দর্পণ ডেস্ক : বরিশাল সিটি করপোরেশনের (বিসিসি) আওতায় প্রায় ৭ লাখ মানুষের বসবাস। প্রতিদিন এ বিপুলসংখ্যক মানুষের সুপেয় পানির চাহিদা সাড়ে পাঁচ কোটি লিটার। এর বিপরীতে বিসিসি কর্তৃপক্ষ সরবরাহ করতে পারছে মাত্র ২ কোটি ৯০ লাখ লিটার। ফলে চলমান তীব্র দাবদাহের মধ্যে নগরজুড়ে দেখা দিয়েছে পানির তীব্র সংকট।

বিসিসি সূত্রে জানা গেছে, নগরবাসীর পানির চাহিদা মেটাতে তাদের ৩৬টি পাম্প হাউজ রয়েছে। এর মধ্যে চারটি পাম্প বর্তমানে অচল। বাকি ৩২টি পাম্প ও বিসিসির ১ হাজার ৩২০টি নলকূপ দিয়ে দৈনিক ২ কোটি ৯০ লাখ লিটার সুপেয় পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। কিন্তু চাহিদা ৫ কোটি ৫০ লাখ লিটার হওয়ায় প্রতিদিন পানির ঘাটতি থেকে যাচ্ছে ২ কোটি ৬০ লাখ লিটার।
সূত্র আরো জানায়, বর্তমানে বিসিসির নিবন্ধিত পানির গ্রাহক আছে ২২ হাজার। বাকিরা ব্যক্তিগত টিউবওয়েলসহ বিভিন্ন উৎস থেকে পানির চাহিদা মিটিয়ে থাকে। সরবরাহ সক্ষমতায় ঘাটতি থাকায় সিটি করপোরেশন নতুন করে গ্রাহক নিচ্ছে না।
এদিকে বিসিসির সরবরাহ ঘাটতির মধ্যে ব্যক্তিগতভাবে বসানো অনেক নলকূপেই পর্যাপ্ত পানি উঠছে না। অন্যদিকে বস্তি, কলোনি ও বর্ধিত এলাকায় এ সংকট আরো তীব্র হচ্ছে। বিশেষ করে প্রতিদিন সুপেয় পানির জন্য হাহাকার করছে পলাশপুর, কেডিসি, রসুলপুর ও স্টেডিয়াম বস্তির লক্ষাধিক মানুষ। পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে নগরীর কালুশাহ সড়কের রিফিউজি কলোনির পাশাপাশি জিয়ানগর, কাশীপুর, রূপাতলী, সাগরদী, বটতলাসহ সিটি করপোরেশনের বর্ধিত এলাকাগুলোয়।
নগরীর সদর রোডের জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, তাদের বেলভিউ গলিতে অনেক আগে সিটি করপোরেশন একটি নলকূপ স্থাপন করেছিল। কিন্তু কয়েক বছর ধরে এটি দিয়ে পর্যাপ্ত পানি মিলছে না। প্রতিদিন ভোরে অল্প সময়ের জন্য পানি উঠলেও অন্য সময় পানির জন্য হাহাকার করতে হয়।
নগরীর ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের জিয়ানগর এলাকার বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম বলেন, সিটি করপোরেশনের পানির লাইনে আগে দিনে একবার কিছু সময়ের জন্য আসত। এখন রমজানে বিকালে কিছু সময়ের জন্য পানি দেয়া হয়। কিন্তু এ পানি দিয়ে গোসল, রান্না, কাপড় ধোয়াসহ অন্য কাজ করা যায় না।
নগরীর বান্দ রোডের বেশ কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, তাদের বাড়িতে সিটি করপোরেশনের সরবরাহ লাইন থাকলেও পানি আসছে না। অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার মিলছে না। পানি উঠছে না ব্যক্তিগত নলকূপেও। এদিকে ব্যক্তিগতভাবে নলকূপ বসানোর জন্য বরিশাল নগর ভবনে শত শত আবেদন পড়েছে। কিন্তু সিটি করপোরেশনের ফিসহ একটি নলকূপ স্থাপনে খরচ হচ্ছে ১ লাখ টাকার মতো। ফলে বেশি খরচের কারণে অনেকেই আর নলকূপ বসাতে চাইছেন না। নগরীর আলেকান্দার বাসিন্দা রোকেয়া বেগম বলেন, আগে দেড় ইঞ্চি ব্যাসের একটি নলকূপ স্থাপনের অনুমতির জন্য সিটি করপোরেশনকে দিতে হতো ৩০ হাজার টাকা। এখন এ অনুমতির জন্য সর্বনিম্ন ২৩ হাজার টাকা দিতে হচ্ছে। তার ওপর রয়েছে নলকূপ বসানোর খরচ। একটি নলকূপ বসাতে ৬৫-৭০ হাজার টাকা খরচ হয়। অনেক মানুষেরই এত টাকা দিয়ে নলকূপ বসানোর সক্ষমতা নেই।
এদিকে পানির সংকট মোকাবেলায় সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে গাড়িতে করে বিভিন্ন এলাকায় বিশেষ করে বস্তিতে পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। একই সঙ্গে এ সংকটের জন্য নগরবাসীর কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছেন বিসিসি মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ। তিনি বলেন, বরিশালে সুপেয় পানির এ সংকট হঠাৎই সৃষ্টি হয়নি। তবে নিরসনে নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে বরিশাল সিটি করপোরেশনের পানি শাখার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হুমায়ুন কবির বলেন, বিকল চারটি পাম্প সচল করে পানি সরবরাহ বৃদ্ধির চেষ্টা চলছে।