রাজধানীর ধানমন্ডি পপুলার হাসপাতালের এক চিকিৎসকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ করেছেন এক তরুণী।

ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ওই তরুণী জানান, শনিবার (১৫ জুন) তার সাথে অশালীন আচরণ করেন চর্ম ও যৌনরোগ বিশেষজ্ঞ এবং লেজার কসমেটিক সার্জন ডা. মো. শওকত হায়দার। ব্রণের ইনফেকশন আছে কিনা দেখার ছলে ওই ডাক্তার তার গালে চুম্বন করেছেন বলে অভিযোগ করেন ওই তরুণী। ঘটনার পর পরই পপুলার হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগও করেন তিনি।

এরপর বাসায় ফিরে ওই তরুণী ডাক্তারের কাছে ফোন করে তার কৃতকর্মের কারণ জানতে চাইলে ডা. শওকত বলেন, ‘ওটা কিছু না, ইনফেকশন আছে কিনা দেখছিলাম।’ পরে তরুণী বলেন, ‘এমন তো আমি কখনো দেখিনি, ইনফেকশন আছে কিনা সেটা কোনো ডাক্তার কি ঠোঁট দিয়ে চেক করে?’ এ সময় ডাক্তার শওকত হায়দার ওই তরুণীকে বলেন, তিনি দুঃখিত।

ঘটনার বিবরণে ওই তরুণী জানান, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ত্বকে ব্রণের সমস্যা নিয়ে পরিচিত একজনের রেফারেন্সে প্রথমবার পপুলার হাসপাতালের ওই ডাক্তারের কাছে যান তিনি। পরবর্তীকালে চিকিৎসার প্রয়োজনে আরও কয়েকবার প্রায় বাবার বয়সী ডাক্তারের কাছে যান তিনি।

সর্বশেষ গত শনিবার (১৫ জুন) দুপুরে ওই তরুণী ডা. শওকতকে জানান তার ত্বকের সমস্যা আবার বেড়েছে, রাতে তিনি চেম্বারে বসবেন কিনা? এ সময় ওই ডাক্তার চেম্বারেই আছেন জানিয়ে মেয়েটিকে তখনই যেতে বলেন।

পরে ডাক্তারের চেম্বারে গিয়ে ওই তরুণী জানতে চান তার সমস্যার কোনো স্থায়ী সমাধান আছে কিনা। এ সময় সেই ডা. শওকত বলেন, যদি সে চায় তবে একটা ইনজেকশন দেয়া যেতে পারে। তবে ইনজেকশনটি কোমরে দিতে হবে। মেয়েটির ইতস্ততভাব দেখে ওই ডাক্তার তাকে বলেন, কাপড়ের উপর দিয়েই ইনজেকশন দেয়া যাবে।

মেয়েটি তার অভিযোগে জানায়, ইনজেকশন দিতে রাজি হয়ে পেসেন্ট টেবিলে শুলে ওই ডাক্তার মেয়েটির বিভিন্ন স্পর্শকাতর স্থানে হাত দিতে থাকেন। মেয়েটি প্রতিবাদ করলে তিনি বলেন, কোথায় ইনজেকশন দিলে ভালো হয় তা চেক করে দেখছিলেন তিনি।

পরে ওই তরুণী সেই ইনজেকশন হাতেই দিতে বলেন। ওই তরুণী অভিযোগ করেন, ডাক্তার ইনজেকশন দেবার পর তুলা দিয়ে চেপে না ধরে না তার জামার ভিতর হাত ঢুকিয়ে দেন। এ অবস্থায় মেয়েটি তাড়াতাড়ি সরে এসে ডাক্তারের ফি দিয়ে চেম্বার থেকে বেরিয়ে আসতে চায়। এ সময় সেই ডাক্তার আরেকবার তার গালের ইনফেকশনটি দেখতে চান। গাল দেখার ছলে ডা. শওকত ওই তরুণীকে চুম্বন করেন।

অভিযোগের বিষয়ে অভিযুক্ত ডা. মো. শওকত হায়দারের মতামত জানতে তাকে ফোন করলে এ সময় তিনি ওই প্রতিবেদককে সামনাসামনি বসে কথা বলার প্রস্তাব দেন। বলেন, সামনাসামনি বসলেই সব ঠিক হয়ে যাবে। পরে বার বার প্রশ্নের মুখে তিনি ফোন কেটে দেন।

এ ঘটনায় পপুলার হাসপাতালের মানবসম্পদ ও প্রশাসন বিভাগের প্রধান অচিন্ত্যকুমার নাগের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন ওই তরুণী। এ সময় তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন তিনি।

পপুলার হাসপাতালের মানবসম্পদ ও প্রশাসন বিভাগের প্রধান অচিন্ত্যকুমার নাগ জানান, এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় তারা বিব্রতবোধ করছেন। দ্রুতই তদন্তসাপেক্ষে এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন তারা। অপরাধীকে কোনো ছাড় দেয়া হবে না বলে আশ্বস্ত করেন তিনি।