গোফরান পলাশ, পটুয়াখালী: পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় ক্ষমতাসীন দল আওয়ামীলীগের
সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীন কোন্দলে শহরে দফায় দফায় বিক্ষোভ
মিছিল ও সশস্ত্র সংঘর্ষে স্থানীয়দের মধ্যে আতংক ছড়িয়ে পড়েছে। এমপি গ্রুপ,
উপজেলা চেয়ারম্যান গ্রুপ ও মেয়র গ্রুপের ছাত্রলীগ নামধারীরা একে অপরের
উপর সন্ত্রাসী হামলা, কুপিয়ে রক্তাক্ত জখম করা ও চাঁদাবাজি করা এখন যেন
তাদের রুটিন ওয়ার্কে পরিনত হয়েছে। এসব গ্রুপের লিডিং পজিশনে থাকা
ক্যাডাররা গ্রুপের সদস্য ভারী করতে সন্ত্রাসী, মাদক বিক্রেতা, চাঁদাবাজ
নাম ধারী কিশোর যুবকদের ছাত্রলীগের পরিচয়ে দলে প্রবেশের সুযোগ করে দেয়ায়
নিয়ন্ত্রনহীন হয়ে পড়েছে ঐতিহ্যবাহী সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ’র স্থানীয়
ইউনিট। মূল দল সহ সহযোগী সংগঠন গুলোতে দশবছরেও নেতৃত্বের পরিবর্তন না
হওয়া এবং ছাত্র সংগঠনের নেতৃত্বকে জনপ্রতিনিধিরা নিজেদের হাতিয়ার হিসেবে
ব্যবহার করায় ছাত্রলীগ নামধারী এসব সন্ত্রাসী গ্রুপ গুলো নিজেদের শক্তি
প্রদর্শন করায় এমন অরাজক অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলছেন রাজনৈতিক সংগঠকরা।
জানা যায়, ২০০৯ সালে উপজেলা ছাত্রলীগের সম্মেলনে সাবেক সাংসদ মাহবুব
অনুসারী মাহমুদুল হাসান সুজন মোল্লাকে সভাপতি ও নাসির উদ্দীন সোহাগকে
সম্পাদক করে কমিটি গঠন করা হয়। উক্ত কমিটি ছাত্রলীগের কার্যক্রম পরিচালনা
করে। এরপরও সাবেক সাংসদ জুকু-খালিদের নেতৃত্বে গড়ে তোলেন
যুবলীগ-ছাত্রলীগের পৌর কমিটি। এরা নেতার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার হতে
থাকেন। কিন্তু শত কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের দায়ে দুদকের মামলায়
চার্জশীটভুক্ত হয়ে দলের টিকেট হারালে ঝিমিয়ে পড়তে থাকে ছাত্রলীগ, যুবলীগ
সহ মূল দল ও সহযোগী সংগঠনের মাহবুব অনুসারী নেতা-কর্মী ও অনুসারী
ক্যাডাররা। ইতোমধ্যে কোটিপতি বনে যায় তার কয়েক শীর্ষ ক্যাডার ও ডজন খানেক
আত্মীয় । এরপর একাদশ সংসদ নির্বাচনে মো: মহিব্বুর রহমান এমপি নির্বাচিত
হওয়ার পর দলে শুরু হয় ছন্দ পতন। ছাত্রলীগের লাইনআপে আবির্ভূত হয় আশিক
তালুকদার, শুভ, যুবলীগে ভিপি জিয়া, কালাম সর্দার, শাহরিয়ার সবুজ সহ ডজন
খানেক নেতা। বাস ষ্ট্যান্ড, টেম্পু ষ্ট্যান্ড, মোটর সাইকেল ষ্ট্যান্ড,
খেয়াঘাট, হাট-বাজার সহ সবকিছুর পরিচালনায় পরিবর্তন আসে। ইতোমধ্যে উপজেলা
পরিষদ নির্বাচনে সাবেক সাংসদ মাহবুব বলয়ের এসএম রাকিবুল আহসান উপজেলা
চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলে শক্তি সঞ্চার করে জুকু-খালিদ গ্রুপ। পৌর মেয়র
বিপুল চন্দ্র হাওলাদারের অনুসারী শুভ’র নেতৃত্বে গড়ে ওঠে একটি গ্রুপ এবং
