অনলাইন ডেস্ক : ১৫ বছর ধরে জাহানারা বেগম রাজধানীর দারুসসালামে লালকুঠি এলাকার তৃতীয় কলোনির ২৫২/১ নম্বর টিনশেড বাসায় কাজ করেন। ওই বাসার গৃহকর্ত্রী ছিলেন শাহানা আলম খান বিউটি। তিনি ধানমন্ডির ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল সানিডেলের হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা ছিলেন। শাহানার স্বামী কামাল হোসেন পুলিশের এএসআই। তিনি মাগুরা সদর থানায় কর্মরত। শাহানা আলম ও জাহানারা বেগমের বাড়ি টাঙ্গাইলের একই গ্রামে। সেই সূত্রে জাহানারা ঢাকায় ওই বাসায় গৃহকর্মী হিসেবে কাজ শুরু করেন। জাহানারার ছেলে আরাফাত তালুকদার (১৭) চলতি বছর এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। টাঙ্গাইল থেকে মাঝে মধ্যেই আরাফাত লালকুঠির ওই বাড়িতে আসত। গত ৬ মে সন্ধ্যায় টিনশেড বাড়ি থেকে হাত-পা বাঁধা ও মুখে স্কচটেপ প্যাঁচানো অবস্থায় শাহানার (৪৫) লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় গতকাল মিরপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে পুলিশ জাহানারার ছেলে আরাফাতকে গ্রেফতার করে। পুলিশের দারুসসালাম জোনের সহকারী কমিশনার জাহাঙ্গীর আলম জানান, জিজ্ঞাসাবাদে আরাফাত গৃহকর্ত্রীকে খুনের কথা স্বীকার করেছে।
পুলিশ আরো জানায়, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হয়েছিল যে পারিবারিক সম্পত্তি ভাগবাটোয়ারা এবং দাম্পত্য কলহের জের ধরে এই খুনের ঘটনা ঘটেছে। এএসআই কামাল ও শাহানা দুজনেরই দ্বিতীয় বিয়ে। শাহানা ছিলেন নি:সন্তান। আবার কয়েক বছর আগে শামসুল আলম লালকুঠির ওই টিনশেড বাড়ি তার ছোট মেয়ে ঋতুর নামে লিখে দেন। এই নিয়ে দুই বোনের মধ্যে দ্বন্দ্বও চলছিল।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেন, ওই বাড়িতে ৮০ বছর বয়সী বাবা টাঙ্গাইলের অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা শামসুল আলম খান, ছোট বোন রুখসানা আলম খান ঋতু, তার স্বামী ও এক সন্তান বসবাস করেন। ১ মে’র ২/৩ দিন আগে ওই বাড়ি থেকে ঋতু তার পরিবারসহ শ্বশুরবাড়ি যান। ১ মে গৃহকর্মী জাহানারা টাঙ্গাইলে যান। তার কাছ থেকে আরাফাত জানতে পারে যে লালকুঠির বাড়িতে বৃদ্ধ বাবা ছাড়া কোন পুরুষ মানুষ নেই। আরাফাত ৬ মে সকালে টাঙ্গাইল থেকে ঢাকায় আসে। লালকুঠির বাসায় চুরি করার পরিকল্পনা নেয়। সে অনুযায়ি বিকালে বাসায় ঢুকে। এ সময় অসুস্থ শামসুল আলম বিছানায় শুয়ে ছিলেন। পাশের কক্ষে আরাফাত প্রবেশ করে আলমিরার ড্রয়ার খুলে ৫ হাজার টাকা পায়। এছাড়া অন্যান্য ড্রয়ার হাতড়ে একটি স্বর্ণের নাকফুল পায়। এ সময় সে গৃহকর্ত্রী প্রবেশের শব্দ পেয়ে কক্ষের বাতি বন্ধ করে চুপ করে বসে থাকে। অন্ধকার কক্ষে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে আরাফাত গৃহকর্ত্রীকে জাপটে ধরে মুখে স্কচটেপ প্যাচিয়ে ফেলে। পরে দড়ি দিয়ে হাত ও পা বেঁধে ফেলে গৃহকর্ত্রীকে গলা টিপে হত্যা করে। পরে ৫ হাজার টাকা, একটি স্বর্ণের নাক ফুল ও গৃহকর্ত্রীর মোবাইল ফোনসেট নিয়ে সাভারে তাদের এক আত্মীয়র বাসায় পালিয়ে যায়।