দর্পণ ডেস্ক : সদ্যফোটা স্থলপদ্মের মতো স্নিগ্ধ জয়া এহসান উইন্ডোজ প্রোডাকশনের ভিতরে বসে।কলকাতায় যিনি দর্শকদের কাছে এই মুহূর্তে ‘জয়া‘ কম ‘স্পিচ থেরাপিস্ট রোমিলা‘ বলে বেশি পরিচিত। সৌজন্যে নন্দিতা রায়-শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের নতুন ছবি ‘কণ্ঠ’। যার দৌলতে টানা ২৫ দিন ধরে কলকাতার বেশির ভাগ প্রেক্ষাগৃহে হাউজফুল বোর্ড ঝুলছে।

কীভাবে জয়াকে এই চরিত্রের জন্য বাছলেন শিবপ্রসাদ-নন্দিতা? স্পিচ থেরাপিস্ট হতে গিয়ে কতটা খাটতে হয়েছিল জয়াকে? পাওলির সঙ্গে সেটে চুলোচুলি হয়েছিল না সারাক্ষণ ভাব! ছবির আগে-পরের এ টু জেড এনডিটিভি-র কাছে উজাড় করলেন ভারত-বাংলাদেশের জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত নায়িকা জয়া এহসান। দর্পণ প্রতিদিনের পাঠকদের কাছে তা হুবহু তুলে ধরা হল-

প্রশ্ন: কলকাতা আপাতত একটা নামই ২৫ দিন ধরে জপছে। জয়া এহসান থুড়ি রোমিলা। কেমন লাগছে?

উত্তর: এটাই তো চাই। দর্শক আমার আসল নাম ভুলে যাক। চরিত্রের নাম ধরে ডাকুক। একটা ছবি থেকে এটাই আমাদের পাওনা। উপরিপাওনা, ‘কণ্ঠ‘ ২৫ দিন ধরে হাউজফুল যাচ্ছে কলকাতায়। একসঙ্গে ডবল গিফট পেয়ে দারুণ লাগছে।

প্রশ্ন: স্পিচ থেরাপিস্টের চরিত্র পেয়ে কী মনে হয়েছিল?

উত্তর: খুব চ্যালেঞ্জিং মনে হয়েছিল। কারণ, আমি যে ধরনের চরিত্র করে এসেছি এতদিন তার সঙ্গে রুমেলাকে একেবারেই মেলানো যাবে না। নিজে যন্ত্র দিয়ে কথা বলা আর সেটা অন্যকে শেখানোই ছিল আমার চরিত্রের কাজ। যেটা একেবারেই সহজ নয়। তাই শুরুতে মনে হয়েছিল, আমি পারব তো!আর বিষয়টি এতই তথ্যনির্ভর যে একটু এদিক থেকে ওদিক হলেই লোকে ধরবে।

প্রশ্ন: তার মানে চরিত্রের খাতিরে আপনাকে প্রচণ্ড পরিশ্রম করতে হয়েছে?

উত্তর: সব চরিত্রের জন্যই পরিশ্রম করি। তবে পরিশ্রম নয়, রুমেলা হয়ে উঠতে অবশ্যই বাড়তি হোমওয়র্ক করেছি। যেমন, যন্ত্র দিয়ে কথা বলা অভ্যেস করতে স্পিচ থেরাপিস্ট সোমনাথ মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে বেশ কয়েকবার বসতে হয়েছে। ল্যারিঙ্স ক্যান্সারে আক্রান্ত পেশেন্টদের সঙ্গে কথা বলা। তাঁদের লড়াইকে সামনে থেকে দেখা। তাঁদের অভিজ্ঞতা জানা। তাঁদের পরিবারের লোকেদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করা— এই সবটাই আমাকে রুমেলা হয়ে উঠতে সাহায্য করেছে।

প্রশ্ন: ক্যান্সারকে কাছ থেকে দেখে কী মনে হল? ইট হ্যাজ আনসার?

