দর্পণ ডেস্ক : হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। এক সময়ের সেনাপ্রধান। সেখান থেকে নাম লেখান রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে। ১৯৭১ থেকে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত তিনি অনেকটা নীরবেই ছিলেন। এ সময় তিনি সেনাবাহিনীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। জিয়াউর রহমান প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর এরশাদকে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের চেয়ারম্যান করা হয়। এর কিছুদিন পরেই জিয়াউর রহমান এরশাদকে সেনাপ্রধান হিসেবে নিয়োগ করেন। জিয়াউর রহমানের মুত্যুর পর এরশাদ বিচারপতি সাত্তারকে অনেকটা বাধ্য করেন ক্ষমতা ছাড়তে। ৮২ সালে এরশাদের কাছে ক্ষমতা দিয়ে বিদায় নেন বিচারপতি সাত্তার।

সামরিক আইন জারি করে প্রেসিডেন্ট ও সামরিক আইন প্রশাসক হন তিনি।

১৯৮৪ সালে ১৮ দফা ঘোষণা করে বাস্তবায়ন পরিষদ তৈরি করেন এরশাদ। ওই বছরই সিনিয়র রাজনীতিকদের নিয়ে গঠন করেন জনদল। কিছুদিন পর জনদল পরিবর্তন করে তৈরি করেন বর্তমানের জাতীয় পার্টি।

১৯৮৬ সালের একপাক্ষিক পাতানো নির্বাচনে জাতীয় পার্টি সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়। বিরোধী দল হয় আওয়ামী লীগ। ৮৮ সালে ওই সংসদ ভেঙে দিয়ে আবারও নির্বাচন দেন এরশাদ। ওই নির্বাচনে অন্য কোনো দল অংশ নেয়নি। এক পর্যায়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন শুরু করে এরশাদের বিরুদ্ধে। ৯ বছরের শাসনের অবসান ঘটিয়ে ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হন এরশাদ। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে জয়লাভ করে বিএনপি ক্ষমতা গেলে গ্রেপ্তার করা হয় এরশাদকে। দীর্ঘ কারাভোগের পরে তিনি কারামুক্ত হন।

দুর্নীতির অভিযোগে কয়েকটি মামলায় তার সাজাও হয়। এখনো কয়েকটি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। এরশাদের জাতীয় পার্টি তিনটি সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে কয়েকটি আসনও পায়। ১৯৯৬ সালে জাতীয় পার্টির সমর্থনে সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। ২০০৮ সালের ডিসেম্বরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে মহাজোটের হয়ে লড়ে সংসদে যায় জাতীয় পার্টি। একই পথে হাঁটে ২০১৪ সালের নির্বাচনেও। এক দলীয় নির্বাচনে সংসদে বিরোধী দল হয় জাতীয় পার্টি।

২০১৮ সালের নির্বাচনে জাতীয় পার্টি সরকারের সঙ্গে জোট করে নির্বাচন করলেও সংসদে বিরোধী দল হয় জাতীয় পার্টি। আর বিরোধী দলের নেতা হন হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ।

হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ১৯৩০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি পশ্চিমবঙ্গের কুচবিহার জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। কুচবিহার ও রংপুরেই শেষ করেন প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের পড়াশোনা।

১৯৫০ সালে এরশাদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগ দেন এবং ১৯৫২ সালে কমিশন লাভ করেন। ১৯৭১-১৯৭২ সালে তিনি লেফটেন্যান্ট কর্নেল পদমর্যাদায় সপ্তম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের অধিনায়ক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

মুক্তিযুদ্ধের পর ১৯৭৩ সালে পাকিস্তান থেকে দেশে ফেরেন এরশাদ। সে সময় তাকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অ্যাডজুট্যান্ট জেনারেল হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। ১৯৭৫ সালের আগস্টে এরশাদকে মেজর জেনারেল পদে পদোন্নতি দিয়ে সেনাবাহিনীর উপপ্রধান করা হয়। ১৯৭৮ সালের ডিসেম্বরে তিনি সেনাপ্রধান হিসেবে নিয়োগ পান এবং পরের বছর লেফটেন্যান্ট জেনারেল পদে পদোন্নতি লাভ করেন।

ঘটনাবহুল জীবনের অধিকারী হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ছিলেন বাংলাদেশের দশম রাষ্ট্রপতি। ১৯৮৩ সালের ১১ ডিসেম্বর থেকে ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ছিলেন। রাষ্ট্রপতি হিসেবে এরশাদ সফল ছিলেন বলে তার সমর্থকেরা দাবি করলেও তাকে সামরিক স্বৈরাচারী শাসক হিসেবেই দেখেন সমালোচকেরা।