লিটন হোসেন লিমন, নাটোর প্রতিনিধি :
নাটোরে একজন জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে অনিয়মের খবর প্রচার যমুনা টিভির স্টাফ রিপোর্টারের বিরুদ্ধে একই দিনে দু’টি মামলা করা হয়েছে। নাটোরে জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের উপ প্রচার সম্পাদক মোঃ আলী আকবরের হুমকি-ধামকি, চাঁদাবাজি, দোকান ও পুকুর দখল, অনিয়ম করে জামাইয়ের নামে জেলা পরিষদের জমি লিজ নিয়ে দেয়ার অভিযোগের বিরুদ্ধে যমুনা টিভিতে সচিত্র প্রতিবেদন প্রচার করায় টিভির স্টাফ রিপোর্টার নাজমুল হাসানের নামে দু’টি মামলা দায়ের করেছে আলী আকবরের ঘনিষ্ঠ দুই সমর্থক। অনুসন্ধানে জানা গেছে মামলা দু’টি উদ্দেশ্যে প্রণোদিত। নাটোরের অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে চাঁদাবাজির অভিযোগ এনে দু’টি মামলা করা হয়। আলী আকবর নিজে উপস্থিত থেকে তার সমর্থক শহরের আলাইপুর এলাকার বাসিন্দা খন্দকার সোহেল রানা সৈকতকে দিয়ে প্রথম মামলাটি করান। অভিযোগে উল্লে¬খ করা হয়, গত ৩ মে সৈকত তার নিকট আত্মীয় আজিজুল হকের গাজীপুর বিলে পুকুর কাটার তদারকি করার সময় এক লাখ টাকা চাঁদা দাবী করা হয়। অনুসন্ধানে বেড়িয়ে আসে মোঃ আজিজুল হক মামলার বাদী সৈকতের কোন নিকট আত্বীয়ই নয়। আজিজুল হকের জমি লিজ নিয়ে পুকুর কাটাচ্ছেন মোস্তফা নামে স্থানীয় একজন। মোঃ আজিজুল হক জানান ওই জমি তিনি নিজে লিজ নিয়ে পুকুর কাটাচ্ছেন এবং এ পর্যন্ত কোন সাংবাদিকর তার কাছে আসেননি। জমির মালিক বর্তমানে বিদেশে অবস্থান করছেন। সোহেল রানা সৈকতের নামে তিনি কাউকে চিনেনও না তাই তার তদারকি করার প্রশ্নই আসেনা। এবিষয়ে খন্দকার সোহেল রানা সৈকতের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান, তার নিজের বা নিকট আত্মীয়ের কোন পুকুরই নেই। পুকুর না থাকার পরে পুকুর সংক্রান্ত মামলা হয় কীভাবে তা জানতে চাইলে তিনি কোন সদুত্তর দিতে না পেরে মোবাইল সংযোগ কেটে দেন। দ্বিতীয় মামলাটি করেন নাটোর সদর উপজেলার সুলতানপুর গ্রামের ইসলাম উদ্দিন। গত ১৩ তারিখে দায়ের হওয়া মামলার আর্জীতে বাগরুম বাজারে তার কাছে মোট অংকের চাঁদা চেয়ে না পেয়ে বাদীকে পেটানো সহ হুমকি ধামকির কথা উল্লে¬খ করা হয়েছে। অনুসন্ধানে দেখা যায, ওই দিন সাংবাদিক নাজমুল হাসান কাদিরাবাদে সেনা বাহিনী পরিচালিত বাউয়েট ক্যাম্পাসে আন্তঃ প্রযুক্তি প্রতিযোগিতা মেলায় আমন্ত্রিত হয়ে সকাল দশটা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তার সাথে জনকণ্ঠের সাংবাদিক কালিদাস রায়ও উপস্থিত ছিলেন। বাউয়েট এর শিক্ষক হামিদুল ইসলাম ও রেজিষ্টার মোশারফ হোসেন জানান, ১০ তারিখে যমুনা টেলিভিশনের স্টাফ রিপোর্টার নাজমুল হাসান তাদের আমন্ত্রিত অতিথি হিসাবে সকাল ১০টায় রেজিষ্ট্রেশন করেছেন। ওই মামলার বাদি ইসলাম উদ্দিনের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করে নাজমুল হাসানকে তিনি খুব ভালো করে চিনেন না বলে জানান। সেনাবাহিনী পরিচালিত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোগামে থাকার পরে কেন নাজমুলের নামে মামলা করলেন এমন প্রশ্নে ইসলাম উদ্দিন ভুল স্বীকার করে ‘তাহলেতো ভুল-ই হয়ে গেল’ বলে মোবাইলের সংযোগ কেটে দেন। এ বিষয়ে কথা বলতে মোবাইলে একাধিকবার জেলা পরিষদেও প্যানেল চেয়ারম্যান আলী আকবরকে ফোন করলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। যমুনা টেলিভিশনের স্টাফ রিপোর্টার নাজমুল হাসান জানান, গত ৭ ও ৮, ৯ মে যমুনা টেলিভিশনের প্রতিঘন্টার সংবাদ ও ক্রাইম সিনে জেলা পরিষদ সদস্য আলী আকবরের হুমকি ধামকি, চাঁদাবাজি, দোকান ও পুকুর দখল নিয়ে মাটি ভরাটে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রচারিত হয়। ওই প্রতিবেদন করার সময় থেকে তার সাথে বার বার সমঝোতার প্রস্তাব আসছিল। রিপোর্ট প্রচার করা হলে কয়েকটি মামলা হবে এমন কথাও বলা হয়েছিল। উদ্দেশ্য প্রণোদিত হয়ে আলী আকবর তার দুই সমর্থক দিয়ে মামলা দু’টি করিয়েছেন। মামলার তথ্যগত ত্রুটিই বলে দেয় এগুলো মনগড়া। এক সময়ে অবশ্যই প্রকৃত সত্য উদঘাটন হবে। এব্যাপারে নাটোর জেলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি মোঃ মাহফুজ আলম মুনী তীব্র প্রতিবাদ করে এক বিবৃতিতে বলেন, নাজমুল হাসানের মতো একজন সৎ ও সাহসী সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক মামলা করাটা খুবই দুঃখ জনক। তার ওই মিথ্যা মামলাটি তিনি অবিলম্বে প্রত্যাহারের দাবী জানান। নাটোর টিভি রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি বাপ্পী লাহিড়ী জানান, বিষয়টি নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। একজন জনপ্রতিনিধির এ ধরনের আচরণ মোটেও কাম্য নয়। অবিলম্বে মামলাটি প্রত্যাহার না হলে কঠোর কর্মসুচি দেওয়া হবে