দর্পণ রিপোর্ট : অগ্রণী স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষিকা ও সংগীতা বিশ্বাস এবং একই কলেজের সহকারী অধ্যাপক প্রশান্ত কুমার সরকারের একমাত্র মেয়ে অরুন্ধতী সরকার প্রজ্ঞা ২০১৯-২০২০ শিক্ষাবর্ষে এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষায় কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ন হয়ে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে পড়ার সুযোগ পেয়েছে। এবছর ৪৯ হাজার ৪১৩ জন পরীক্ষার্থী ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে, যার মধ্যে প্রজ্ঞার মেধা তালিকাক্রম ১০৯০। এ মেধাক্রমের কারনেই সে সরকারী মেডিকেল কলেজ গুলোর মধ্যে সেবার মানে অন্যতম ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে।

ছবি: মা-বাবা ও ছোট ভাইয়ের সাথে প্রজ্ঞা

শিক্ষক দম্পতির দুই সন্তানের মধ্যে জ্যেষ্ঠ এবং একমাত্র কন্যা প্রজ্ঞা ছোটবেলা থেকেই প্রচন্ড মেধাবী। জেএসসি, এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায়ও সে সর্বোচ্চ জিপিএ-৫ পেয়েছিল। এছাড়া এবছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায়ও সে উত্তীর্ণ হয় । তার মা-বাবা স্বপ্ন দেখতেন মেয়ে একদিন ডাক্তার হয়ে মানুষের সেবা করবে, মা-বাবার সে স্বপ্নও সত্যি করেছে প্রজ্ঞা।

তার মা শিক্ষিকা সংগীতা বিশ্বাস সাংস্কৃতিক অঙ্গনেও বেশ সুপরিচিত। তিনি স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদ ও বাংলাদেশ আওয়ামী সাংস্কৃতিক ফোরাম কেন্দ্রীয় কমিটির কার্যকরী সদস্য, বঙ্গবন্ধু সাহিত্য একাডেমী কেন্দ্রীয় কমিটির মহিলা ও শিশু বিষয়ক সম্পাদক।
ডাক্তারি পড়ার সুযোগ পেয়ে প্রজ্ঞা অত্যন্ত উচ্ছ্বসিত। প্রজ্ঞা তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, “মা-বাবার স্বপ্ন ছিলো মেয়েকে ডাক্তারি পড়াবে। আজ মা-বাবার স্বপ্নের প্রাথমিক ধাপ সম্পন্ন করতে পেরে নিজেকে গর্বিত মনে করছি। তবে লক্ষ্য থাকবে একটাই। এখন শুধুই এগিয়ে যাওয়ার এবং স্বপ্ন পূরণের পালা। সবার কাছে আর্শিবাদ কামনা করি। যাতে মা-বাবা ও আত্মীয়-স্বজন সহ সকলের স্বপ্ন পূরণ করতে পারি।”


স্কলার্স স্কুল এন্ড কলেজে ইংলিশ মিডিয়ামে পড়া প্রজ্ঞা শুধু পুঁথিগত বিদ্যার মধ্যেই তার শিক্ষাজীবন আটকে রাখেনি বরং ছোটবেলা থেকেই সাংস্কৃতিক অঙ্গনেও ছিল তার সরব উপস্থিতি। গান, নাচ ডিবেটিং ও উপস্থাপনায় সে সমানভাবে পারদর্শী।
স্কলার্স স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষকবৃন্দ জানান, প্রজ্ঞা অত্যন্ত মেধাবী ছাত্রী। সে এমন ভালো ফলাফল করবে বলেই আমাদের বিশ্বাস ছিল। তার অসামান্য সাফল্যে আমরা আজ আনন্দিত এবং গর্বিত।

তার আজকের এ সাফল্যজনক অবস্থানে আসার জন্য তার মা-বাবার উদার মনোভাব ও বাস্তববাদী চিন্তা-ভাবনাই মূল ভূমিকা রেখেছে।
প্রজ্ঞার গর্বিত বাবা বলেন, “আমার মেয়ে আমার কাছে রাজকুমারী। আজকের এ সাফল্য তার অক্লান্ত পরিশ্রমেরই ফসল।”
তার মায়ের উচ্ছ্বাসটা স্বাভাবিক ভাবেই আরও বেশি, ফেইসবুকে দেয়া সঙ্গীতা বিশ্বাসের পোষ্টে প্রজ্ঞার বেড়ে উঠা সম্পর্কে সম্যক ধারনা পাওয়া যায়। তার পোষ্টটি হুবহু দেয়া হলঃ


