দর্পণ ডেস্ক : জঙ্গি হামলার শঙ্কা মাথায় নিয়েই বিলম্বিত পার্লামেন্ট নির্বাচনের ভোট চলছে আফগানিস্তানে। নিরাপত্তা হুমকি থাকায় স্থগিত রয়েছে ৩০ শতাংশ কেন্দ্রের ভোটাভুটি। বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ৯টায় শুরু হওয়া ভোট চলবে বিকাল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত। ফলাফল ঘোষণা হবে আগামী ১০ নভেম্বর।
শনিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) অনুষ্ঠিতব্য এই নির্বাচনকে ঘিরে নেয়া হয়েছে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। দেশজুড়ে মোতায়েন থাকছে তিন লাখ নিরাপত্তাকর্মী। আরও থাকছেন এক লাখ পর্যবেক্ষক।
বার্তা সংস্থা ইকনার প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, আফগানিস্তানে সর্বশেষ ২০১৪ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ওই নির্বাচনে প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বী আশরাফ ঘানি ও আব্দুল্লাহ আব্দুল্লাহর কেউই নিরঙ্কুশ বিজয় লাভ করতে পারেনি। দুজনই পরস্পরের বিরুদ্ধে ভোট জালিয়াতির অভিযোগ তুলতে থাকলে অচলাবস্থা তৈরি হয়। দুই মাস পর যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় আশরাফ ঘানি প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেন আর আব্দুল্লাহ আব্দুল্লাহ নবগঠিত প্রধান নির্বাহীর পদ নেন।
আফগানিস্তানে গত বুধবার রাতে শেষ হয়েছে ২৮ দিনের নির্বাচনী প্রচারণা। আজ দেশটির স্বাধীন নির্বাচন কমিশনের অধীনে ভোটগ্রহণ শুরু হবে। দেশটির সংবিধান অনুযায়ী প্রেসিডেন্ট হতে গেলে ৫০ শতাংশের বেশি ভোট প্রয়োজন। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো জানায়, এবারের নির্বাচনে প্রার্থী ১৮ জন।
নির্বাচনে ৯৭ লাখ আফগানের ভোট দেওয়ার কথা। যাদের মধ্যে ৩৩ লাখ নারী। নির্বাচনের প্রাথমিক ফলাফল ঘোষণা করা হবে ১৯ অক্টোবর। সেখানে বিজয়ী ১৫ জন প্রার্থীকে নিয়ে পরবর্তী প্রক্রিয়া শুরু হবে। আগামী ৭ নভেম্বর দেওয়া হবে চূড়ান্ত ঘোষণা।
গণমাধ্যম বলছে, হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে বর্তমান প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানি, গুলবুদ্দিন হেকমাতিয়ার আর আবদুল্লাহ আবদুল্লাহর মধ্যে। আফগানিস্তান বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় হস্তক্ষেপ করার প্রায় দুই দশক হতে চলল। আফগানিস্তানে মার্কিন অভিযানের পর পেরিয়ে গেছে ১৮ বছর। তালেবানের সঙ্গে দফায় দফায় শান্তি আলোচনা ব্যর্থ হওয়ার পর দেশটিতে প্রায় প্রতিদিনই চলছে বোমা হামলা। তাই এবারের নির্বাচনকে চ্যালেঞ্জপূর্ণ বলছেন অনেকে।
২০০১ সালে র্মাকিন নেতৃত্বাধীন সেনারা তালেবানদের ক্ষমতা থেকে উৎখাত করার পর চতুর্থবারের মতো আফগানিস্তানে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এমন এক সময়ে এ নির্বাচন হচ্ছে, যখন আফগানিস্তান এক ক্রান্তিকাল পার করছে। তাই এবারের নির্বাচনে যিনিই জয়লাভ করবেন, তাকে ইতিহাস বদলে দেওয়ার মূল ভূমিকা পালন করতে হবে আফগানিস্তানের।
২০১৫ সালে এ নির্বাচন হবার কথা থাকলেও প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের কিছু আইন সংশোধনে সৃষ্ট অসন্তোষ আর রাজনৈতিক জটিলতায় তা পিছিয়ে পড়ে। ২৪৯ আসনে লড়ছেন আড়াই সহস্রাধিক প্রার্থী। তবে, শক্ত কোন বিরোধী দল না থাকায় বর্তমান প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানি এবং সরকারের প্রধান নির্বাহী আব্দুল্লাহ আব্দুল্লাহ গঠিত জাতীয় ঐক্যজোটই বিজয়ী হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সাত হাজার কেন্দ্রে ভোটের কথা থাকলেও হামলার শঙ্কায় প্রায় দু’হাজার কেন্দ্রের কার্যক্রম স্থগিত হয়েছে। নির্বাচন বয়কটের আহ্বান জানিয়ে হামলার হুমকি দিয়েছে জঙ্গি সংগঠন তালেবান ও আইএস। গণসংযোগ চলাকালেই আলাদা জঙ্গি হামলায় নিহত হয়েছেন ১০ প্রার্থী। এসব হুমকি এবং সাম্প্রতি একাধিক হামলাকে গুরুত্ব দিয়ে মোতায়েন করা হয়েছে সেনা ও পুলিশের চুয়ান্ন হাজারের বেশি সদস্য।