ছোট ভাই স্বপন হাওলাদারের নেতৃত্বে শ্রমিক লীগে গড়ে ওঠে অপর একটি গ্রুপ।
এরপর দলের অভ্যন্তরীন কোন্দলে ছাত্রলীগের সভাপতি পদ প্রত্যাশী শুভকে
কুপিয়ে রক্তাক্ত জখম করা, মূল দলের সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যাপক মঞ্জুরুল
আলম সহ একাধিক নেতাকে রক্তাক্ত জখম করা, উপজেলা চেয়ারম্যান এসএম রাকিুবল
আহসানের বাসার সামনে গুলি এবং আশিক-খালিদ-শুভ গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ
নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে ওঠায় আতংক বাড়ে স্থানীয়দের মধ্যে। এসব ঘটনায় থানা ও
কোর্টে একাধিক মামলা করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় সোমবার সন্ধ্যায় ছাত্রলীগ
অপর সভাপতি পদ প্রত্যাশী আশিকের উপর হামলার ঘটনা ঘটে। এতে জখম হয় ২/৩ জন
নেতা। পরে আশিকের বাবা রাজ্জাক তালুকদার বাদী হয়ে ছাত্রলীগের আরেক সভাপতি
পদ প্রত্যাশী খালিদকে প্রধান আসামী করে তার গ্রুপের ১৪ জনের নামে থানায়
মামলা দায়ের করে। এরপর অভিযানে নামে পুলিশ।
এরআগে সোমবার সন্ধ্যায় কলাপাড়া থানার ওসির উদ্যোগে খালিদ ও আশিককে নিয়ে
থানায় সমঝোতা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক থেকে বেরিয়ে আসার পরপরই থানার পাশেই
আশিকের উপর হামলা করে খালিদ গ্রুপের সদস্যরা। আশিক এমপি গ্রুপের হওয়ায়
ওসির নেতৃত্বে বিপুল সংখ্যক পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন সহ হামলাকারীদের
গ্রেফতারে অভিযানে নামে।
এবিষয়ে বিবাদমান ছাত্রলীগের গ্রুপ প্রধানদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও
মন্তব্যে সাড়া মেলেনি।
উপজেলা ছাত্রলীগের সম্পাদক অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দীন সোহাগ তাদের কমিটি
এখনও বিলুপ্ত করা হয়নি দাবী করেন। এছাড়া বর্তমানে ছাত্রলীগ নামধারী এসব
নেতৃত্ব প্রত্যাশীদের শক্তির মহড়া ও সশস্ত্র সন্ত্রাসের বিষয়ে উপজেলা
ছাত্রলীগের কোন দায় নেই বলে মন্তব্য তার।
এ বিষয়ে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি হাসান সিকদারের সাথে মুঠো ফোনে যোগাযোগের
চেষ্টা করেও সংযোগ না পাওয়ায় তার মন্তব্য জানা যায়নি।
কলাপাড়া থানার ওসি মো: মনিরুল ইসলাম আইন শৃংখলা নিয়ন্ত্রনে ছাত্রলীগের
বিবাদমান খালিদ-আশিককে নিয়ে সমঝোতার চেষ্টা করার কথা স্বীকার করে জানান,
আশিকের উপর হামলার ঘটনায় মামলা হয়েছে। পুলিশ ইতোমধ্যে একজনকে গ্রেফতার
করেছে এবং বাকীদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে।
এদিকে মঙ্গলবার বিকেল ৬টার দিকে আশিক গ্রুপের সদস্যরা পুলিশ প্রহরায় শহরে
বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। এসময় তারা আশিকের উপর হামলার সাথে জড়িতদের বিচার
দাবী করে।