মাদরাসার কার্যালয়ের কম্পিউটারে রক্ষিত শিশুদের ছবি পর্নো ছবির সঙ্গে জুড়ে দিয়ে তাদের ব্ল্যাকমেইল করে ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়ন করেছেন অধ্যক্ষ আল আমিন। তাঁর মোবাইল ফোন ও মাদরাসার কম্পিউটারে অসংখ্য পর্নো ভিডিও পাওয়া গেছে। তিনি ফটোশপ ও ছবি এডিট করার প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন। আল আমিনের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন এবং পর্নোগ্রাফি আইনে ফতুল্লা থানায় দুটি মামলা হয়েছে।

নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার ‘বায়তুল হুদা ক্যাডেট মারদাসা’র অধ্যক্ষ ও পরিচালক আল আমিনকে গত বৃহস্পতিবার গ্রেপ্তার করে র‌্যাব।

র‌্যাব-১১-এর উপসহকারী পরিচালক (ডিএডি) মো. কামাল হোসেন ও মাদরাসার এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক বাদী হয়ে ওই দিন রাতেই মামলা দুটি করেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ফতুল্লা মডেল থানার ওসি আসলাম হোসেন।

গ্রেপ্তারকৃত আল আমিন (৩৫) কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার দিঘীরপার গ্রামের মৃত রেনু মিয়ার ছেলে। আটক হওয়ার পর গত প্রায় দেড় বছরে একে একে ১২ শিশুকে ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নের অভিযোগ স্বীকার করেছেন তিনি। মাদরাসার ভেতরেই তাঁর বাসা। স্ত্রী বাসায় না থাকলে তিনি নানা অজুহাতে শিশুদের তাঁর কার্যালয় কক্ষে ডেকে আনতেন।

ভুক্তভোগী বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও র‌্যাব জানায়, মাদরাসার কার্যালয় কক্ষ ঝাড়ু দেওয়া, পানি ও বই দেওয়ার কথা বলে শিক্ষার্থীদের ডেকে আনতেন আল আমিন। আগে থেকেই কার্যালয় কক্ষে থাকা কম্পিউটারটি অন করে রাখতেন তিনি। ফটোশপের মাধ্যমে বিদেশি পর্নো ছবির মাথা বাদ দিয়ে সেখানে মাদরাসা শিক্ষার্থীর ছবি থেকে মাথা জুড়ে দিতেন। আল আমিন যে শিক্ষার্থীর মাথা পর্নো ছবির সঙ্গে জুড়ে দিতেন তাকে ডেকে আনতেন কার্যালয়ে। কম্পিউটারে ওই ছবি খুলে রাখতেন। আর আড়ালে দাঁড়িয়ে দেখতেন শিক্ষার্থী কার্যালয় কক্ষে ঢুকে কম্পিউটার ডেস্কটপে তার বিবস্ত্র ছবি দেখে হতভম্ব হয়ে পড়ত। ঠিক সেই সময় আল আমিন আড়াল থেকে বেরিয়ে শিক্ষার্থীকে বলতেন, ‘কিরে এসব কবে থেকে। এসব ছবি তো ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়বে। তোর বাসায় তোর মা-বাবা কী জানে? না ডেকে বলতে হবে।’ শিক্ষার্থী তখন বলত, ‘হুজুর আমি তো এসব কোনো দিন দেখিনি। আমি তো এসব ছবি তুলিনি।’ আল আমিন তখন ধমক দিয়ে বলতেন, ‘মিথ্যা বলিস না। এখন তো বদনাম হয়ে যাবে।’ এতে ভয় পেয়ে যেত শিক্ষার্থী। বলত, ‘হুজুর আপনি কিছু করেন, আপনি আমাকে বাঁচান।’ আল আমিন সেই ছবি মুছে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে বলতেন, ‘কোনো চিন্তা নাই। তোর কিছু হবে না। আমি যা বলব তা শুনবি তো।’ ভয়ে ওই শিশু আল আমিনের ফাঁদে পড়ে যেত। এভাবেই ছবি দেখিয়ে ব্ল্যাকমেইল করে ২০১৮ সাল থেকে তিনি ৭ থেকে ১৩ বছরের অন্তত ১২ শিক্ষার্থীকে ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়ন করেছেন।

এর মধ্যে নারায়ণগঞ্জ র‌্যাব-১১ আল আমিনের হেফাজতে থাকা কম্পিউটার, মেমোরি কার্ড ও মোবাইল ফোন থেকে প্রচুর পর্নো ভিডিও এবং শিশুদের ছবি থেকে মাথা সংযোজন করা ছবি উদ্ধার করেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অভিভাবক কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আল আমিন হুজুর যে এত বড় লম্পট তাঁকে দেখে তা বোঝার কোনো উপায় ছিল না।’

এর আগে গত ২৭ জুন ২০ শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের অভিযোগে নাারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের অক্সফোর্ড হাই স্কুলের শিক্ষক আরিফুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে শিক্ষার্থী ধর্ষণ ও ভিডিও করার অভিযোগে দুটি মামলা হয়েছে। এ ঘটনার সংবাদ ও ভিডি ফুটেজ র‌্যাব-১১-এর ফেসবুক পেইজে দেওয়ার পর তা ভাইরাল হয়। সেই ভিডিও চিত্র ও সংবাদ ফতুল্লার মাহমুদপুর এলাকার ‘বায়তুল হুদা ক্যাডেট মারদাসার তৃতীয় শ্রেণির এক শিক্ষার্থী ও তার মা দেখেন। ছাত্রীটি তার মাকে বলে, ‘আমার মাদরাসার হুজুরকে যদি টিভিতে দেখাত তাহলে আমার ভালো লাগত।’ তখন মা তাকে প্রশ্ন করলে ওই ছাত্রী বলে, আমার মাদরাসার হুজুরও আমার সঙ্গে বাজে কাজ করেছে।’ এরপর ওই ছাত্রীর মা ফেসবুকে ঘটনাটি র‌্যাবকে জানান। এরপর তদন্তে নামে র‌্যাব। অভিযোগের সত্যতা পেয়ে মাদরাসার অধ্যক্ষ আল আমিনকে আটক করে।