকি দেশগুলি এই অস্থায়ী চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে পারে।

আরসিইপি বা এই বৃহৎ চুক্তি সম্পর্কে পাঁচ দরকারি তথ্য:

১. রিজিওনাল কমপ্রিহেনসিভ ইকনোমিক পার্টনারশিপ বা আরসিইপি-এর সদস্য সংখ্যা ১৬। আসিয়ান সদস্যভুক্ত দশটি ও ব্লকের মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির ছয় সদস্য যথা চীন, ভারত, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড। আরসিইপি ব্লকটি বিশ্বব্যাপী মোট দেশজ উৎপাদনের এক তৃতীয়াংশ এবং বিশ্বের প্রায় জনসংখ্যার অর্ধেক অংশ।

২. ২০১২ সালে আসিয়ান নেতাদের সঙ্গে ও ছয় অংশীদার দেশের আরসিইপি নিয়ে আলোচনা শুরু হয় নম পেনে একবিংশতম আসিয়ান সম্মেলনে। লক্ষ্য ছিল আসিয়ান দেশ ও তাদের অংশীদারদের মধ্যে আধুনিক, উচ্চমানের এবং পারস্পরিক লাভজনক একটি বাণিজ্য চুক্তি তৈরি করা।

৩. নতুন করে আরসিইপি চুক্তিকে কার্যকর করার ব্যাপারে উদ্যোগ নেয় চীন। আমেরিকার সঙ্গে চীনের বাণিজ্য-লড়াইয়ের ফলে গত পাঁচ বছরে এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয়েছে।

৪. চীনা আমদানির সম্ভাব্য বিপুল বন্যার কথা মাথায় রেখে ভারত ঘরোয়া বাজারকে রক্ষা করতে উদ্যোগী হয়ে দাবি জানিয়েছে।

৫. তিনদিনের থাইল্যান্ড সফরে গিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। শনিবার তিনি জানান, ‘‘অস্থিতিশীল বাণিজ্য ঘাটতি”র প্রসঙ্গে ভারতের উদ্বেগ গুরুত্বপূর্ণ। ‘ব্যাংকক পোস্ট’ নামের এক সংবাদপত্রকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এবিষয়ে জানান। বলেন, তাঁরা যুক্তিযুক্ত প্রস্তাব দিয়েছেন এবং এই আলোচনায় আন্তরিকভাবে অংশ নিচ্ছে।