দর্পণ ডেস্ক : অরণ্যই তাদের ধাত্রী। তারা জানেন, অরণ্য আছে বলেই তারা বেঁচে আছেন। বহির্জগতের কাছে হয়তো তারা ‘অনুন্নত’, ‘অশিক্ষিত’, ‘অসভ্য’। কিন্তু তাদের এই শিক্ষাটুকু জীবন শিখিয়ে দিয়েছে, যে প্রকৃতি না থাকলে মানুষও থাকবে না। অরণ্য না থাকলে তারাও থাকবেন না। তাই অবৈধ কাঠুরেদের অনুপ্রবেশে কড়া নজর রাখছেন তারা। নতুন করে যাতে আর কেউ কোনও ক্ষতি না করতে পারে, সে জন্য জান লড়িয়ে দিয়েছেন সর্বোচ্চ প্রতিরোধে। দিন-রাত এক করে রুখে দিচ্ছেন, আগুন বাড়ানোর চক্রান্ত।

ব্রাজিলে আমাজন অরণ্যের ভূমি রক্ষায় আন্দোলনকারী এক আদিবাসীকে গুলি করে খুন করার অভিযোগ উঠেছে। শুক্রবার মারানহো রাজ্যে আরারিবইয়া সংরক্ষিত অঞ্চলে ২৬ বছরের পাওলো পাওলিনো গুয়াজাজারাকে মাথায় গুলি করে হত্যা করেছে অবৈধ কাঠুরেরা। তার অপরাধ, আমাজন রক্ষা করার চেষ্টায় ‘অরণ্যের অভিভাবক’ দলের সক্রিয় কর্মী ছিলেন তিনি। খবর দ্য ওয়াল

হ্যাঁ, স্থানীয় উপজাতির মানুষগুলোর কাছে এটা চক্রান্তই। তারা মনে করেন, বনজ সম্পদ, চাষের জমি, দামি খনিজ পদার্থের লোভে ইচ্ছে করে আগুন লাগানো হয়েছে আমাজনে। তবে তারা একাই নয়। এই অভিযোগ উঠেছে বিশ্বজুড়ে। প্রেসিডেন্ট জাইরো বলসোনারো ক্ষমতায় আসার পর থেকেই তার অরণ্য-নীতি সমালোচনার মুখে। সংরক্ষিত এলাকায় চাষজমি খনি খোঁজার ব্যাপারে অনুশাসন আলগা করেছেন তিনি, আর তাতেই মাথা চাড়া দিয়েছে খনিমাফিয়া, জমিমাফিয়ারা। অবাধে সাফ হয়ে যাচ্ছে অরণ্য। আর সেই সাফাইয়েরই বড় রূপ এই অগ্নিকাণ্ড। উপগ্রহ চিত্রও বলেছে, এইআগুন প্রাকৃতিক নয়, ম্যানমেড।

এ ভাবে আগুন লাগিয়ে আমাজন উজাড় করা শুরু হয়েছে অগাস্ট মাস থেকেই। তার পর থেকেই নিয়মমাফিক পাহারা দিতে শুরু করেছেন তারা। আমাজনের বিশাল এলাকার আগুনের ঘটনায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমালোচনার পরেই এই পদক্ষেপ তাঁদের।

নিহত আদিবাসী পাওলো তার নিজের এলাকায় কাঠুরেদের চক্রের বিরুদ্ধে আন্দোলনরত ‘গার্ডিয়ান্স অব দ্য ফরেস্ট’ অর্থাৎ ‘অরণ্যের অভিভাবক’ গোষ্ঠীর সক্রিয় সদস্য ছিলেন তিনি। এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আমাজন সুরক্ষার দাবিতে আন্দোলনকারীদের হিংসা আরও বেড়ে ওঠার আশঙ্কা করা হচ্ছে। কারণ ঘটনার পরে রীতিমতো ফুঁসছেন তারা। অভিযোগ তুলেছেন, সংরক্ষিত বনাঞ্চলে ফাঁদ পেতে পাওলোকে হত্যা করেছে অবৈধ কাঠুরেরা। আরও এক আদিবাসী আহতও হয়েছে বলে দাবি তাদের। পুলিশ জানিয়েছে, আদিবাসীদের পাল্টা গুলিতে এক কাঠুরেও নিহত হয়েছে।

এই এলাকার বিচ্ছিন্ন আদিবাসী গোষ্ঠীগুলির উন্নতির জন্য গড়ে তোলা এনজিও ‘সারভাইভাল ইন্টারন্যাশনাল’ জানিয়েছে, এর আগেও তিন জন স্থানীয় আন্দোলনকারীকে হত্যা করা হয়েছে। আমাজনের পূর্বাঞ্চলে এই আদিবাসীদের এলাকাটি সংরক্ষণ ও সুরক্ষায় ব্যর্থ হওয়ায় ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট বলসোনারোর বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছে তারা।

ব্রাজিলের আইনমন্ত্রী হের্গিও মোরো বলেছেন, “পুলিশ ঘটনাটি তদন্ত করছে। এই গুরুতর অপরাধে জড়িতদের শাস্তির মুখোমুখি করতে কোনও ছাড় দেওয়া হবে না।”