উত্তর: রোগটার নাম শুনলে সত্যিই বুকের ভেতর কাঁপন ধরে। তার থেকেও বড় কথা ভাগ্যের সঙ্গে লড়া অসম্ভব। তবে রোগটাকে এড়াতে জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনা যেতেই পারে। অনিয়মিত জীবন, তামাক সেবনের মতো মারাত্মক নেশাই কিন্তু আমাদের ক্যান্সারের দিকে ঠেলে দেয়। তারপরেও বলব, ঈশ্বর বা প্রকৃতির দেওয়া জীবনীশক্তির ওপরে কিচ্ছু নয়। এই ধ্রুব সত্যটাই দেখিয়েছে কণ্ঠ। সেটা আমিও ছবি করতে গিয়ে খুব কাছ থেকে জানলাম, দেখলাম, অনুভব করলাম।

প্রশ্ন: পরিচালক শিবপ্রসাদ কি খুব কড়া? অভিনয়ে ভুল হলে ধমক দেন?

উত্তর: বকুনি আর শিবুদা! দুটো শব্দকে একসঙ্গে বসানো যাবে না কোনোদিনই। বরং বুঝিয়ে দেন, এটা করলে কেমন হয়! বা এটা করা যায় কি? উনি ধরিয়ে দেন। আমিত্ব ফলান না।

প্রশ্ন: কলকাতার প্রথম সারির তিন পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায়, কৌশিক গাঙ্গুলি আর শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়-নন্দিতা রায়ের সঙ্গে কাজ করলেন। কাকে কত নম্বর দেবেন?

উত্তর: এটা খুব কষ্টের বিষয়। এভাবে বলা যায় না। শিল্পীদের কি নম্বর দিয়ে কি মাপা যায়! তিনজনে জিন জনের জায়গা থেকে সেরা। তাই এঁদের সঙ্গে আরও বেশি করে কাজ করে আমার নিজের জায়গাকে আরও পোক্ত করতে চাই।

প্রশ্ন: কলকাতার মিডিয়া বলে জয়া নাকি একসঙ্গে সৃজিত-কৌশিককে বধ করেছেন। সত্যি?

উত্তর: এটা আমার পরম পাওয়া। যদিও আমি জানি না এটা রটনা না ঘটনা। তবে হলে আমার থেকে খুশি আর কেউ হবে না। আমি আমার হান্ড্রেড পার্সেন্ট দিয়ে কাজ করি। হয়তো তাই ওঁদের পছন্দের তালিকায় আমি আছি। আল্লাতালার কাছে কৃতজ্ঞ যে এই মাপের মানুষেরা আমায় ভালোবাসেন (হাসি)।

প্রশ্ন: বাংলাদেশের দর্শক ‘কণ্ঠ’ দেখেছেন? তাঁদের কী মত?

উত্তর: এখনও বাংলাদেশে ‘কণ্ঠ’ মুক্তি পায়নি। সম্ভবত ইদের পরে ঢাকায় মুক্তি পাবে ছবিটি। কারণ, এই ছবি সবার দেখা উচিত। ক্যান্সারের মতো রোগ নিয়ে এই ছবি কথা বলেছে।

প্রশ্ন: শিবপ্রসাদ-নন্দিতার ছবি ঘরোয়া মানুষের গল্প বলে। কণ্ঠ সেই ঘরানার বাইরে বেরিয়েও কী করে সুপারহিট?

উত্তর: ক্যান্সারকে নিয়ে ছবি, কিন্তু কোথাও হতাশা নেই। বিয়োগান্ত শেষ নয়। বরং লড়াই করে বেঁচে বেরিয়ে আসার অনুপ্রেরণা জোগায় এই ছবি। লড়াই করে ফুরিয়ে যাওয়া নয়, জীবন নতুন করে শুরু করার গল্প বলে। জীবনকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়তে শেখায় এই ছবি। অথচ, কোথাও অতিরঞ্জন নেই। পুরোটাই সত্য ঘটনা অবলম্বনে তৈরি। বাস্তবধর্মী। এই জন্যেই মানুষ বারেবারে ছবিটা দেখছেন।

প্রশ্ন: আগামী দিনে কলকাতা-বাংলাদেশ মিলিয়ে কী কী করছেন?

উত্তর: বাংলাদেশে আমার দ্বিতীয় প্রযোজনার কাজ চলছে। পাইপলাইনে প্রচুর ছবি আছে। শুটিং চলছে। মুক্তির অপেক্ষায় আছে কিছু ছবি। আর কলকাতায় আমি অতনু ঘোষের ‘বিনি সুতো’য় কাজ  করছি।

প্রশ্ন: রমজান চলছে। রোজা রেখেছেন?

