দীর্ঘক্ষণ ধরে বৈঠক শেষে ভারতের কংগ্রেস সভাপতি হিসাবে নতুন কাউকে বেছে নিতে পারলেন না দলটির ওয়ার্কিং কমিটির সদস্যরা। আপাতত সোনিয়া গান্ধীকেই কংগ্রেসের অন্তর্বীকালীন সভাপতি হিসাবে নির্বাচিত করা হয়। শনিবার সকাল ১১টা থেকে শুরু হয়েছিল কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক। সন্ধ্যায় ফের বৈঠকে যোগ দেন সোনিয়া গান্ধী। রাহুলকেই আরও একবার দলের হাল ধরার জন্য আবেদন করতে থাকেন নেতারা। কিন্তু, নিজের সিদ্ধান্তে অনড় ছিলেন তিনি। তাই সোনিয়া গান্ধীর দ্বারস্থ হন কংগ্রেসের ওয়ার্কিং কমিটির সদস্যরা। সভাপতি নির্বাচনের সময় রাহুল উপস্থিত ছিলেন না বৈঠকে। ফের সভাপতি হবার আবেদন মানতে রাহুল রাজি না হন, তবে আনুষ্ঠানিক প্রধান করা হোক তাকে এমন দাবি করেও হালে পানি পাননি কংগ্রেসের অন্যান্য নেতারা।
তকে কংগ্রেসের আগামী সভাপতি হিসেবে জল্পনায় সবচেয়ে বেশি করে উঠে আসছে দুটি নাম- মল্লিকার্জুন খাড়গে ও মুকুল ওয়াসনিক। গান্ধী পরিবারের খুব কাছের ওয়াসনিক। খাড়গে প্রথম মোদী মন্ত্রিসভায় বিরোধী দলের নেতা ছিলেন। দলের সভাপতি নির্বাচন প্রক্রিয়া স্বচ্ছ করতে দুপুরে বৈঠক ছেড়ে বেরিয়ে যান সোনিয়া গান্ধী। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘রাহুল এবং আমি উভয়ই পর পর দু’বার কংগ্রেসের সভাপতি ছিলাম। তাই আমাদের এই বৈঠকের অংশ হওয়া উচিত নয়। ওরা আমাকে ভুল করে জোনাল কমিটিতে রেখেছিল।’
অবশ্য নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় দলের পূর্ব জোনাল কমিটিতে সনিয়া গান্ধীকে স্থান দেওয়া হয়েছিল। পশ্চিম ভারতের জোনাল কমিটির অংশ হিসাবে রাহুল গান্ধীর নাম ঘোষণা করা হয়। মহারাষ্ট্র বৃহত্তম রাজ্য যেখানে পরবর্তী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। কংগ্রেসের সব রাজ্য নেতৃত্ব ও পরিষদীয় দল শনিবারের ওযার্কিং কমিটির বৈঠকে অংশ নিয়েছে। কমিটিগুলি উত্তর, উত্তর-পূর্ব, দক্ষিণ, পূর্ব ও পশ্চিম অঞ্চলকে প্রতিনিধিত্ব করছে। সভাপতি বাছতে নির্বাচন, নাকি মনোনয়ন হবে তা নিয়ে জল্পনা তৈরি হয়েছে।
কোনও প্রার্থীকে সভাপতি হিসাবে বাছার আগে দলের সংবিধান অনুযায়ী সব দিক দেখা উচিত ভালো করে। সূত্রের খবর, শুক্রবার শুক্রবার কংগ্রেস নেতাদের এক বৈঠকে রাহুল গান্ধী বলেছিলেন, ‘রাজ্য নেতা ও আইনসভার সদস্যদের আরও পরামর্শ নিয়ে নতুন কংগ্রেস সভাপতির নির্বাচন করা উচিত।’
এই বছরের শেষের বেশ কয়েকটি রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন রয়েছে। নেতৃত্বের বাছাইয়ের ক্ষেত্রে ঢিলেমি বা ভুল হলে দলের অক্ষমতা প্রকট হবে। যা ওই নির্বাচনগুলি থেকে দৃষ্টিএই বিষয়টিকেই বেশি করে সামনে আনবে। যা দলের নেতা কর্মীদেরও বিচলিত করছে। তাই সভাপতি নির্বাচন দ্রুত শেষ করার পক্ষে মত দেন প্রবীণ কংগ্রেস নেতা শশী থারুর।
লোকসভা ভোটে কংগ্রেসের বিপর্যয় হয়েছে। সারা ভারতে কেবল ৫২টি আসন জিতেছে শতবর্ষব্যাপী এই দল। ২০১৪ সালের নির্বাচনে কংগ্রেস ৪৪টি আসন জিতেছিল। তার তুলনায় এই বৃদ্ধি নগন্য। রাহুল গান্ধী বিজেপির স্মৃতি ইরানির কাছে হেরে যান আমেঠিতে। যা গান্ধী পরিবার ও কংগ্রেসের নিজস্ব আসন বলেই বিবেচিত হত।
১৯শের লোকসভায় দলের পরাজযের দায় রাহুল গান্ধী ২৫ শে মে কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে পদত্যাগ করার সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করেছিলেন। তিনি ও তার মা সোনিয়া গান্ধী, বোন প্রিয়াঙ্কা শীর্ষ পদ গ্রহণের বিষয়টিও নাকচ করে দেন। জানিয়ে দেন, কংগ্রেসের দায়িত্ব এবার নেওয়া উচিত কোনও অ-গান্ধী নেতার।
কংগ্রেসের ১৩৪ বছরের ইতিহাসে বেশিরভাগ সময়ই গান্ধী পরিবারের কেউ নেতৃত্বে ছিলেন। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর হত্যার পরে নব্বইয়ের দশকে বেশ কয়েক বছর বাদে অবশ্য অ-কংগ্রেসী নেতারা দলের দায়িত্বে ছিলেন। সীতারাম কেশরির নেতৃত্বে দল সাফল্য পায়নি। এরপর দলের বর্ষিয়ান নেতৃত্ব সোনিয়া গান্ধীকে সংগঠনের দায়িত্ব নিতে রাজি করান।
লোকসভা ভোটে পরাজয়ে দায়ভার নিয়ে কংগ্রেসের সভাপতি পদ থেকে ইস্তফা দেন রাহুল গান্ধী। অনেক আবেদন নিবেদনেও সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনায় রাজি হননি তিনি। সেইসঙ্গে গান্ধী পরিবারের কোনও ব্যক্তি কংগ্রেসের শীর্ষপদে বসবেন না বলেও স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন তিনি। যার অর্থ, গান্ধী পরিবারের বাইরের কোনও ব্যক্তি রাহুলের ছেড়ে যাওয়া আসনে বসবেন বলে ধরে নেওয়া হয়েছিল। দেড়শো বছরের পুরনো রাজনৈতিক দলের রাশ কার হাতে যেতে চলেছে, তা নিয়ে শুরু হয়েছিল নানা জল্পনা। এই প্রসঙ্গে শিবরাজ পাতিল এবং মল্লিকার্জুন খাড়গের মতো বর্ষীয়ান নেতার পাশাপাশি সচিন পাইলট, জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া ও মুকুল ওয়াসনিকের নাম ঘুরপাক খাচ্ছিল কংগ্রেসের অন্দরে।