সৃষ্টিকর্তার অশেষ কৃপায় আপনাদের সকলের আশীর্বাদ ও আমার রাজকুমারী অরুন্ধতী সরকার প্রজ্ঞার অক্লান্ত পরিশ্রম ও অধ্যবসয়ে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে চান্স পেয়েছে। সকলে আশীর্বাদ করবেন লক্ষি মেয়েটা যেনো প্রকৃত মানুষ হয়ে মানুষের সেবায় নিবেদিত হয়। ছোটবেলা থেকে আমি একটা কথা শুনে বড় হয়েছি প্রায় সকলেই আমাকে দেখে বলতো আমি ভাগ্যবতী। আমি কথাটার অর্থ বুঝতাম না তখন।বড় হওয়ার পর যদি কখনো কোন কারনে আমার মন খারাপ হতো আমি ভাবতাম কেন লোকে আমায় ভাগ্যবতী বলতো? কিন্তু আজ আমি বুঝতে পারছি সত্যিই আমি ভাগ্যবতী দেবতার মত আমার পতিজী আর দুইটা ছেলে মেয়ে ঈশ্বরের আশীর্বাদ আমার  রত্ন ওরা। খুব অল্প বয়সে আমার বিয়ে হয় তখন সবেমাত্র মাধ্যমিক পাশ করেছি আর বিয়ের অল্প সময়ের মধ্যেই আমাদের ঘর আলো করে আমার এই লক্ষি প্রতিমা আসে আমাদের ঘরে। আমি সব সময় চেয়েছি আমার সন্তান বাস্তবতার মধ্য দিয়ে মানবিক মানুষ হয়ে উঠুক। তাই আমি ওদের ওপর কখনো কোন কিছু চাপিয়ে দেয়নি আর দশটা মায়েদের মত ওদের আমি সময়ও দিতে পারিনি অনেকটা ইচ্ছা করেও দেইনি।আমি চেয়েছি ওরা সাবলম্বী হোক। নিজের ওপর নির্ভর করে দ্বায়িত্ব নিয়ে বেড়ে উঠুক। ওদের বই খাতা পেন্সিল ওরা নিজেরাই সব সময় গুছিয়ে নিয়েছে। যখন যেটা টিফিন আমি বানিয়ে দিয়েছি সেটাই সানন্দে গ্রহণ করেছে ওরা কখনোই কোন বায়না করেনি। ওদের আমি একটা কথা বলেছি সব সময় এমন কোন কাজ করবেনা কারো কাছে নালিশ শুনতে হয়।ঈশ্বরের আশীর্বাদে সন্তানদের জন্য কারো কাছে কোন নালিশও শুনতে হয়নি। ঈশ্বর যেনো বাকী জীবনটাও এমনই রাখে ওদের। দু একদিনের জন্য কোথাও কাজে গেলে সেই ছোট্টবেলা থেকে ওদেরকে রেখেই যেতাম আর তার জন্য আমাকে লোকের কাছে অনেক কথাও শুনতে হতো আমি না কি আমার ছেলে মেয়ের কোন টেককেয়ার করিনা তাই আমার সন্তান পড়াশোনা শিখবে না মানুষ হবেনা আমি কিছুই বলতাম না শুধু হাসতাম ঠিক এখনো যেমন হাসি। ওদের আমি সেই প্লে গ্রুপ থেকে স্টেজে উঠিয়ে দিয়েছি চেয়েছি পড়াশোনার পাশাপাশি ওরা অন্য সবকিছুতে পারদর্শী হয়ে উঠুক।ওরা যতটা সম্ভব সেটাও পেরেছে ওদের চেষ্টায়। আজ প্রজ্ঞা যা কিছু করেছে সব ওর নিজের চেষ্টায় আমি মা হয়ে আমার কোন অবদান নেই ওর এই সাফল্যে এবং আমি এটাই চেয়েছি ও নিজেই পারুক।আমি এটা বলতে কখনোই চাইনি আমি সন্তানের জন্য এতো কষ্ট করেছি আর তার বিনিময়ে এই সাফল্য। ওদের অনুপ্রেরনা যোগানোর চেষ্টা করেছি বাস্তব প্রেক্ষাপট বোঝানোর চেষ্টা করেছি কতোটা পেরেছি জানিনা তবে যেটা চেয়েছি আমার সন্তানরা অনেকটা সেরকমই হয়েছে। আমার সোনা মেয়ের এই সাফল্য শুধু তার। আমি ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি মানবিক সন্তান হয়ে সকলের পাশে যেনো সে থাকতে পারে।

উল্লেখ্য, ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজে এমবিবিএস কোর্সের প্রথম বর্ষে ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল গত ১৫ অক্টোবর মঙ্গলবার প্রকাশিত হয়েছে। পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন ৪৯ হাজার ৪১৩ জন। এদের মধ্যে মেয়ে ২৬ হাজার ৫৩১ জন, আর ছেলে ২২ হাজার ৮৮২ জন। চলতি বছরের এমবিবিএস পরীক্ষায় ৯০.৫ নম্বর পেয়ে প্রথম স্থান অর্জন করেছেন একজন ছেলে। মেয়েদের মধ্যে যিনি প্রথম হয়েছেন, তাঁর নম্বর ৮৯.৬৭।
১১ অক্টোবর সারা দেশে একযোগে এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। পরীক্ষায় সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেলে ১০ হাজার ৪০৪ আসনের বিপরীতে অংশ নেন ৬৯ হাজার ৪০৫ জন।
দেশের সরকারি মেডিকেল কলেজগুলোয় ভর্তিপ্রক্রিয়া শুরু হবে ২২ অক্টোবর, আর শেষ হবে ৩১ অক্টোবর। সরকারি মেডিকেলে ভর্তি শেষ হওয়ার পর বেসরকারি মেডিকেলগুলোতে ভর্তি শুরু হবে।