গোফরান পলাশ, পটুয়াখালী: পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় মা দিবসে সকল ছেলে-মেয়েরা
যখন মায়ের সাথে হাসি, আনন্দে সময় কাটাচ্ছে তখন পিতৃহীন দুইবোন স্বর্না ও
সমাপ্তি হাসপাতালের গ্রিল ধরে লুকিয়ে চাখের জল ফেলছে। আপন কাকা সমির
হাওলাদারের নির্মম নির্যাতন ও মারধরে ব্যথার যন্ত্রনায় মা যখন ছটফট করে
তখন মায়ের মাথার পাশে বসে শান্তনা দিচ্ছে ১০ম শ্রেনীর শিক্ষার্থী
স্বর্না। মা ও বোনের এ কষ্ট কাছ থেকে দেখছে ছোট বোন পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী
সমাপ্তি।

রোববার দুপুরে নির্যাতিতা মা বাসন্তী রানী জানান, উপজেলার নীলগঞ্জ
ইউনিয়নের নিজকাটা গ্রামের এ গৃহবধু স্কুলের গন্ডি পার হতেই তাকে বসতে হয়
বিয়ের পিঁড়িতে। বয়স মাত্র ২৮ হলেও স্বামীকে হারিয়েছে একযুগ আগে। তখন ছোট
মেয়ে তার দুই মাসের গর্ভে। নিজের ভবিষত চিন্তা না করে কখনও রাস্তার মাটি
কেটে, হোগলা বুনে দুই মেয়েকে লেখাপড়া করাচ্ছেন। দুই মেয়ের উজ্জ¦ল
ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখে বিসর্জন দিয়েছেন নিজের ভবিষ্যত। বড় মেয়ে স্বর্ণা
এখন পাখিমারা প্রফুল্ল ভৌমিক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে দমশ শ্রেণিতে ও ছোট মেয়ে
সমাপ্তি নিজকাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ছে।

বাসন্তী রানী জানান, তাদের আতংক এখন দেবর সমির হাওলাদার। স্বামীর রেখে
যাওয়া ভিটা দখল নিতে একের পর এক চক্রান্তের পর এবার তাদের ঘর থেকে বের
করে তালা ঝুলিয়ে উঠানে ফেলে মধ্যযুগীয় নির্যাতন করেছে তাদের উপর। রডের
আঘাতে মাথায় প্রায় তিন ইঞ্চি ফাঁটা জখম হয় তার। মাথা থেকে প্রচন্ড বেগে
রক্ত বের হলেও তার নির্যাতন থেমে থাকেনি। দুই মেয়ে মায়ের উপর নির্যাতন
করতে দেখে কাকাকে বাঁধা দিলেও তাঁদেরও মারধর করে। গত ৮ মে বিকালে এ
নির্মম নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় প্রতিবেশীরা এগিয়ে এলে প্রতিবেশী
নারীদের উপরও হামলা চালায় সমির।
এ হামলার খবর দ্রুত এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে গ্রামবাসী একজোট হয়ে এগিয়ে আসলে
সমির পালিয়ে যায়। ওই রাতেই মা, দুই মেয়ে ও এক প্রতিবেশীকে কলাপাড়া
হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনায় ৯ মে কলাপাড়া উপজেলা সিনিয়র জুডিশিয়াল
ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে দেবর সমির ও পুতুল রানীর নামে মামলা দায়ের করেন
বাসন্তী রানী। আদালত কলাপাড়া থানার ওসিকে মামলাটি এজাহার হিসেবে নেয়ার
নির্দেশ দেন।

মায়ের উপর নির্মম নির্যাতনের দৃশ্য এখনও ভুলতে পারেনি দশম শ্রেণির ছাত্রী
স্বর্ণা। মায়ের মাথা থেকে যখন দরদর করে রক্ত বের হচ্ছিল তখনও তাকে কিল
ঘুষি ও লাঠি দিয়ে মেরে যাচ্ছে কাকা। সে দৌড়ে গায়ের ওড়না দিয়ে মায়ের মাথার
ক্ষতস্থান বাঁধতে গেলে তাকেও মারধর করে কাকা সমির।

স্বর্ণা জানায়, আজ সব বন্ধুরা মাকে নিয়ে ঘুরতে বের হবে, ঘরে কতো ভালো
মন্দ রান্না হবে। কিন্তু আমার মাতো যন্ত্রনায় ছটফট করছে। বাবার মুখটা মনে
নেই আমার। ছোট বোনতো বাবাকেই দেখেনি। মায়ের ঘামে ভেঁজা কষ্টের শ্রমে তারা
দু’মুঠো ভাত খেয়ে লেখাপড়া করছে। কিন্তু আজ যদি মায়ের কিছু হয়ে যায় তখন কে
দেখবে তাঁদের?