সরকারি কোষাগার থেকে বেতন-ভাতার দাবিতে দ্বিতীয় দিনের মতো রাজধানীতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন দেশের ৩২৮টি পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

তাদের দাবি, তারা ৫ থেকে ৭২ মাস পর্যন্ত বেতন বকেয়া ছাড়াই অফিস করছেন। কোনো সময় পৌর সভার নিজস্ব আয় এলেই কেবল বেতন হয়, না হলে বছরের পুরো সময় চলে বেতন ছাড়া। যতক্ষণ পর্যন্ত সরকারিভাবে বেতন দেওয়ার আশ্বাস না আসবে ততক্ষণ তারা ঘরে ফিরবেন না বলে জানান।

রোববার (১৪ জুলাই) বিকেল থেকে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সড়ক ও ফুটপাতের ওপর কাগজ এবং তাবু বিছিয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন শুরু করেন তারা।

অবস্থান ধর্মঘট পালনকারীরা জানান, সরকারি বিধি মোতাবেক তাদের নিয়োগ করা হয়েছে। অথচ তাদের বেতনের জন্য নির্ভর করতে হয় পৌরসভার নিজস্ব আয়ের ওপর। যদি কোনো পৌরসভার আয় না থাকে তবে তাদের বেতন ছাড়াই চলতে হয়। এভাবে কারো কারো ৫ থেকে ৭২ মাস পর্যন্ত বকেয়া পড়েছে।

তারা বলেন, আমাদের বেতন আসে নিজস্ব আয় থেকে আর ইউনিয়ন পরিষদের কর্মচারীদের বেতনের ৭৫ শতাংশ আসে সরকারি কোষাগার থেকে। একই নিয়মে নিয়োগ অথচ বেতনের ক্ষেত্রে দুই নীতি হতে পারে না। আমাদেরও একই নিয়মে বেতন দিতে হবে।

লাঙ্গলকোট পৌরসভা থেকে আন্দোলনে আসা আব্দুল মান্নান নামে একজন বলেন, আমরা ১৯ মাস ধরে বেতন পায় না। পৌরসভার যা আয় এর চেয়ে ব্যয়ের পরিমাণ বেশি হওয়া বাড়তি কোনো টাকা থাকে না, এ কারণে সব কর্মচারীরা বেতন ছাড়াই চলছি।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ পৌরসভা সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ম ই তুষার বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের ৩২৮টি পৌরসভার মধ্যে মাত্র ৩৩টি পৌরসভার বেতন-ভাতা নিয়মিত বাকিদের কারো ৭২ মাস পর্যন্ত বকেয়া রয়েছে। এসব পৌরসভার ৩৫ হাজার কর্মচারী-কর্মকর্তাদের পৌর আয়ের দিকে চেয়ে থাকতে হয়। আয় হলে বেতন হয় না হলে বেতন দেওয়া হয় না।

এতো বকেয়া হলে একজন কর্মচারী কীভাবে চলেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পৌর কর্মচারীদের সবার বাড়ি পৌর এলাকার মধ্যে। তাদের বাড়ি ভাড়া লাগে না, অন্য কোনো কাজ করে সংসারের খরচ চালাতে হয়।


সোমবার (১৫ জুলাই) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে গিয়ে দেখা যায় জাতীয় ঈদগাহ এলাকার সামনে থেকে পল্টন মোড় পর্যন্ত সড়কে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন তারা।

বাংলাদেশ পৌরসভা সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের ব্যানারে কয়েক হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী এ কর্মসূচিতে অবস্থান নিয়েছেন।

সংগঠনটির সভাপতি ফরিদপুরের নগরকান্দা পৌরসভার সচিব মো. আব্দুল আলীম মোল্লা  বলেন, রোববার (১৪ জুলাই) থেকে শুরু হওয়া আন্দোলন প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা না আসা পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। আগামী দু’দিনের মধ্যে দাবি মেনে না হলে আমরণ অনশন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও সচিবালয় ঘেরাও কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।

কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বলেন, রোববার দুপুরে আমরা এই কর্মসূচি শুরু করেছি। প্রবল ঝড়-বৃষ্টির উপেক্ষা করে কর্মসূচি অব্যাহত আছে। এখন পর্যন্ত ২৫ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী অসুস্থ হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। সরকারের পক্ষ থেকে দাবি মেনে নেওয়ার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। এতে আমাদের মধ্যে চরম ক্ষোভ ও হতাশার সৃষ্টি হয়েছে।

সভাপতি আব্দুল আলীম বলেন, ইতোমধ্যে দেশের সব পৌরসভা বন্ধ থাকায় নাগরিক সেবা থেকে দেশের প্রায় ৪০ শতাংশ মানুষ বঞ্চিত হচ্ছে। তাই অবিলম্বে দাবি মেনে নেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা আশা করছি।

কয়েক হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারীর মধ্যে কর্মসূচিতে উপস্থিত সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম, উপদেষ্টা কে জি এম মাহমুদ, এ জেড এম আনোয়ার, গোপালগঞ্জ জেলা সভাপতি এসএম সাজ্জাদ হোসেন প্রমুখ।