উত্তর: কয়েকটা রেখেছি। চারিদিকে দৌড়ে বেড়াতে হচ্ছে তো। তাই সব রোজা রাখা সম্ভব নয়।

প্রশ্ন: ইন্টারভিউয়ের আগেই দেখলাম মা খোঁজ নিচ্ছেন। কবে বয়ফ্রেন্ড বা হাবি ফোন করে খবর নেবেন?

উত্তর: অনেকদিন দেশ ছাড়া। ক-দিন লন্ডনে ছিলাম বিশ্বকাপ দেখতে। কলকাতা ছুঁয়ে এবার দেশে পাড়ি দেব। মা তাই খোঁজ নিচ্ছিলেন। (হেসে ফেলে) মায়ের কাছেই তো বেশ আছি। এক্ষুণি বিয়ে, স্বামী…. থাক না!

উত্তর: চরিত্রটাই তো ধাক্কা দেওয়ার পক্ষে যথেষ্ট। তার ওপর ক্যান্সার পেশেন্টদের কাছ থেকে দেখা, তাঁদের জীবনযুদ্ধকে জানা, যন্ত্রের মাধ্যমে কথা বলতে শেখা—সবকিছুই মনে রাখার মতো। আর একটা কথা না বললেই নয়, নন্দিতাদিকে কাছ থেকে পাওয়া। সবাই বলেন, মেয়েরা নাকি কাজের ক্ষেত্রে অন্যরকম হন। আমি বলব, ব্যতিক্রমও আছেন। নন্দিতাদির মতো। যিনি পরিচালক হিসেবে মারাত্মক নিপুণ।

প্রশ্ন: একই ছবিতে সমান্তরাল ভাবে প্রথম সারির দুই সুন্দরী নায়িকা পাওলি দাম আর জয়া এহসান। সেটে চুলোচুলি, অভিনয় নিয়ে মতান্তর—- হয়েছে?

উত্তর: (হেসে ফেলে) হওয়ার কোনও স্কোপই ছিল না। আমরা দু-জনেই জানতাম আমাদের কতটা কী করতে হবে। আমার কাজ আমার মতো করেই করতে হয়েছে। আবার পাওলি যেহেতু শিবুদার অনস্ক্রিন বউ তো অনেক বেশি ডিটেলিং ছিল ওঁর ক্ষেত্রে। তারপরেও আমার কোনও অসুবিধে হয়নি। আশা করি, পাওলিরই একই মত। বরং ওঁর সঙ্গেই আমার প্রথম শট ছিল। প্যাকআপের পর বা সেটে কাজের ফাঁকে আমরা মজা করতাম। আড্ডা দিতাম। তার থেকেও বড় ব্যাপার, পাওলির মতো উঁচু মাপের অভিনেতার সঙ্গে কাজ করা মানে নিজেকে সমৃদ্ধ করা। নিজের অভিনেতার মানটা বাড়ে।

প্রশ্ন: এক ছবিতে শিবপ্রসাদকে দুই রূপে পেলেন। পরিচালক শিবপ্রসাদ আর অভিনেতা শিবপ্রসাদ। কাকে এগিয়ে রাখবেন?

উত্তর: দুটো ভূমিকাতেই শিবুদা মাস্টার। তবে এই ছবির ক্ষেত্রে অভিনেতা শিবুদা এগিয়ে থাকবেন পরিচালক শিবুদার থেকে। বাকি ছবিগুলোতে পরিচালক শিবুদাই এক এবং অদ্বিতীয়।

প্রশ্ন: কাজ করতে গিয়ে কী শিখলেন শিবুদার থেকে?

উত্তর: শিখলাম, কী করে একজন মানুষের ধ্যান-জ্ঞান শুধুই সিনেমা হতে পারে। অভিনয়ের সময় চারপাশ ভুলে কী করে একজন মানুষ চরিত্রের সঙ্গে একাত্ম হয়ে যান। ধীরে ধীরে তাঁর যাপিত জীবনও কীভাবে বর্ণময় হয়ে ওঠে সেই চরিত্রের রঙে। শিবুদার জীবনের প্রত্যেকটা মুহূর্ত, প্রত্যেকটা চিন্তা শুধুই ছবিকে ঘিরে।

প্রশ্ন: পরিচালক শিবপ্রসাদ কি খুব কড়া? অভিনয়ে ভুল হলে ধমক দেন?

