পুলিশের বিতর্কিত ডিআইজি মিজানুর রহমানকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। মঙ্গলবার (২৫ জুন) রাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বিষয়টি নিশ্চিত করেন। এর আগে, সন্ধ্যায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক আদেশে মিজানকে বরখাস্ত করা হয়।
জানা যায, গত সোমবার দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-১ এ দুদকের পরিচালক মো. মঞ্জুর মোর্শেদ ডিআইজি মিজানসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
এতে উল্লেখ করা হয়, পুলিশের ডিআইজি মিজানুর রহমানসহ চারজনের সাড়ে ৪ কোটি টাকারও বেশি সম্পদ রয়েছে। এর মধ্যে সোয়া তিন কোটি টাকার সম্পদই অবৈধ।
মামলায় ডিআইজি মিজান ছাড়া অন্য আসামিরা হলেন, তার স্ত্রী সোহেলিয়া আনার রত্না (৫০), ছোটভাই মাহবুবুর রহমান (৫০) ও ভাগ্নে পুলিশের কোতোয়ালি থানার এসআই মাহমুদুল হাসানকে (২৯) আসামি করা হয়েছে। দুদকের সংশোধিত বিধিতে নিজস্ব দপ্তরে করা এটিই প্রথম মামলা। দুদক আইন ২০০৪ ও মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনসহ দন্ডবিধির ১০৯ ধারায় মামলাটি করেছে দুদক।
মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, মিজানের নামে ও বেনামে অর্জিত ৪ কোটি ৬৩ লাখ ৭৪ হাজার ৪৪৩ টাকার সম্পদ রয়েছে। এর মধ্যে ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে ৩ কোটি ২৮ লাখ ৬৮ হাজার ৫ টাকা জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন। যার মধ্যে ৩ কোটি ৭ লাখ ৫ হাজার ৪২১ টাকার হিসাব গোপন করেছেন। এর আগে সম্পদ বিবরণী দাখিলের নোটিশের কারণে ২০১৮ সালের ১ আগস্ট তিনি সম্পদ বিবরণী দাখিল করেন। এতে তিনি ১ কোটি ১০ লাখ ৪২ হাজার ২৬০ টাকার স্থাবর ও ৪৬ লাখ ২৬ হাজার ৭৫২ টাকার অস্থাবর সম্পদ প্রদর্শন করেন।
দুদকের তদন্তে পাওয়া যায়, মিজান তার ভাগনে মাহমুদুল হাসানের নামে ২৪ লাখ টাকা দিয়ে গুলশানের পুলিশ প্লাজায় কনকর্ডে ২২১ বর্গফুট আয়তনের দোকান বরাদ্দ নেন। মিজানুর রহমান নিজে নমিনি হয়ে তার ভাগ্নে মাহমুদুল হাসানের নামে ২০১৩ সালের ২৫ নভেম্বর ওয়ান ব্যাংক কাওরান বাজার শাখায় ৩০ লাখ টাকা এফডিআর করেন।
দুদকে তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু হওয়ার পর পর এফডিআরটি সুদে আসলে ৩৮ লাখ ৮৮ হাজার ৫৭ টাকা তুলে নেন। যা তিনি আয়কর বিবরণীতে দেখাননি। ডিআইজি মিজান তার ভাই মাহবুবুর রহমানের নামে ১ বেইলি রোডে ৬৫ লাখ টাকায় ২৪০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট কেনেন। ফ্ল্যাটে মিজান নিজেই থাকেন।
মিজানুর রহমান তার স্ত্রী সোহেলিয়া আনার রত্নার নামে কাকরাইলের ৬৩/১, পাওনিয়ার রোডে সামাদ ট্রেড সেন্টারে ১৭৭৬ বর্গফুটের বাণিজ্যিক ফ্ল্যাট কেনেন। যা নগদে এক কোটি ৭৭ লাখ টাকা নির্মাণ কোম্পানিকে পরিশোধ করেন। ২০১৬ সালের ১৬ জুন ফ্ল্যাটটি তার ভাগ্নে মাহমুদুল হাসানের নামে দলিল রেজিস্ট্রি করেন। রেকর্ডপত্রে মিজানুর অর্থের জোগানদাতা হলেও সম্পদ বিবরণীতে ঐ টাকার হিসাব গোপন করছেন।
মহানগর দায়রা জজ ও সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে আসামিদের এসব স্থাবর সম্পত্তি ক্রোক ও ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করা আছে।