দর্পণ ডেস্ক : লোকসভা নির্বাচনের ফলে সারা দেশের পাশাপাশি, এই রাজ্যে বড় ধাক্কা খেয়েছে বিরোধীরা। ঘর ঘর মোদি ধ্বনিকে সত্য করে দেখাল ভারতীয় জনতা পার্টি। এক্সিট পোল সত্য হয় না বলে গত রাতে আশা বুকে যারা ঘুমোতে গেছিলেন, এতক্ষণে সত্যটা সকলেই মেনে নিয়েছেন।
পশ্চিমবঙ্গে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) শুরু থেকেই ২৫ টিরও বেশি আসন জেতার দাবি করে। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে মাত্র ২ টি আসন জিতেছিল ভারতীয় জনতা পার্টি। ১৭টি আসন জিতে ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যকে বামশূন্য করে তৃণমূল কংগ্রেসের কপালেও চিন্তার ভাঁজ ফেলে দিল গেরুয়া বাহিনী।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিশ্বাস করেছিলেন যে তিনি নিজের দুর্গ রক্ষা করবেন এবং কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে শক্তিশালী ভূমিকা পালন করবেন। কিন্তু আগামী পাঁচ বছর মোটেও আর এমন হবে না। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্যে বিজেপির এই জয়ধ্বজা ওড়ার কারণ কী?
মমতার বিরুদ্ধে তোষামোদের রাজনীতির অভিযোগ : পশ্চিমবঙ্গে সংখ্যালঘুদের সংখ্যা প্রায় ৩০ শতাংশ। বিজেপি শুরু থেকেই এই বাংলায় মুসলিম তোষণ নিয়ে রাজনীতি শুরু করেছে। বিজেপি সর্বপ্রথম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপর তোষামোদের রাজনীতিতে অভিযোগ করেছে। তাদের অভিযোগ, মমতা শুধু মুসলমানদের জন্যই চিন্তিত, হিন্দুদের জন্য নয়। ইমামকে পেনশন দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু হিন্দু ধর্মের পন্ডিতদের জন্য কিছুই করা হয় না। এর মধ্যে সব অভিযোগ মোটেও সঠিক ছিল না। কিন্তু নির্বাচনী রাজনীতিতে আবহ তৈরি করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যাতে বিজেপি সফল হয়েছে।
বাংলায় পাঁচ বছর পরে মোদি সুনমি! : তৃণমূল কংগ্রেসের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধায় নিজেও ভাবেননি মোদিঝড় নয়, মোদি সুনামি উঠবে এবার। এবং এই তরঙ্গ তাদের দূর্গ সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে ফেলবে। গত লোকসভা নির্বাচনে ২ টি আসন জেতা বিজেপি প্রায় ২০ টি আসনের কাছাকাছি জিতছে। পশ্চিমবঙ্গ শুরু থেকেই বিজেপি এবং নরেন্দ্র মোদির নিশানা ছিল। ৪২ টি লোকসভা আসনের এই রাজ্যে নরেন্দ্র মোদি মোট ১৭ টি জনসভা করেন।
চুপচাপ পদ্মে ছাপ : বামেদের পশ্চিমবঙ্গ থেকে উৎখাত করতে চেয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্লোগান তুলেছিলেন চুপচাপ ফুলে ছাপ। এই স্লোগানকে ভারতীয় জনতা পার্টি আপন করে নিয়েছে। এই বার ফুল ছাপের জায়গায় পদ্মে ছাপ যুক্ত হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে প্রতি নির্বাচনেই হিংসা হয়। ভারতীয় জনতা পার্টি এই বিষয়টিকেও ব্যবহার করে নিজেদের ভোটবাক্স ভরেছে।
মমতা ও তৃণমূলবিরোধী ভোটে বিজেপির ভোটবাক্স ভরা : পঞ্চায়েত নির্বাচনেই লোকসভা নির্বাচনে ভারতীয় জনতা পার্টির বিক্ষোভের ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছিল। এটা পরিষ্কার হয়ে যায় যে, রাজ্যে তৃণমূল কংগ্রেসকে কোনও দল চ্যালেঞ্জ করতে পারলে, সেটি একমাত্র বিজেপি। এর ফলে মমতা বিরোধী ভোটাররা বিজেপির বোতামেই আঙুল রেখেছে। পরিস্থিতি এমনই যে, ২০১১ পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গে শাসক বামেদের ভোটও বিজেপিই পেয়েছে। এখন বিজেপিই রাজ্যে প্রধান বিরোধী দল।
রাজনীতিতে রামায়ণ ও জয় শ্রী রাম : পশ্চিমবঙ্গের দুর্গাপুজো নিয়ে যারা গর্ব করতেন, গত কয়েক বছরে তাঁদের ভাবাচ্ছে রামনবমীর ধুম আর ডিজে বাদ্যিই বুক কাঁপানো ‘জয় শ্রী রাম’। বিজেপির কৌশল পরিষ্কার ছিল, তাঁরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে হিন্দুবিরোধী প্রমাণ করে এবং মুসলিম তোষণের ইস্যু সামনে রেখে বিজেপি হিন্দুদের সপক্ষে কথা বলার নির্ভরযোগ্য ঠিকানা হয়ে ওঠে। ফলাফল বলছে যে, অমিত শাহের নেতৃত্বাধীন দল এভাবেই সফল হয়েছে রাজ্যে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই বিজেপিকে সাহায্য করে ফেলেছেন।
সাত দফার নির্বাচন : নির্বাচন কমিশন পশ্চিমবঙ্গকে সংবেদনশীল ‘দাগিয়ে’ দিয়ে সাতটি দফায় ভোট করানোর সিদ্ধান্ত নেয়। এই সিদ্ধান্ত ভারতীয় জনতা পার্টির পক্ষেই যায়। কারণ এই রাজ্যে তৃণমূল কংগ্রেসের তুলনায় বিজেপির কর্মকর্তা কম। ধাপে-ধাপে নির্বাচন শেষ হতেই বিজেপি বাকি আসনে মনোনিবেশ করতে সক্ষম হয়েছে।