উত্তর: বকুনি আর শিবুদা! দুটো শব্দকে একসঙ্গে বসানো যাবে না কোনোদিনই। বরং বুঝিয়ে দেন, এটা করলে কেমন হয়! বা এটা করা যায় কি? উনি ধরিয়ে দেন। আমিত্ব ফলান না।

প্রশ্ন: কলকাতার প্রথম সারির তিন পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায়, কৌশিক গাঙ্গুলি আর শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়-নন্দিতা রায়ের সঙ্গে কাজ করলেন। কাকে কত নম্বর দেবেন?

উত্তর: এটা খুব কষ্টের বিষয়। এভাবে বলা যায় না। শিল্পীদের কি নম্বর দিয়ে কি মাপা যায়! তিনজনে জিন জনের জায়গা থেকে সেরা। তাই এঁদের সঙ্গে আরও বেশি করে কাজ করে আমার নিজের জায়গাকে আরও পোক্ত করতে চাই।

প্রশ্ন: কলকাতার মিডিয়া বলে জয়া নাকি একসঙ্গে সৃজিত-কৌশিককে বধ করেছেন। সত্যি?

উত্তর: এটা আমার পরম পাওয়া। যদিও আমি জানি না এটা রটনা না ঘটনা। তবে হলে আমার থেকে খুশি আর কেউ হবে না। আমি আমার হান্ড্রেড পার্সেন্ট দিয়ে কাজ করি। হয়তো তাই ওঁদের পছন্দের তালিকায় আমি আছি। আল্লাতালার কাছে কৃতজ্ঞ যে এই মাপের মানুষেরা আমায় ভালোবাসেন (হাসি)।

প্রশ্ন: বাংলাদেশের দর্শক ‘কণ্ঠ’ দেখেছেন? তাঁদের কী মত?

উত্তর: এখনও বাংলাদেশে ‘কণ্ঠ’ মুক্তি পায়নি। সম্ভবত ইদের পরে ঢাকায় মুক্তি পাবে ছবিটি। কারণ, এই ছবি সবার দেখা উচিত। ক্যান্সারের মতো রোগ নিয়ে এই ছবি কথা বলেছে।

প্রশ্ন: শিবপ্রসাদ-নন্দিতার ছবি ঘরোয়া মানুষের গল্প বলে। কণ্ঠ সেই ঘরানার বাইরে বেরিয়েও কী করে সুপারহিট?

উত্তর: ক্যান্সারকে নিয়ে ছবি, কিন্তু কোথাও হতাশা নেই। বিয়োগান্ত শেষ নয়। বরং লড়াই করে বেঁচে বেরিয়ে আসার অনুপ্রেরণা জোগায় এই ছবি। লড়াই করে ফুরিয়ে যাওয়া নয়, জীবন নতুন করে শুরু করার গল্প বলে। জীবনকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়তে শেখায় এই ছবি। অথচ, কোথাও অতিরঞ্জন নেই। পুরোটাই সত্য ঘটনা অবলম্বনে তৈরি। বাস্তবধর্মী। এই জন্যেই মানুষ বারেবারে ছবিটা দেখছেন।

প্রশ্ন: আগামী দিনে কলকাতা-বাংলাদেশ মিলিয়ে কী কী করছেন?

উত্তর: বাংলাদেশে আমার দ্বিতীয় প্রযোজনার কাজ চলছে। পাইপলাইনে প্রচুর ছবি আছে। শুটিং চলছে। মুক্তির অপেক্ষায় আছে কিছু ছবি। আর কলকাতায় আমি অতনু ঘোষের ‘বিনি সুতো’য় কাজ  করছি।

প্রশ্ন: রমজান চলছে। রোজা রেখেছেন?

উত্তর: কয়েকটা রেখেছি। চারিদিকে দৌড়ে বেড়াতে হচ্ছে তো। তাই সব রোজা রাখা সম্ভব নয়।

প্রশ্ন: ইন্টারভিউয়ের আগেই দেখলাম মা খোঁজ নিচ্ছেন। কবে বয়ফ্রেন্ড বা হাবি ফোন করে খবর নেবেন?

উত্তর: অনেকদিন দেশ ছাড়া। ক’দিন লন্ডনে ছিলাম বিশ্বকাপ দেখতে। কলকাতা ছুঁয়ে এবার দেশে পাড়ি দেব। মা তাই খোঁজ নিচ্ছিলেন। (হেসে ফেলে) মায়ের কাছেই তো বেশ আছি। এক্ষুণি বিয়ে, স্বামী…. থাক না!