ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে প্রায় ২২ ঘণ্টা চিকিৎসাধীন ছিলেন ঢাবি শিক্ষার্থী ফিরোজ কবির স্বাধীন।
এ ২২ ঘণ্টার চিকিৎসায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তার অভিভাবকের হাতে বিল তুলে দেয় এক লাখ ৮৬ হাজার ৪৭৪ টাকা!

এমন অস্বাভাবিক বিলের তদন্তে নেমেছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর।

এ বিষয়ে রোববার (২৮ জুলাই) ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর স্কয়ার হাসপাতাল থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করেছে।

গতকাল বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সেই বিলে দেখা যায়, স্বাধীনের চিকিৎসায় শুধু ওষধে খরচ দেখানো হয়েছে ৩২ হাজার টাকা। ২২ ঘণ্টায় একজন ডেঙ্গু রোগীর জন্য কী এমন ওষুধ সরবরাহ করা হলো সে প্রশ্ন উঠেছে জনমনে।

এ ছাড়া বিভিন্ন সার্ভিস চার্জ দেখিয়ে রোগীর পরিবারের সদস্যদের পকেট কাটা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন স্বাধীনের সহপাঠীরা।

এসব তথ্য আমলে নিয়েছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর।

তারা জানান, ইতিমধ্যে স্কয়ার হাসপাতাল ওই ছাত্রকে যেসব ওষুধ দিয়েছে, সেগুলোর বিষয়ে খোঁজ নেয়া হচ্ছে। সেগুলোর বাজারমূল্য যাচাই করে দেখছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

এ ছাড়া সার্ভিস চার্জসহ অন্যান্য সেবার যে বিল উল্লেখ করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সেগুলোর বিষয়েও তদন্ত করা হচ্ছে বলে জানান তারা।

উল্লেখ্য, গত ২৬ জুলাই রাত ৯টার দিকে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে মারা যান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের শিক্ষার্থী ফিরোজ কবির স্বাধীন।

২৫ তারিখ রাত ১১টায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। স্বাধীনকে বাঁচাতে না পারলেও তার পরিবারের কাছে এক লাখ ৮৬ হাজার ৪৭৪ টাকা বিল তুলে দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

সে বিলের একটি কপি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে বিস্মিত হয়ে পড়ে নেটিজেন। হাসপাতালের তীব্র সমালোচনা শুরু হয় দেশজুড়ে।

বিলে দেয়া তথ্যগুলো হলো, ওষুধ বাবদ ৩২ হাজার ৩২১ টাকা ৫১ পয়সা, ল্যাবরেটরি চার্জ ৭৩ হাজার ৮৩৬ টাকা, মেডিকেল হসপিটাল সাপ্লাইতে ১০ হাজার ২১৯ টাকা বিল ধরা হয়েছে। বাকি টাকা অন্যান্য কয়েকটি খাতে ধরা হয়েছে। মোট বিল দেখানো হয়েছে এক লাখ ৮৬ হাজার ৪৭৪ টাকা!

এমন বিল প্রসঙ্গে স্বাধীনের বড় ভাই মো. ফজলুল করীম অভিযোগ করেন, হাসপাতালগুলো রোগীদের অসহায়ত্ব নিয়ে ব্যবসা করছে।

তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘একদিনও পার হয়নি আর এর ভেতর বিল উঠল দুই লাখ টাকার কাছাকাছি। তারা কী করলেন আমার ভাইয়ের জন্য যে চিকিৎসা খরচ এত হলো। তার পরও মনকে বোঝাতে পারতাম যদি আমার ভাইকে বাঁচানো যেত।’

এ বিলের বিষয়ে স্বাধীনের পরিবার ও সহপাঠীদের থেকে যোগাযোগ করা হলে তেমন কোনো তথ্য দিতে পারেনি স্কয়ার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

এর পর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, ডাকসুর নেতারা ও গণমাধ্যমকর্মীরা বিলের হিসাব চাইলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ঠিকমতো তা দিতে পারেনি।