গোফরান পলাশ, পটুয়াখালী: পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় পায়রা সমুদ্র বন্দর,
কুয়াকাটা পর্যটন কেন্দ্র, গঙ্গামতি, কাউয়ারচর, পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র
এলাকায় সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করে ক্ষমতাসীন দলের কয়েক প্রভাবশালী
নেতার বিরুদ্ধে চাষের জমে জমি দখলের অভিযোগ উঠেছে। কৃষকের এসব জমি দখলে
নিতে মারধর, খুন জখমের হুমকী, মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানী করা সহ বায়নাপত্র
তৈরী করে জোরপূর্বক স্বাক্ষর নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। প্রভাবশালী এসকল
ব্যক্তির নামে স্থানীয় থানা পুলিশ অভিযোগ না নেয়ায় স্থানীয় প্রেসক্লাবে
গত দুই দিনে পৃথক দু’টি সংবাদ সম্মেলন করেছেন ভুক্তভোগীরা।
পৌরশহরের চিংগড়িয়া এলাকার সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের মনোজ কুমার দাস বৃহস্পতিবার বেলা
১১টায় স্থানীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে বলেন, ’তার ৫০ বছরের
নির্বিঘ্নে দখলে থাকা চাষাবাদকৃত ২৫ একর ৪০ শতক রেকর্ডীয় জমি দখলে নিতে
সাইনবোর্ড দেয়া হয়েছে। বালিয়াতলী ইউনিয়নের ছোটবালিয়াতলী মৌজার ওই জমিতে
৭/৮ দিন আগে সাইনবোর্ড লটকানো হয়েছে। এমনকি বর্গাচাষী লিটন গাজীকে
চাষাবাদ করতে নিষেধ করা হয়েছে।’
লিখিত বক্তব্যে মনোজ কুমার দাস আরও জানান, ’১৯৫৮ সাল থেকে ১০টি দলিলের
মাধ্যমে ২৫ একর ৪০ শতক জমি কিনে ৫৬ বছর ধরে তিনি চাষাবাদ করে আসছেন।
এবছরও কিছু জমিতে বোনা আউশের আবাদ করেছেন। কিন্তু ক্ষমতাসীন দলের
প্রভাবশালী নেতা ও পটুয়াখালী জেলা পরিষদ সদস্য আসলাম হাওলাদারের নেতৃত্বে
রুবেল সিকদার, মোঃ ফোরকান, নিজাম গাজী, হাবিব, রাখাইন অংচোলা, থয়মং
মাতুব্বর, চানথান মাতুব্বর, অংচান মাতুব্বর, চোচাং মাতুব্বর বার্গচাষীকে
জমি চাষাবাদ করতে বাঁধা দেয়। বর্তমানে তারা সংখ্যালঘু সম্প্রদায় হয়ে
জমিজমা নিয়ে আছেন নিরাপত্তাহীন।’ এসময় জমির অপর মালিক বিভাস দাস, বিকাশ
দাস, তাদের আইনজীবী নাথুরাম ভৌমিক উপস্থিত ছিলেন।
জেলা পরিষদ সদস্য আসলাম হাওলাদার জানান, ’তার বাড়ির এলাকায় রাখাইনদের
সঙ্গে হিন্দুদের এ জমি নিয়ে বিরোধ রয়েছে। এনিয়ে সালিশ বৈঠক বসে। এছাড়া
তার কোন সম্পৃক্ততা নেই। অযথা তার ভাবমুর্তি ক্ষুন্নের জন্য তার কথা বলা
হচ্ছে।
এর আগে পায়রা বন্দর সংলগ্ন রজপাড়া মৌজায় ১৪ ভূমি মালিকের প্রায় ৪০ কোটি
টাকা মূল্যের ৫ একর কৃষি জমি দখল করে বেকু দিয়ে মাটি কাটার কাজ শুরু করার
অভিযোগে বুধবার সকাল ১১টায় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন ভুক্তভোগীরা।
সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্যে জমির একাংশের মালিক সৈয়দ আহসান উদ্দিন
পাভেল বলেন, ’ঢাকা ৭ আসনের সংসদ সদস্য হাজী মো. সেলিমের মালিকানাধীন
মদিনা গ্রুপের মদিনা ফিলিং স্টেশন নির্মানের জন্য এ জমি দখল করে মাটি
কাটার কাজ করছে। পায়রা বন্দর সংলগ্ন রজপাড়া চারলেন সড়কের তিন নম্বর ব্রিজ
সংলগ্ন মিনা বাড়ি এলাকায় জমির এ দখল কাজে মদিনা গ্রুপকে সহায়তা করছে
স্থানীয় সাংসদের অনুসারী টিয়াখালী ইউপি চেয়ারম্যান সৈয়দ মশিউর রহমান
শিমু।’
সংবাদ সম্মলনে অপর ভুক্তভোগী জমির মালিক ইউনুফ মিনা ও আনোয়ার মিনা বলেন,
’ ক্ষমতাসীন দলের নাম ব্যবহার করে এ দখল সন্ত্রাসের কারনে তারা তাদের
সম্পদ রক্ষার জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।’
টিয়াখালী ইউপি চেয়ারম্যান সৈয়দ মশিউর রহমান শিমু সাংবাদিকদের জানান,
’কারও জমি যদি ওই প্রকল্প এলাকায় থেকে থাকে তাহলে তাদের কাগজপত্র দেখে এ
বিষয়ে ফয়সালা করা হবে।’
এ ব্যাপারে মদিনা গ্রুপের ডিজিএম (ভূমি) নূরুল হামিদ বিরোধীয় জমিতে মাটি
কাটার কথা স্বীকার করে তিনি সাংবাদিকদের কাছে মুঠোফোনে বলেন, ’যাদের জমি
নিয়ে সমস্যা আছে তাদের সাথে বসে এ ব্যাপারে ফয়সালা করার উদ্যোগ নেয়া
হয়েছে।’